গরমে আদর্শ বন্ধু হয়ে উঠুক কাঁচা আম, একই অঙ্গে তাঁর এত রূপ জানলে চমকাবেন আপনিও

‘ফলের রাজা’ হিসেবে তার খ্যাতি বিশ্ব জোড়া। তার কদর করেনা, এমন মানুষও বিরল। ‘আম’ এর নাম শুনলেই, মন মেজাজ হয়ে ওঠে ফুরফুরে। গরমকাল যতই অপ্রিয় হোক, এই সময়ে আমের উপস্থিতিই মানুষকে চাঙ্গা করে রাখে। শুধু স্বাদ বা গন্ধেই এই ফল বিশ্ব সেরা নয়, গুণের দিক দিয়ে অন্যান্য ফলকে টেক্কা দিতে পারে, ফল সাম্রাজ্যের এই ‘রাজা’।

পুষ্টিবিদরা বলেন, কাঁচা বা পাকা, দুইই আমই উপকারী শরীরের পক্ষে। বিশেষ করে, কাঁচা আমের তো কোন তুলনাই নেই। গরমে বিধ্বস্ত শরীরকে একটু প্রশান্তি প্রদানের জন্য আমপোড়া সরবত হোক, বা দ্বিপ্রাহরিক ভোজে আমের ডাল, অথবা আমের চাটনি! কাঁচা আম দিয়ে তৈরি যেকোনো খাবারই আপনাকে দিতে পারে উপকার। কাঁচা আমের রসে পটাশিয়াম থাকায় প্রচণ্ড গরমে তা শরীরকে ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে। ১০০ গ্রাম কাঁচা আমে পটাশিয়াম থাকে ৪৪ ক্যালোরি, এছাড়া ৫৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি ও ২৭ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম থাকে।

শরীর-বান্ধব কাঁচা আমের কিছু উপকারীতা সম্পর্কে, আলোচনা করা হল

১) দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে- কাঁচা আম ক্যারোটিন (Carotene) ও ভিটামিন এ (Vitamin A) সমৃদ্ধ, যা চোখের দৃষ্টি বাড়াতে সাহায্য করে। ভিটামিন এ রাতকানা রোগের (Nyctalopia) উপশম ঘটায়। সুতরাং কাঁচা আম চোখের পক্ষে বিশেষ উপকারী উপাদান।

২) শরীরের স্থূলতা দূরীকরণ- চিনি বা শর্করা জাতীয় খাদ্য আমাদের দেহের স্থূলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। কিন্তু কাঁচা আমে চিনির পরিমাণ থাকে না বললেই চলে। তাই এই ফল গ্রহণ করলে, ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা কম থাকে।

৩) অ্যাসিডিটির সমস্যা থেকে মুক্তি – বুকে বা পেটে জ্বালা জ্বালা ভাব, শরীরে অ্যাসিডিটি সৃষ্টি করে। এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে কাঁচা আম সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। অ্যাসিডিটির সময় এক টুকরো কাঁচা আম মুখে দিলে সমস্যার সমাধান হয়।

৪) অন্তঃসত্ত্বাদের পক্ষে সহায়ক – অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন, প্রায়ই বমি বমি ভাবে আক্রান্ত হন মহিলারা। এই ক্ষেত্রেও কাঁচা আম তাদের সমস্যা দূরীকরণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

৫) যকৃতের সমস্যা নিরাময়ক- যকৃতের পক্ষে বিশেষ খাদ্য-বান্ধব হয়ে উঠতে পারে কাঁচা আম। কয়েক টুকরো কাঁচা আম চিবোলে, পিত্তরস বৃদ্ধি পায়। এতে যকৃতের স্বাস্থ্য ভালো হয় যার ফলে হজম প্রক্রিয়ার উন্নতি সাধন হয় এবং অন্ত্রের জীবাণু সংক্রমণ দূর হয়। এছাড়া হজমের পক্ষের উপাদেয় এবং অন্ত্রকে পরিষ্কার করার জন্য, কোষ্ঠকাঠিন্যের হাত থেকেও মুক্তি পাওয়া যায় কাঁচা আমের উপকারীতার ফলে।

৬) শরীরে লবণের ঘাটতিকে উপশম করা- গরমের দাবদাহের ফলে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে যায়, অর্থাৎ শরীরে জলের অভাব ঘটে। অতিরিক্ত ঘামে শরীর থেকে সোডিয়াম ক্লোরাইড ও আয়রন বেরিয়ে যায়। সেই মুহূর্তে কাঁচা আমের সরবত খেলে শরীর পুনরায় সতেজ হয়ে ওঠে।

৭) ঘামাচি প্রতিরোধক হিসেবে- গরমকালে ঘামাচি হল একটি দুর্বিষহ বিড়ম্বনা। ঘামাচির হাত থেকে বাঁচতে কাঁচা আম বিশেষ সহায়তা করে। এছাড়া সানস্ট্রোকের হাত থেকেও কাঁচা আম শরীরকে রক্ষা করে।

৮) ডায়াবেটিক রোগীর পক্ষে উপকারী- প্রায় অনেক মানুষ ডায়াবেটিস (Diabetes) রোগটিত আক্রান্ত হন। নিয়ন্ত্রিত এবং সংকুচিত হয়ে যায় তাদের খাদ্যাভ্যাস। কিন্তু সেই খাদ্যাভ্যাসে কাঁচা আম যোগ করলে, কোন সমস্যা হয় না। কারণ কাঁচা আম ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতেও সক্ষম।

৯) রক্তাল্পতা দূরীকরণে- রক্তাল্পতা (Anaemia) একটি গুরুতর সমস্যা যা অনেক ক্ষেত্রেই মেয়েদের আক্রান্ত হতে দেখা যায় কাঁচা আমে আয়রনের (Iron) উপস্থিতি থাকায় রক্তাল্পতা দূর হয়

১০) মাড়ির ক্ষয় প্রতিরোধ – শরীরে যথোপযুক্ত পরিমাণে ভিটামিন সি (Vitamin C) না থাকলে, মাড়ির সমস্যা দেখা যায়। যেমন এর ফলে মাড়ির ক্ষয় হয় এবং ‘স্কার্ভি’ (Scurvy);রোগের সৃষ্টি হয় এই রোগের কারণে মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। কাঁচা আমে ভিটামিন সি থাকায় মাড়ির যেকোনো ক্ষয় মেরামত করার জন্য উপযোগী হলো কাঁচা আম।

এছাড়া রোগ প্রতিরোধ, ত্বক ও চুলের উন্নতিসাধন, শরীরকে তরতাজা রাখা ইত্যাদি বিভিন্ন কাজের জন্য কাঁচা আমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়। কাঁচা আমও তার ব্যতিক্রম নয়। অতিরিক্ত পরিমাণে কাঁচা আম খেলে ডায়রিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া কাঁচা আমের কষ মুখে লাগলে ও পেটে গেলে সংক্রমণ পর্যন্ত হতে পারে। তাই যথেষ্ট সর্তকতা অবলম্বন করে পরিমিতভাবে কাঁচা আম গ্রহণ করতে হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *