এডিনো ভাইরাস! নতুন আতঙ্কের নাম। কোভিড মহামারীর রেশ কেটেছে কী কাটেনি, এই নতুন এডিনো ভাইরাসটির দাপটে ফের ত্রস্ত হয়ে উঠেছে বিশ্ব। মূলত এই ভাইরাস আক্রমণ করছে ২ থেকে ৬ বছর বয়সী শিশুদের। ডিসেম্বর থেকে লক্ষ্য করা যাচ্ছে এই দস্যু রোগের প্রতাপ। এমনকী, ভীষণ দুর্ভাগ্যজনক ভাবে খালি হয়ে যাচ্ছে অসংখ্য মা বাবার কোল। প্রতিদিন নার্সিংহোম কিংবা হসপিটালে আসছে হাজার হাজার শিশু। ফুসফুসে এবং শ্বাসনালীতে সংক্রমন বাড়াবাড়ি আকার ধারণ করছে এই একরত্তিদের। তাই যারপরনাই বিশ্বের সকল দেশের অভিভাবকদের মনেই নেমে এসেছে দুশ্চিন্তার কালো আঁধার। কিন্তু প্রাথমিক কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করলেই আপনি আপনার সন্তানকে রাখতে পারবেন সুরক্ষিত।
কী করে বুঝবেন আপনার শিশুটি এডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত?
দু তিনদিনের বেশি জ্বর থাকলে, তৎক্ষণাৎ ডাক্তারের পরামর্শ নিন। জ্বরের সঙ্গেও আনুষঙ্গিক বিভিন্ন লক্ষণ প্রদর্শিত হয় এই রোগে আক্রান্তদের। গলা জ্বালা, গলা ব্যাথা, শুকনো কাশি, সর্দি, বুকে কফ জমা, বমি ভাব অথবা বমি, মাথা যন্ত্রণা, চোখ লাল হওয়ার মত শরীরের বিভিন্ন যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে কোনও একটি সামান্য রূপেও প্রকাশ পেলে দেরি করবেন না। ডাক্তারের পরামর্শ যত শীঘ্র সম্ভব, আবশ্যক।
কীভাবে ভাইরাস-মুক্ত রাখবেন সন্তানকে?
- অধিক জমায়েত এড়িয়ে যাওয়া – এই সময় যতটা পারবেন, শিশুকে কোনও জমায়েতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। মনে রাখবেন, এই রোগ ভীষণ ছোঁয়াচে। অচেনা কার মধ্যে এই রোগ বাসা বেঁধেছে আপনার জানা সম্ভব নয়। শিশুদের অনাক্রম্যতা দুর্বল হওয়ায় তাঁরা তাড়াতাড়ি আক্রান্ত হয়ে পড়ে। তাই জমায়েত এড়িয়ে চলাই ভালো।
- হাত মুখ ধোয়ার অভ্যাস – শিশুকে বারংবার হাত মুখ ধুতে বলুন। বারবার হাত ধুলে সংক্রমনের ভয় থাকে না। খাওয়ার আগে অবশ্যই হাত ধুয়ে খেতে বসা উচিত।
- বাইরের হাত পরিশোধন করুন – বাইরে থেকে এসে শিশুকে ধরবেন না। হতেই পারে আপনার হাতে সংক্রামক থাকতে পারে। তাই হাত ভালো করে পরিশোধন করে, শিশুকে ধরুন। আপনার সাময়িক আবেগ যেন ছোট্ট সোনার বিপদের কারণ না হয়ে ওঠে।
- আক্রান্তের থেকে দূরে থাকা – আপনি যদি আক্রান্ত হন, তাহলে কখনওই শিশু বা গর্ভবতী নারীর সংস্পর্শে যাবেন না। নিজেকে কিছুদিন ‘আইসোলেশন’ এ রাখুন।
- জলপান ও প্রোটিন গ্রহণ- যেকোনও রোগের উপশম পর্যাপ্ত পরিমাণ জল খাওয়া, এমন প্রোটিন ইনটেক করা। শিশুকে তাঁর বয়স অনুযায়ী পর্যাপ্ত জল খাওয়ান এবং মাছ মাংস ডিম, ডালের মত প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারগুলি গ্রহণ করান।
- মাস্ক পরিধান – অতিমারি কোভিডের মতই শিশুকে জনসমাগমে নিয়ে গেলে মাস্ক পরিয়ে রাখুন।
- গার্গেল – গলায় সমস্যা দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ গরম জলে নুন দিয়ে শিশুকে গার্গেল করান। এমনকী গরম জলে একটু নিয়মিত ভেপারও নেওয়াতে পারেন আপনার সন্তানকে।
প্রাথমিক ভাবে এই কটি উপায় মাথায় রাখলেই অনেক সুরক্ষিত থাকবে আপনার শিশু। কিন্তু সব কিছুর আগে আতঙ্ক করবেন না। শিশু অসুস্থ হলে স্কুল বা অন্য কোনও লোক সমাগমে তাঁকে পাঠাবেন না। ডাক্তারের কাছে আগে নিয়ে যাবেন। ভালো করে ফলমূল, শাকসবজি খাওয়ান। মনে রাখবেন, কোভিডের মত ভয়ঙ্কর অতিমারীকেও আমরা বুড়ো আঙ্গুল দেখাতে পেরেছি, এডিনোকেও পারব। জয়, আমাদেরই হবে।