সুষ্ঠুভাবে জীবনকে প্রতিপালন করতে গেলে, আমাদের খাদ্যাভ্যাসের প্রতি উদাসীন থাকলে চলবেনা। বিশেষ সচেতনতা অবলম্বন করে খাদ্য গ্রহণের প্রতি মনোনিবেশ করতে হবে। মানসিক চাপ, সামাজিক চাপ, শারীরিক চাপ ইত্যাদি আরো নানা দুর্ভোগের সম্মুখীন আমাদের হতে হয়! বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন বিভিন্ন প্রতিবেদনে, এই চাপ গুলি সৃষ্টি হয়, আমাদের অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাসের ফলে! তাঁদের মতে, দুরকম ভাবে আমাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়! প্রথমটি যেমন, অত্যধিক পরিমাণে কাজ করার দরুন, আমাদের নিজেদের জন্য বা পরিবারের জন্য সময় থাকেনা। আমরা যেন বড্ড যান্ত্রিক হয়ে পড়ি! অপরদিকে, এই কর্ম-ব্যস্ততার দরুন অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ জীবন প্রণালী! পুষ্টিকর, বাড়ির খাদ্য ছেড়ে, আমরা আসক্ত হয়ে পড়ি বাইরের উচ্চ প্রক্রিয়াজাত, বা তেলনশালাযুক্ত খাদ্যের প্রতি! সেই খাদ্য সাময়িক আনন্দ দিলেও, একেবারেই শরীর-বান্ধব নয়! এর ফলে শরীরে স্থূলতা বৃদ্ধি পায়, এবং মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়!
তাই, সুস্থ ভাবে এগিয়ে যেতে, খাদ্যাভ্যাসের প্রতি আপনাকে সদয় হতে হবে! তার জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলা আবশ্যক –
১) পারিবারিক আলোচনার মাধ্যমে –
বাড়ির খাবার খাওয়ার অভ্যাস রাখার জন্য, নিয়মিত পরিবারের মানুষের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে! কোন পদ রান্না হবে, কার কোনটি পছন্দ, অপছন্দ, প্রভৃতি বিষয়ে অবগত হতে হবে! এর ফলে যেমন একটি সুসংগত খাদ্য তালিকা নির্মাণ হবে, তেমনই পরিবারের মানুষের সঙ্গেও সময় কাটানো সম্ভব হবে।
২) পরিবারের সকলকে বাজারের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে-
অনেক সময়, অনিয়মিত জীবন যাপনে, মানুষের বাইরের খাবারকে এক নাগাড়ে গ্রহণ করবার একটি প্রবণতা তৈরি হয়! বাইরের মশালাজাত খাদ্যের প্রতি এতই প্রবলভাবে আসক্তি জন্মায় যে নির্দিষ্ট সময় তো দুর, বরং বিরতিহীন ভাবে তাঁরা তা গ্রহণ করে যান! এর ফলে শরীর তো বটেই, এমন বেহিসেবী খাদ্য গ্রহণের ফলে খরচের পরিমাণও বেড়ে যায়! তাই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে, এই নিয়ে আলোচনা করে, বাজার দোকান, মাসকাবারি খরচ, ইত্যাদির হিসেব সকলের রাখা উচিত! অর্থের মুল্য প্রত্যেকের বোঝা উচিত এবং মেনে চলা উচিত!
