ক্যালেন্ডারের হিসেব বলছে, সাল ১৯৪৫, ৬ আগস্ট, সকাল ৮.১৫! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ প্রায় অবসানের পথে। কিন্তু, যুদ্ধ থামার লগ্ন হলেও, হিংসা যে অবিরাম প্রক্রিয়া! মার্কিন বোমারু বিমান নিমেষে, কোনও সতর্কতা ছাড়াই ধুলিস্যাৎ করে দিলো জাপানের হিরোশিমা শহরকে। প্রায় ৫০০ মিটার ওপর থেকে বিস্ফোরণ ঘটায় ‘লিটল বয়’ পরমাণু বোমা। প্রাণ হারান প্রায় ৭৫ হাজারের বেশি মানুষ! বিশ্ব জুড়ে ওঠে নিন্দার ঝড়! কিন্তু মার্কিন ঔদ্ধত্য সমগ্র বিশ্বের সমালোচনাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে, তিন দিনের মধ্যে ফের হত্যালীলায় মগ্ন হয়। জাপানের আর একটি শহর, নাগাসাকিতে, ৯ আগস্ট ফের ‘ফ্যাট ম্যান’ নামের একটি পরমাণু বোমা বর্ষণ করেন। এই বোমাটি নিক্ষেপ করা হয় সকাল ১১.০২ নাগাদ। হাজার হাজার প্রাণের মৃত্যু ঘটে। ১৯৫০ সালের মধ্যে, সেই বিস্ফোরণের রেশে, সামগ্রিক মৃত্যুসংখ্যা দাঁড়ায় ৩লক্ষ মত।
বলা বাহুল্য, সেই বিস্ফোরণের রেশ বর্তমানেও স্থায়ী। এখনও সেখানকার নাগরিকদের জীবন যাপন হয়ে আছে অভিশপ্ত। বিস্ফোরকের তেজস্ক্রিয়তার তীব্রতা এত প্রকট ছিল যে, বর্তমানেও কোনও শিশু সেই শহরে জন্ম নিলে বিকলাঙ্গ হয়। এই কলঙ্ক, সমগ্র পৃথিবীর! জাপানের এই শহর দুটির, অভিশাপ মুক্ত হওয়া যেন বড় দায়। ‘শিশুর বাসযোগ্য’ হয়ে ওঠার পক্ষে অন্তরায়, এই শহরদ্বয়ের রক্তাক্ত, কলঙ্কিত ইতিহাস। প্রসঙ্গত, আমেরিকা এখনও ক্ষমা চায়নি এই শহরের মানুষগুলির কাছে। তাঁদের পাপের প্রায়শ্চিত্য এক্ষেত্রে সম্ভব নয়ও, কিন্তু এতদিন পেরিয়ে গিয়েও নির্লিপ্ত থাকা তাঁদের জাতিকে কোথাও গিয়ে সম্মান করবার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
আজ ৯ আগস্ট, নাগাসাকি দিবস। বিধাতার কাছে প্রার্থনা, যে প্রাণগুলি অকালে ঝরে গেছে, তাঁরা যেন আবার ফিরে আসেন, এক সুস্থ, নিরাপদ, সহিষ্ণু পৃথিবীতে।