পৃথিবীতে রোজ কত কী ঘটে চলে! আমরা টেরও পাই না। চোখের সামনে যা ঘটতে দেখি, তাই সত্য বলে গণ্য করে থাকি। তার ভিত্তিতেই হিসেব করি বাদবাকির। কিন্তু তার বাইরেও যে এক অজানার চাদর বিছানো আছে সারা ভূখণ্ড জুড়ে, সে ভাবনার ধার ধারি না। ঠিক এমনই এক আমাদের ভাবনাতীত দৃশ্যের আনাগোনা চলছে সামাজিক মাধ্যম জুড়ে। কী সেই দৃশ্য? এক অদ্ভুত, অন্য, দৃঢ় বন্ধনের বন্ধুত্বের দৃশ্য! কোনও সমগোত্রীয় বা সমস্থানীয় প্রজাতির নয়, একেবারে খাদ্য এবং খাদকের মধ্যকার বন্ধুত্বের দৃশ্য।
ঠিক কী ঘটেছে? একটু বিশদেই বলা যাক ঘটনাটি। বেশ কিছুদিন ধরেই একটি পোস্ট আগুনের মত তীব্র গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে জন মাধ্যমে। পোস্টটিতে দেখা যাচ্ছে, একটি চিতা বাঘ এবং একটি গরুর সখ্য যাপন! রীতিমত তা বিস্ময়ের! চিতার মত মাংসাশী প্রাণীর সঙ্গে কী না তারই খাদ্য গরুর এ হেন আত্মিক সম্পর্ক? পোস্টটিতে বিবরণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে, ঘটনাটি আসামের। প্রায় বছর কুড়ি আগের ঘটনা! কুড়ি দিন বয়সী এক চিতা শাবকের মা’কে হত্যা করা হয়। সেই থেকে সেই চিতাটি পাশের গ্রামের এক গরুর দুধ খেয়েই বড় হয়েছে। প্রতি রাতে সে জঙ্গল থেকে এসে তার ‘পালিতা’ মায়ের সঙ্গে দেখা করে যায়।
কিন্তু অপর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ঘটনাটি ২০২০ সালের। এমনকী অসমও নয়, গুজরাটের ভাদদারা জেলার অধিবাসীরা সাক্ষী হয়েছিলেন এমন ‘বিরল’ ঘটনার। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তা হল, একবার কিছু চিতা বাঘ জঙ্গল থেকে গ্রামে প্রবেশ করে ফেলে। বনকর্মীরা এসে তাদের জঙ্গলে পাঠালেও একটি শাবক সেখানেই থেকে যায়। তাকেও জঙ্গলে পাঠানো হলে সে প্রায়ই রাতে আসত সেই গ্রামে। সেখানেই তার সঙ্গে ‘বন্ধুত্ব’ হয় গৃহপালিত গরুটির। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রাতে এসে রীতিমত দুজনে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে একে অপরের সঙ্গে আত্মিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
ঘটনাটি সত্যিই কোথাকার, বা কী ঘটেছিল, সেই নিয়ে যতই মতবিরোধ থাক, সবকিছুর ঊর্ধ্বে একটিই সিদ্ধান্ত স্পষ্ট। ‘বন্ধুত্ব’, স্থান কাল পাত্র ভেদে যার স্রোত প্রবাহিত হয় না। যা অটুট, যা অমলিন, যা চিরন্তন।