আজ, ২৫ ডিসেম্বর! আজ এক আনন্দ আয়োজন। বেথেলহেমের সেই আস্তাবলে, মেরী মায়ের কোলে নেমে এসেছিলেন প্রভু যীশু। পৃথিবীর বুকে জ্বলে উঠেছিল কোটি কোটি নক্ষত্র। ঈশ্বরের জন্মলগ্নে, এমন হওয়াই স্বাভাবিক। এক শুভ ইঙ্গিতের টানে, ভরে উঠেছিল পরিবেশ। বিশ্বাস ছিল, এই দেবদূত একদিন পৃথিবীকে আঁধার মুক্ত করে, আলোর পথে চালনা করবেন।
প্রভু যীশুর জন্মদিনই পালিত হয় বড়দিন হিসেবে। এই দিন, শুধু খ্রিস্টান নয়, যেকোনও জাতি নির্বিশেষে, ভালো থাকার এবং আনন্দের আলোকাধারায় মিশে যাওয়ার উৎসব। তাই তো এই ভালোতে যুক্ত হয়েছেন ‘স্যান্টাক্লজ’ ও। যাঁর নাম শুনলেই ছোট থেকে বড় সকলের মনে দোলা দিয়ে ওঠে রং বেরংয়ের সুখ রাজ্যের ফুলেরা। কিন্তু তবুও প্রশ্ন জাগে, কে এই স্যান্টাক্লজ? কিই বা তাঁর অস্তিত্ব? সত্যিই কি কেউ ছিলেন এই নামে? এই প্রশ্নই আমাদের মনে প্রায়ই ঘুরে বেড়ায়।
চলুন, আর দেরি না করে বরং জানা যাক, এই রহস্য বৃদ্ধের উৎস!
চতুর্থ শতকে এশিয়া মাইনরে, যেটি বর্তমানে তুর্কি নামে পরিচিত, সেখানে বাস করতেন একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাঁর একমাত্র সন্তান ছিলেন সেন্ট নিকোলাস। সেন্ট নিকোলাস পরবর্তী সময় ধর্মযাজক হয়ে ওঠেন। বলা বাহুল্য তিনি ছিলেন সেখানকার এক এবং অদ্বিতীয় দয়ালু ব্যক্তি। দুর্ভাগ্যবশত সেই সময়ই, কালের নিয়মে, একদিন মৃত্যু হয় সেন্ট নিকলাসের পিতার। পূর্বেই মাতৃ হারা নিকোলাস, বাবার মৃত্যুতে মানসিকভাবে একা হলেও, সম্পত্তির আধিক্যের দিক দিয়ে তাঁর কোন অভাব হয়নি। শুধু ধনসম্পদের দিক দিয়েই নয়, নিকোলাস মনের দিক দিয়েও ছিলেন একজন ধনী হৃদয়ের ব্যাক্তি। তাই তিনি প্রাথমিকভাবে এত সম্পত্তি দিয়ে কি করা যায় ভাবলেও, পরবর্তীতে মনস্থির করেন যে তাঁর এত অর্থের বহুলতা তিনি কাজে লাগাবেন কোনো সৎ উদ্যোগে। যেমন ভাবা তেমন কাজ। তিনি চাইলেন, তাঁর চারপাশে যত অভাবগ্রস্থ, অসহায় পরিবার রয়েছেন, তাঁদেরকে তিনি অর্থ সাহায্য করবেন। কিন্তু এই সাহায্য হবে অতি গোপনে। এমন সময় তিনি পেয়ে গেলেন একবারে এক সুবর্ণ সুযোগ। তাঁরই এলাকার এক গরীব বৃদ্ধ পিতার তিন কন্যা সন্তান ছিল। দারিদ্রতার জন্য অর্থাভাবে তিনি তাঁর কন্যাদের বিবাহ দিতে পারছিলেন না। এ কথা সেন্ট নিকলেসের কানে গিয়ে পৌঁছয়। তিনি তৎক্ষণাৎ, এক রাত্রে এক ঝুলি স্বর্ণ মুদ্রা নিয়ে সেই অসহায় পরিবারটির বাড়ির চিমনির ভেতর দিয়ে প্রবেশ করিয়ে দেন। সকালে উঠে বৃদ্ধ এবং তার পরিবার সেই স্বর্ণভর্তি ব্যাগ উদ্ধার করেন তারা স্বভাবতই মহা আনন্দিত তো হনই, সঙ্গে উৎসুক হয়ে ওঠেন তাদের সাহায্যকারী সেই সহৃদয় ব্যক্তির খোঁজে। কিন্তু নিকোলাস কিছুতেই তার পরিচয় জ্ঞাপন করেন না, বরং গোপনে ই তিনি তার কার্যসিদ্ধি করতে থাকেন।
প্রথম যাকে স্বর্ণ মুদ্রা দিয়ে সাহায্য করেছিলেন নিকোলাস সেই গরিব পরিবারটিতে ই আবার দ্বিতীয় কন্যার বিবাহর সময় প্রস্তুত হল। যথারীতি সেই দরিদ্র বাবা আবার অপেক্ষা করতে লাগলেন স্বর্ণমুদ্রার জন্য। এবং এবারে তিনি তৈরি ছিলেন তাদের সাহায্যকারী সে সহৃদয় ব্যক্তিটিকে হাতেনাতে ধরবার জন্য। ফলে নিকোলাস ধরা পড়লেন। তাঁর পরিচয় নিয়ে বিশ্ব অবগত হল, বলা বাহুল্য, এই ঘটনাই তাঁর জীবনের কাল হয়ে এল। তাঁকে তাঁর দেশ থেকে বহিষ্কৃত করা হল, এবং তিনি তুরস্কের সম্রাট দ্বারা বন্দী হলেন। আনুমানিক ৩৪৫ বা ৩৫২ সাল নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়। সমাপ্তি হল এক নানা রঙের দিনের উপাখ্যান।
ডাচ ভাষায় সেন্ট নিকোলাসকে সিন্টার ক্লজ নামেই ডাকা হত। সেই থেকে স্যান্টা ক্লজ।
স্যান্টাক্লজকে আমরা যে পোশাক পরিহিত অবস্থায় দেখি, আসলে ১৮২২ সালে, এক কবি ক্লিমেন্ট মুর তাঁর কবিতায় এমন করেই প্রতিষ্ঠিত করেন আমাদের প্রিয় স্যান্টাকে।
বড়দিনের মত এক বিশেষ দিনে, সেন্ট নিকোলাসের মত এক ব্যক্তিত্বকে সম্মান জানাতে, স্যান্টাক্লজের আবির্ভাব ঘটেছে। ভাবতে অবাক লাগে, যে কাল্পনিক চরিত্রের নাম শুনে বাচ্চারা খুশিতে ভরে ওঠে, তাঁর বাস্তব অস্তিত্বের জীবনীই ছিল কত মর্মান্তিক। আসলে স্যান্টা কেবল সেন্ট নিকোলাসই ছিলেন না, আমাদের চারপাশের যে সকল মানুষ প্রতিনিয়ত আমাদের সকল আবদার পূরণ করে থাকেন, তাঁর সকলে জীবন্ত স্যান্টা। ভালো থাকুন সে সব সকল স্যান্টা, প্রত্যেকদিন হোক আমাদের বড়দিন।