ভালোবাসার রামধনু থাক, ভালো থাকার আকাশ জুড়ে! দোসর হোক সিলভার স্ক্রিন

ভালোবাসা এবং ভালো থাকা, একে অন্যের পরিপূরক! অথচ খুব অদ্ভুত ভাবে আমরা ভালোবাসাকে ছিন্নমূল করে, ভালো থাকাকে বর্জনের তালিকায় নাম লেখাই। ‘প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে’ ভালোবাসা একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয়, আবশ্যিক প্রক্রিয়া। ভালোবাসা একটি সম্বল, যে কোনো আশ্রয়ের তল দেখেনা। কুঁড়ে ঘর হোক কি মাটির, একটা ভরসাযোগ্য ‘ঠাঁই’ এর প্রয়োজন সকলের পড়ে। বারবার তাঁরা হারিয়ে যান প্রিয়তমের টানে। আর সেই ভালোবাসার ধনকে, প্রতিনিয়ত নতুন করে পাওয়াই হয়ে ওঠে, এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াটির ভিত।
ভালোবাসা যেমন একটি আশ্রয়ের নাম, তেমনই সেই আশ্রয়ের কোন বাচ বিচার চলেনা। জাত, বর্ন, ধর্ম এমনকি লিঙ্গ নির্বিশেষে একে অন্যের জীবনপাত্রের মাধুরীকে নিজের সবটুকু দিয়ে ভরাট করে তোলে। কিন্তু বাদ সাধে সমাজের চোখে, সেই ‘অ-সম’ ভালোবাসা! প্রশ্ন তোলা হয় মানসিক ‘অ-সুস্থতা’ নিয়ে! কিন্তু ভালোবাসা যে সব কিছুর উর্ধ্বে, ভালোবাসা যে নিজেই চায় অসংখ্য বন্ধন মাঝে মহানন্দময় মুক্তির স্বাদে নিজেকে ভরিয়ে তুলতে, তা আর কজন বোঝে!


তবুও যাঁরা এই সমাজ ‘বিরুদ্ধ’ ভালোবাসায় জয়ী হতে পেরেছে, তাঁদের জন্যই উদযাপন হয়, এই রামধনু রঙা মাস! জুন মাস হল সেই জয়ের গর্বের মাস!
সম লিঙ্গের প্রতি ভালোবাসার গল্পগুলি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে রুপোলি ক্যানভাসে তুলির টানে ভরে উঠেছে সেই প্রেমের জয়ের উচ্ছাসগুলি। প্রচলিত ওয়েব প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সে প্রচার হয়েছে বেশ কিছু সিরিজ ‘সম’ লিঙ্গের প্রেম নিয়ে।

১) হার্টস্টপার (Heartstopper)– লাজুক কিশোর চার্লির সঙ্গে ‘বন্ধুত্ব’ গড়ে ওঠে সহপাঠী নিকের। বন্ধুত্ব যত গাঢ় হয়, চার্লি অনুভব করে নিকের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক শুধু বন্ধুত্বেই সীমাবদ্ধ নেই। সেই বন্ধু-গাছ আরো মাটির গভীরে গিয়ে শেকড় খুঁজে চলেছে। চার্লি বুঝতে পারে, সে তাঁর সহপাঠির ‘প্রেমে’ পড়েছে। বাধা দেয়নি নিকও। দুজনের আবেগ, উচ্ছাস, সমাজের সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়ে চলা সবটা খুব সুক্ষ্মভাবে ফুটে উঠেছে সিরিজটিতে।

২) হ্যাপিয়েস্ট সিজন (Happiest Season)– অ্যাবি এবং হারপার দুজন দুজনের প্রতি আসক্ত। দুজনেই নারী। অ্যাবি ক্রিসমাসে হারপারের বাড়িতে বান্ধবীকে ‘প্রপোজ’ করতে যান। কিন্তু হারপারের বাড়ির লোক কেউ এই বিষয়ে অবগত ছিলেন না। তাঁদেরকে সম্মুখীন করা, দুজনের সম্পর্কের ওঠা পড়া সমস্তটা বাস্তবিক ভাবে চিত্রিত হয়েছে এই সিরিজে।

৩) লাভ, সাইমন (Love, Simon)– একটি বয়ঃসন্ধির বালক সাইমন, অষ্টাদশীর কক্ষে প্রবেশ হয়নি। হঠাৎ অনুভব করে, কোনো নারীর প্রতি তাঁর অনুভূতি আসেনা। হঠাৎ এক অ-নামি পুরুষের সঙ্গে শুরু হয় তাঁর অন্তর্জালক মাধ্যমে কথোপকথন। সেই পুরুষের সঠিক পরিচয় জানতে গিয়ে সাইমন নিজেকে আরও প্রকট ভাবে খুঁজে পেয়ে জ্ঞাত হয়, সে পুরুষের প্রতি আসক্ত।

৪) দ্য হাফ অফ ইট (The Half of It)– এলি, এক পরোপকারী অষ্টাদশীর কিশোরী। বন্ধুদের প্রজেক্ট করতে করতে হঠাৎ তাঁর কিশোর সহপাঠীর আবেদনে তাঁর জীবনের স্রোত পরিবর্তিত হয়। সেই সহপাঠীর প্রেমিকার জন্য চিঠি লিখে দিতে হবে এলিকেই। এদিকে এলি তাঁর সহপাঠীর প্রেমিকার জন্য চিঠি লিখতে গিয়ে, নিজেই প্রেমে পড়ে যায় সেই মেয়েটির। ত্রিকোণ এবং সমপ্রেমের আবহে জমাট বাঁধে গল্প।

৫) সেক্স এডুকেশন (Sex Education)- একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ন সিরিজ। গল্পের মুখ্য চরিত্র ওটিস নিজে প্রেমে দক্ষ না হলেও, প্রেম সম্পর্কিত সমস্ত জ্ঞান তাঁর আছে। বলতে গেলে যৌণ সচেতনতা বা সেই বিষয়ক জ্ঞান সে তাঁর সমবয়সীদের প্রদান করে। তাঁর মা জিন, একজন যৌণ বিশেষজ্ঞ। এই সিরিজে দেখানো হয়, যৌনতা কোনো ‘ট্যাবু’ বা সমাজ নিষিদ্ধ প্রক্রিয়া নয়। এটি অত্যন্ত স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। সেরকমই সম-কামও খুব স্বাভাবিক এক প্রবৃত্তি। আসলে এই সিরিজটি জনসচেতনতার নিরিখে তৈরি হয়। মানুষ যাতে আর নিজের মধ্যে সংকীর্ণতা না পোষণ করেন, যাতে তাঁরাও ভালোবাসার সঠিক মর্ম খুঁজে পান, সেই কারণে এই সিরিজটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। মানুষকে সংকীর্ণতার আঁধার থেকে, আলোর উৎসের সম্মুখীন করানোই ছিল এই সিরিজের লক্ষ্য।

এছাড়াও ‘ সিঙ্গল অল দ্য ওয়ে (Single All The Way)’, ‘টেলস ওফ দ্য সিটি (Tales Of The City)’ ইত্যাদি বিভিন্ন ওয়েব সিরিজগুলিতে সম প্রেম নিয়ে উদযাপন করা হয়েছে, যা অবশ্যই দেখার প্রয়োজন আছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *