বার্ধক্যও যেখানে বাধা হবে না, এমন কিছু পর্যটনের টুকিটাকি রইল আপনাদের জন্য

বার্ধক্য, যত না শরীরে, তার চেয়ে মানসিক ভাবে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় আগামীর পথচলার। কিন্তু জীবন উপভোগের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই, আর বয়স তো সেই পূর্ণচ্ছেদ কখনো হতে পারে না। ‘আনন্দ’ (Anand) সিনেমায় মধ্য তিরিশের ক্যান্সার আক্রান্ত আনন্দ, ওরফে রাজেশ খান্না (Rajesh Khanna) তো অকপটে বলে দেন জীবন নিয়ে সেই মহৎ কথাটি! জীবন লম্বা নয়, বরং বড় হতে হয়। তাই বার্ধক্য এলেই তা কখনোই শেষ নয়, বরং তখনও জীবনের আনন্দ আস্বাদন করে যাওয়ার জন্য উদ্যমী হতে হয়।
ভারতীয় প্রবীণ নাগরিকদের আজ এমন কিছু জায়গা সম্পর্কে জানানো হবে, যেখানে তাঁদের দৈহিক কোনো সমস্যা হবেনা, এবং বাড়ির কনিষ্ঠ সদস্যরাও যথাযথ উপভোগ করতে পারবেন।
যখন প্রবীণ নাগরিকদের পর্যটনের কথা আসে, তখন বিভিন্ন দিক নিয়ে মাথায় রাখতে হয় যাতে তাঁর কোনো সমস্যা না সৃষ্টি হয়। যেমন নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা, আরামদায়ক বাসস্থান, বিশ্রামের জন্য পর্যাপ্ত সময়, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল জরুরি পরিস্থিতিতে চিকিৎসার ব্যবস্থা।

১) পুরী, ওড়িশা- প্রবীণ নাগীরিকদের নিয়ে যাওয়া যায়, এমন স্থান বলতে প্রথমেই চোখ বন্ধ করলে যে নামটি ভাসে, সেটি হল পুরী! পুরী যেকোনো বাঙালিরই দ্বিতীয় বাড়ির মত। আপনি যে বয়সেরই হন না কেন, পুরী ভ্রমণ চির নবীন! জগন্নাথ দেবের দরবারে দিন কয়েক আরাম যাপন করার মত লোভনীয় স্থান, পুরীর আগে কেউ নিতে পারবে না। সব দিক দিয়েই এই স্থানের দক্ষ ভূমিকা পালনের ক্ষমতা আছে। যাতায়াতও যেমন স্বল্প সময়, থাকা খাওয়া, সামুদ্রিক পরিবেশের মাধুর্য সব মিলিয়ে পুরী সকলের হৃদয়পুরের রাজসিংহাসনের মালিক হয়ে আছে।

২) সুন্দরবন, পশ্চিমবঙ্গ- সুন্দরবন মজা, রোমাঞ্চ এবং দুঃসাহসিকতা পরিপূর্ণ একটি জায়গা। জলপথে জঙ্গল সাফারির মাধ্যমে, পৃথিবী বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, কুমির এবং অন্যান্য বিভিন্ন বন্য প্রাণীর দেখার লোভ সকল বয়সের মানুষের জন্যই সমান ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন প্রজাতির পাখি পর্যবেক্ষণ, থাকার এবং খাওয়া দাওয়ার সুব্যবস্থা আপনাকে একটি আরামদায়ক সফরের সাক্ষী করে তুলবেই।

৩) দার্জিলিং, পশ্চিমবঙ্গ- পাহাড়ের রানী, দার্জিলিং! পাহাড়ি অঞ্চল হলেও, প্রবীণ নাগরিকদের যাওয়ার জন্য যথেষ্ট উপযুক্ত। বেশি সাইট সিইং না করলেও, আপনি যদি ঘণ্টার পর ঘন্টা ম্যালে বসে থাকেন, তাতেও আপনার মন ভরে যাবে। বিভিন্ন মানুষের আনাগোনা, স্থানীয় মানুষের রোজনামচা সবকিছুর সাক্ষী থাকে এই ম্যাল। তাই আপনিও যদি এর অঙ্গ হতে পারেন, কোনো অসুবিধাই হবেনা। দার্জিলিংয়ের মোমো, টয় ট্রেন সফরে, আপনি আপনার সফরকে আরও চাঙ্গা করে তুলতে পারেন।