৩) রান্না করার সময় বাকিদের পরামর্শ গ্রহণ –
রান্না করার সময় খেয়াল রাখতে হবে, সকলের সম্মিলিত ইচ্ছেকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে কিনা! কারণ অপছন্দের খাদ্য হলে সেই থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মানুষ বাইরের খাদ্যের প্রতি আসক্ত হন! তাই বাড়িতেই মন পছন্দের খাদ্য তৈরির জন্য ব্যবস্থা করতে হবে! গত দু বছর এই প্রবণতার ভালো প্রমাণ পাওয়া গেছে, লকডাউন থাকাকালীন! কারণ এই সময় মানুষ ঘরবন্দী ছিলেন, বাইরের খাবার গ্রহণ করার সুযোগ ছিলনা, তাই বাড়িতেই একের পর এক নতুন নতুন ভাবে রন্ধন শিল্পে পটু হয়ে ওঠেন পরিবারের সদস্যরা! এই নতুন নতুন খাদ্যগ্রহণ, শিশু থেকে বয়স্ক সকল মানুষকেই আনন্দ দিয়েছে।
৪) পরিবারের সকলের সঙ্গে খাওয়া –
পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের একসঙ্গে খাদ্য গ্রহণ, একটু আদর্শ পরিবারের ভিত। এটি যেমন পরিবারের সবচেয়ে কনিষ্ঠ সদস্যের মানসিক বিস্তারে সাহায্য করে, তেমনই পরিবারের বয়স্ক ব্যাক্তির নিঃসঙ্গতা রোধ করে। একসঙ্গে খাদ্যগ্রহনের সময় বিভিন্ন রকমের আলোচনায় প্রত্যেক সদস্য মত্ত হন। বাড়ির শিশুটি তাঁর সারাদিনে ঘটা অভিজ্ঞতার কথা ভাগ করে নেয় পরিবারের সঙ্গে। পারিবারিক পারস্পরিকতা তাই সুসংগত খাদ্য গ্রহণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
৫) একটি নির্দিষ্ট সময়সূচি মেনে চলা-
এই সময়ে দাঁড়িয়ে ‘নির্দিষ্ট’ ব্যাপারটি খানিক অলীক এবং আপেক্ষিকই মনে হয়। তবুও সঠিক খাদ্যাভ্যাস রাখতে গেলে, একটি নির্দিষ্ট সময়সূচি অবলম্বন করা দরকার। যে সময়সূচি আপনাকে তাড়না দেবে সময় মত কাজ করার এবং খাদ্য গ্রহণ করার। পরিবারের প্রত্যেক মানুষকে এটি মেনে চলতে হবে।
স্বাস্থ্যকর থাকার জন্য এই নিয়মগুলি মানতেই হবে-
- মিষ্টি বা চিনিজাতীয় খাদ্য এবং পরিশোধিত ময়দা থেকে তৈরি খাদ্য, যথা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।
•প্রতিদিন একটি করে মরশুমি, তাজা ফল গ্রহণ করুন এবং সঙ্গে খাদ্যতালিকায় স্যালাড অন্তর্ভুক্ত করুন। - বাইরের অস্বাস্থ্যকর ভাজাভুজি, তেলমশালা জাতীয় খাবার খাওয়া ত্যাগ করুন।
- দিনে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমোন।
- শরীর সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম, যোগা করুন।
- আপনি এবং আপনার পরিবার সুস্থ আছেন তা নিশ্চিত করতে, প্রতি ছয় মাস-এক বছরে নিয়মিত ডাক্তারি পরীক্ষা করুন।
মনে রাখতে হবে, গর্ভাবস্থা এবং বাচ্চাদের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট দৈনন্দিন যাপনের তালিকা বানিয়ে রাখা শ্রেয়। কারণ গর্ভাবস্থায় আপনি অনিয়মিত জীবন যাপন করলে, তা আপনার আগত সন্তানের ওপর খারাপ প্রভাব বিস্তার করতে পারে। ছোট বাচ্চাদের সঙ্গে একটি পরিবারের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য, যখন ছোট বাচ্চারা এমন পরিবেশের সংস্পর্শে আসে যেখানে প্রচুর অশান্তি থাকে, এটি তাদের উপর মানসিক, শারীরিক এবং সামাজিকভাবে একটি বড় প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এই দুই দিকই যথেষ্ট সচেতনতার সঙ্গে বজায় রাখতে হবে।