‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর…’! এই জয়ধ্বনির গভীরতা ৩৬ বছরের হাজার হাজার পাহাড় প্রমাণ অপমান, অসম্মান, লাঞ্ছনা, গঞ্জনার বিষাদ সিন্ধুকে দূরীকরণের মাধ্যমে যেন সাধিত হয়েছে। সেই বিষাদ সিন্ধু আজ পরিণতি লাভ করে হয়েছে, ‘সব পেয়েছির দেশে’র সেই ডুব সাগর, যেখানে ডুব দিলে সম্পূর্ন নতুন করে, নতুন রূপে নিজেকে ভিন্ন ভাবে আবিষ্কার করা যায়। ৩৬ বছর ধরে আর্জেন্টাইন নীল সাদা আকাশে যে বিষাদ মেঘ ঘনীভূত হয়েছিল, আজ সেখানে আশীর্বাদের রামধনু ওঠে নতুন ভোরের বার্তা নিয়ে।
গত ১৮ ডিসেম্বর, ২০২২! কোনও গতানুগতিক ফুটবল খেলা নয়, এ ছিল জীবন মরণ লড়াই! ৯০ মিনিটের নির্ধারিত সময়কে ছাপিয়ে, আর্জেন্টিনা বনাম ফ্রান্সের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই তখন সময়ের হিসেব ভুলে খনন করেছে চলেছে নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে তার দৈর্ঘ্য। সারা বিশ্ব মুখিয়ে আছে, অভিশাপ মোচনের ইতিহাসের অপেক্ষায়। ফুটবল স্ট্যাটেজির থেকে তখন কোটি কোটি মানুষের আবেগ হয়ে উঠেছে শক্তিশালী। বাংলার নৈহাটির বড় মা থেকে কেদারের শিব লিঙ্গ, কেউ বাদ যাননি সেদিন প্রসাদ পেতে। জীবনের মত অনিশ্চিত হয়ে উঠছে এই খেলার পরিণতি। যখন তখন উল্টে যাচ্ছে পাশা। এগিয়ে থেকেও সেই উচ্ছ্বাস স্থায়ী হচ্ছে না ওই কয়েক বিঘার সবুজ জমিতে। নিমেষে তাকে ক্ষান্ত করে দিচ্ছে বিপক্ষ।
ঘড়ির কাঁটা এগারোটা পেরিয়েছে। শুধু গ্যালারি নয়, সারা বিশ্ব জুড়ে তৈরি হচ্ছে ‘do or die’ এর জমাট বাঁধা শিহরণ। ফুটবলের ‘ব্ল্যাক পার্ল’ পেলে পর্যন্ত তাঁর শেষ অবস্থায় উচ্চারণ করে গেছেন, আর্জেন্টাইন সেই ৩৫ বছরের দুরন্ত দামাল রক্তের নাম। সকল দেশবাসীর মত তিনিও মুখিয়ে আছেন, বছর পঁয়ত্রিশের লিওনেল মেসি নামের সেই জাদুকরের পায়ের জাদুতেই যেন, তাঁর হাতে কাপ ওঠে…
ঘড়ির কাঁটা যখন সাড়ে এগারোটা ছুঁই ছুঁই, কাপ উঠল… কাপ পেলো ‘দ্য লিটিল বয় অফ রোজারিও’। ছোটবেলা থেকে শারীরিক প্রতিকূলতাকে ড্রিবলিং করে পেরিয়ে, আজ সকল অপমানের বিরুদ্ধে অপ্রতিরোধ্য লড়াইয়ে সেই জয়ী হল। তাঁর কারণেই আর্জেন্টিনার ‘দিন এসেছে, রাংতা মোড়া…’
সম্প্রতি আয়োজিত হল ‘ফিফা বেস্ট এওয়ার্ড ২০২২’ সেরিমনি। আনুষ্ঠানিক ভাবে সেরার শিরোপা হাতে উঠল আর্জেন্টাইন গোল রক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ এবং আর্জেন্টাইন প্রশিক্ষক লিওনেল স্কালোনির হাতে। সেরা সমর্থক হিসেবে স্থান পেলেন আর্জেন্টাইন সমর্থকেরা।
প্রথম ছজন সেরা ফুলবলার হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন বছর চব্বিশের ফ্রান্সের আগামী রত্ন, কিলিয়ান এমব্যপে। আর ফুটবলের রাজপুত্র, রোজারিওর সেই ছোট্ট লিও? তিনি তো সেরা! আনুষ্ঠানিক ভাবে আবারও সেরার মুকুট পরলেন তিনি। ৭৭ টি ব্যাক্তিগত ট্রফির অধিকারী হলেন লিওনেল মেসি। কিছুদিন আগে ক্লাব ফুটবল লিগে করলেন সাতশো নম্বর গোল। তিনি অদম্য, তিনি দুর্নিবার! আজ তাঁর দেশ, শুধুই আর্জেন্টিনা নয়, আজ তাঁর দেশ তাঁর কারণেই, ‘সব পেয়েছির দেশ’..।