৪) পুদুচেরি, দক্ষিণ ভারত- চেন্নাইয়ের কাছাকাছি এই সামুদ্রিক শহরটি বেশ পরিপাটি। ফরাসি উপনিবেশ হিসেবে পুদুচেরির অন্যতম গুরুত্ব আছে। অনেক ফরাসি প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। পুদুচেরির অরবিন্দ আশ্রম বিশেষ প্রসিদ্ধ। এই আশ্রম যেমন মনোরম একটি দর্শনীয় স্থান, তেমনই এখান থেকে ঋষি অরবিন্দ এবং মা শ্রীমার সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য আহরণ করা যায়, যা প্রবীণদের জন্যে বিশেষ উপভোগ্য। এখানে খাওয়া দাওয়ারও সুব্যবস্থা আছে, যা আপনার মনকে তৃপ্তি দেবেই।

৫) রামেশ্বরম, তামিলনাড়ু – একটি অন্যতম বিশেষ স্থান। প্রবীণ নাগরিকরা এই স্থানটি তাঁদের শৈশবের স্মৃতিকে উদযাপন করে উপভোগ করবেন। কারণ এই স্থানটির নাম রামায়ণে উল্লেখ আছে। এখানেই রাম-সেবক হনুমান তাঁর বিরাট বানর সেনা নিয়ে জলপথে পাথর দিয়ে সেতু নির্মাণ করে লঙ্কার উদ্যেশ্যে। তাই এই স্থানে জলপথে লক্ষিত হওয়া পাথুরে পথটি, মনকে রোমাঞ্চে ভরিয়ে তোলে। এছাড়াও এখানে আরিচামুরাই পাখি অভয়ারণ্য আছে, যেখানে বিভিন্ন পাখির মধুর কুজনে, আপনার মন ভরে উঠবে।

৬) হরিদ্বার, উত্তরাখণ্ড -হিন্দুদের অন্যতম পবিত্র, ধর্মীয় স্থানগুলির মধ্যে একটি হলো হরিদ্বার। এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং দর্শনীয় স্থান। এই শহরে পৃথিবী বিখ্যাত ‘হর কি পৌড়ি’ ঘাটে সন্ধ্যারতি, প্রবীণ নাগরিকদের মন ভালো করে দেওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে দায়ী। হরিদ্বারের সঙ্গে আপনি ঋষিকেশও ভ্রমণ করতে পারেন।

৭) বারানসী, উত্তর প্রদেশ-
হরিদ্বারের মত বারানসীও একটি গঙ্গা কেন্দ্রিক ধর্মীয় স্থান এর সঙ্গে মানুষের গভীর সম্পর্ক রয়েছে এই স্থানের ও প্রধান আকর্ষণ সন্ধ্যারতি। বেনারসি শাড়ি উৎস কেন্দ্র এই বারাণসীতে বাবা বিশ্বনাথের মন্দির রয়েছে। যা প্রবীণ নাগরিকদের অন্যতম আকর্ষণের স্থান। এছাড়াও এই জায়গায় পান এবং মশলা খুব বিখ্যাত। বিকেলবেলা নৌকা বিহারেও সকল বয়সী মানুষের মন উৎফুল্লতায় ভরে ওঠে।

তাহলে আর দেরি না করে, আপনার বাড়ির প্রবীণ সদস্যকে নিয়ে ফিরে যান, সেই যৌবন উদযাপনের দিনগুলিতে। এই স্থানগুলি ছাড়াও, দীঘা, শান্তিনিকেতন, পুরুলিয়া, শিলিগুড়ি বা জলপাইগুড়ির মত কিছু ঘরোয়া স্থান আছে, যার প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রবীণ সদস্যের মনকে ভরিয়ে তুলবেই।
কক্ষণো আপনার বাড়ির প্রবীণ মানুষটিকে মনে হতে দেবেন না, যে তাঁর সময় এখন সীমিত। যতদিন বাকি, ততদিন মন খুলে তাঁদের নিয়ে বাঁচুন। আর মনে রাখবেন সেই জীবনী মন্ত্রের কথা, জীবন লম্বা নয় বরং বড় হওয়া উচিত।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *