“মন রে কৃষিকাজ জানো না, এমন মানবজমিন রইল পতিত, আবাদ করলে ফলত সোনা….” মানবজমিন, অর্থাৎ মনুষ্য অধিকৃত জমি বা জগত! যে জগত ইহকালকে বলা হয়ে থাকে। আমাদের, অর্থাৎ মনুষ্য জাতির ধর্ম, আমরা ইহকালের কথা ভেবে ইহকালের কর্ম করি না! আমরা পরকালের সুখ শান্তির কথা ভেবে ইহকালের কর্ম করি, সেই কারণে ইহকালের রস আস্বাদন থেকে বঞ্চিত থাকি। জীবনের এই খাঁটি দর্শন অনুভব করেছিলেন শাক্ত সাধক রামপ্রসাদ সেন। তাই তো এই চরম বাস্তব অনুভূতি ফুটে উঠেছিল তাঁর সাধনায়। সেই মনস্তত্ত্ব নিয়ে রুপোলি পর্দায় ক্যানভাস রাঙাতে এসেছেন কবি শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়, চিত্র পরিচালকের রূপে। ছবির নাম, ‘মানবজমিন’। খুব শীঘ্রই মুক্তি পাবে এই ছবি।
সম্প্রতি এক সাংবাদিক সংস্থা শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের এক কথোপকথন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। শ্রীজাত এবং সৃজিত, দুজনেরই সখ্য যাপন বেশ সক্রিয়। একে অপরের সকল কাজে, সঙ্গী হন। আর বন্ধুত্ব মানেই, খুনসুটি দোসর হবেই। তাই এই পুরো কথপোকথন জুড়ে লেগেই ছিল তাঁদের মধ্যকার মজাদার ঠাট্টা তামাশা। শ্রীজাত মজার ভঙ্গিতেই অভিযোগের সুরে বলেন, তিনি সৃজিতকে তাঁর ছবির জন্য গান লিখে দিতে বলেন। কিন্তু নতুন পরিচালক বলে সৃজিত শ্রীজাতর এই আবেদনে রাজি হননি। উল্টে তাঁর ছবিতে অভিনয়ের জন্য রাজি হয়েছেন। এমন বৈপরীত্য কেন দেখালেন সৃজিত! প্রশ্ন শেষ হতে না হতেই, তৎক্ষণাৎ সৃজিত মৃদু হেসে বলে ওঠেন, বাংলা সাহিত্যের জগতে রবীন্দ্রনাথ, রামপ্রসাদের পর শ্রীজাত। সেখানে সৃজিতের ধৃষ্টতা শ্রীজাতর ছবিতে গান লেখা!
সৃজিতের এই মন্তব্যে নেট মহলের একাংশ যেমন ক্রুদ্ধ হয়েছেন, অপরদিকে তাঁদের এই রসিকতা উপভোগও করেছেন অনেকে। শ্রীজাত এবং সৃজিত নিজেরাই বলেছেন, তাঁরা বাংলার ‘ট্রোল ইন্ড্রাস্ট্রি’ চালান! যেকোনও প্রসঙ্গেই নেটিজেন তাঁদের কাঠগড়ায় দাঁড় করান। সেইরকমই এই অনুষ্ঠানেও তাঁরা মজার মোড়কেই একে অপরের সঙ্গে খুনসুটিতে মত্ত হন। সৃজিত ‘মানবজমিন’ ছবিতে অভিনয়ের প্রসঙ্গে বলেন, এই ছবিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা তাঁর দারুন। কারণ তিনি এই ছবির শুটিং ফ্লোরে আড্ডাই দিয়েছেন বেশি। সকলে সেখানে তাঁর পরিচিত ছিলেন। বন্ধু শ্রীজাতর কল্যাণে, বর্ষীয়ান অভিনেতা পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিনয় করতে পেরেও তিনি উচ্ছ্বসিত।
এই অনুষ্ঠানের শেষে, ‘নবজাতক’ পরিচালক হিসেবে শ্রীজাতর পাশে যাতে সকলে দাঁড়ান, এবং তাঁদের শুভেচ্ছা প্রদান করেন, সেই কামনাও করেছেন বন্ধু সৃজিত। গোটা অনুষ্ঠান জুড়ে তাঁদের বন্ধুত্ব, এবং মজার মুহুর্ত, সত্যিই ভালো লাগার মত।
পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, প্রিয়াঙ্কা সরকার, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অভিনীত ‘মানবজমিন’ ছবিটিতে বাবা এবং ছেলের চরিত্রে অভিনয় করেছেন পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। পরমব্রত এবং প্রিয়াঙ্কার চরিত্র দুটি চান, গ্রামের জমিতে নাবালিকা নাবালক শিশুদের অকাল বিয়ে বা শিশু শ্রম থেকে বাঁচাতে একটি বিদ্যালয় প্রতিস্থাপন করবেন। যার জন্য দরকার অর্থের। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের ভক্ত পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অভিনীত চরিত্রটি ছেলের এই ইচ্ছে পূরণ করতে আগ্রহী নন। তিনি তাঁর ‘রক্ত জল করা’ সঞ্চিত অর্থ দিয়ে এক মিথ্যুক প্রোমোটারের ফাঁদে পড়ে স্বর্গের জমি কিনতে চান। এর ফলে বেঁধে যায় বাবা ছেলের মধ্যকার বিরোধ। ইহকালের কর্ম এবং পরকালের প্রাপ্তির এই দ্বন্দ্বে গড়ে ওঠে ছবির প্রেক্ষাপট। আগামী ৬ জানুয়ারি মুক্তি পাবে এই ছবি।