‘আশ্বিনের শারদ প্রাতে, বেজে উঠেছে আলোক- মঞ্জীর…’ নস্টালজিক বাঙালির আবেগের অন্যতম নিয়ন্ত্রক এই কোটি শব্দবন্ধ। এই শব্দচ্চারণই যেন বাঙালিকে মুহূর্তের মধ্যে দুর্বল করে তুলতে পারে। আসলে এই দুর্বলতা কিন্তু বাঙালির জীবনীশক্তিরই উৎস।
‘মহালয়া’, মহালয়া মানেই পুজো আগত। দেবীপক্ষের সূচনা। ‘মহ’ কথাটির অর্থ পুজো বা উৎসব। এবং মহালয়া কথাটি বলতে বোঝায়, মহান, অর্থাৎ বৃহৎ আলয়। অর্থাৎ যেখানে স্বর্গত পিতৃ পুরুষেরা অবস্থান করেন। পিতৃপক্ষের অবসান ঘটিয়ে হয় দেবীপক্ষ অর্থাৎ মাতৃপক্ষের সূচনা। এই দিন ভোরবেলা হিন্দুরা স্বর্গগত পিতৃ পুরুষদের উদ্যেশ্যে তর্পণ করেন। তাঁরা বিশ্বাস করেন, এইদিন পিতৃ পুরুষেরা মর্ত্যে আগমন করেন, তাঁদের উত্তরাধিকারদের নিবেদনে সাড়া দিতে। তাই এই ক্ষেত্রে মহালয়াকে শুভ বিবেচনা করতে অনেকেই অনুচিত মনে করেন। কারণ পিতৃপুরুষদের বিয়োগ কখনই সুখের নয়, এবং তাঁদের উদ্যেশ্যে স্মৃতিচারণও যথেষ্ট বেদনাদায়ক। তবুও যেহেতু বাঙালির প্রাণপ্রিয় দুর্গোৎসবের সূচনা হয় মহালয়ার মাধ্যমে, তাই মানুষ এটিকে শুভ বলে থাকেন।
আবার পুরাণ অনুযায়ী, এই দিনেই দেবী দুর্গা অসুর বধের জন্য ভারপ্রাপ্ত হন। ব্রহ্মার মতে, কোনও পুরুষ বা দেবতা অসুরকে বধ করতে পারতেন না। তাই ত্রিলোকেশ্বর ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর দ্বারা সৃষ্ট হন সিংহ বাহিনী দেবী দুর্গা। অসুরকে বধ করে, দেবলোককে অত্যাচারের হাত থেকে মুক্তি দেন অসুরদলনী মা দুর্গা।