গাছকে কখনো গান শুনিয়েছেন? জানেন গাছকে গান শোনালে কী হতে পারে?


আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু (Acharya Jagadish Chandra Bose) প্রমাণ করেছেন যে গাছের প্রাণ আছে। গাছের ক্ষিদে পেলে খায়, ঘুম পেলে ঘুমায়, আনন্দে মেতে ওঠে, দুঃখে দুঃখপ্রকাশও করে। এগুলো এখন পুরোনো তথ্য যদিও। কিন্তু আপনি কি জানেন যে গাছ গানও শোনে? পছন্দের গান বা সুর আছে গাছের তা কি জানেন? কি হলো? ভাবছেন মজা করছি? আজ্ঞে না; এটাই সত্যি!
ভারতীয় বিজ্ঞানী টিএনসিং (T.N.Singh) প্রমাণ করেছেন যে গাছেরা গান শুনতে পছন্দ করে। গান শুনলে গাছের দ্রুত বৃদ্ধি হয়, গাছের আয়ু বাড়ে, ফলনের বৃদ্ধি ঘটে। উনি নিজে ‘হাইড্রিলা’ (Hydrila) উদ্ভিদের ওপরে গান শোনার এই পরীক্ষা পুরো এক সপ্তাহ ধরে ঘটান এবং ফলাফল দেখে অবাক হয়ে যান। তিনি এই পরীক্ষাটি দু’দল উদ্ভিদ নিয়ে করেন অর্থাৎ একদলকে গান শোনান ও অপরদলটিকে গান শোনান নি। ফলস্বরূপ তিনি লক্ষ্য করেন যে, যে দলের গাছগুলি গান শুনছে তারা দ্রুত বেড়ে চলেছে ও অপরদলের যে গাছেরা গান শোনেনি তারা স্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধিলাভ করছে।
শুধু ভারতীয় বিজ্ঞানী টিএনসিং-(T.N.Singh) ই নন বরং পরবর্তীকালে জার্মানি, ফ্রান্স, আমেরিকা, কানাডা ইত্যাদি দেশের বিজ্ঞানীরাও এই তথ্যটি প্রমাণ করেছেন। আমেরিকার বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে নির্দিষ্ট যন্ত্রসঙ্গীত আখ, চিনাবাদাম ও তামাকের ফলন ঘটিয়েছে।


এও জানা গেছে যে গাছের বাঁশি ও বেহালা থেকে নির্গত সুরেলা সঙ্গীত খুবই প্রিয়। আবার, গাছ কিন্তু বেশিক্ষন একটানা সঙ্গীত শুনতে পছন্দ করেনা। ঠিক যেমন আমরা, মানুষেরা করিনা। একটানা অনেকক্ষণ সঙ্গীত চালিয়ে দেখা গেছে যে গাছ শুকিয়ে গেছে আবার কখনো কখনো মরেও গেছে। এটি প্রমাণ করেছেন মার্কিন উদ্ভিদ বিজ্ঞানী মিসেস ডরোথি রেটাল্যাক (Mrs. Dorothy Retallack

)। তিনি এও প্রমাণ করেছেন যে, বেশি কোলাহল বা বেসুরো সঙ্গীত গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত করে। আবার রক ও পপ জাতীয় সঙ্গীত গাছকে এলোমেলোভাবে বাড়িয়ে তোলে।
এবার প্রশ্ন হলো যে, গাছ কীভাবে গান শোনে? গাছের তো কোনো শ্রবনেন্দ্রীয় নেই! এই বিষয়টিও বিজ্ঞানী ডা. মিলস্টাইন (Dr. Milstein) প্রমাণ করে বলেছেন যে, সঙ্গীতের সুমধুর ধ্বনি গাছের পত্ররন্ধ্রের ছিদ্রগুলিকে বড় করে তোলে এবং ওই ছিদ্র দিয়ে বেশি পরিমাণে সূর্যালোক ও বায়ু প্রবেশ করে যার কারণে গাছের বৃদ্ধি ঘটে দ্রুত।
ডা.উহন রারগার গাছের গান শোনার বিষয়টি ব্যাখ্যা দিয়েছেন অন্যভাবে। তিনি বলেছেন যে, এই ধ্বনি গাছের কোষের পাতলা কোষের মাধ্যমে ঝিল্লি দিয়ে পাতায় জলের অনুপ্রবেশ বাড়িয়ে দেন। এর ফলে ফসফরাসও বেশি পরিমাণে গ্রহণ করতে পারে গাছ আর তাই গাছের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে।
তবে মনে রাখতে হবে যে, মানুষের যেমন বেসুরো বা উৎশৃঙ্খল সঙ্গীত পছন্দ হয়না ঠিক তেমনি উদ্ভিদেরও এরকম ধরণের সঙ্গীত অপছন্দের। তাই সুরেলা সঙ্গীত বা সুর শোনানোটাই ভালো!

Scroll to Top