‘মা’, পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট্ট, অথচ পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী শব্দ! যে শব্দের কোন বিকল্প হয়না! যাঁর সঙ্গে জন্মের আগে থেকেই গড়ে ওঠে হৃদ্যতা! তাঁকে নিয়ে বলা, আর মহাভারতের মত কালজয়ী মহাকাব্যের শুরু এবং শেষ খুঁজে না পাওয়া, দুইই সমান! মা’কে নিয়ে বলতে গেলে, কোথায় শুরু, আর কোথাও শেষ হবে, সেই সমীকরণ কখনোই মেলেনা! আর এই অসম্পূর্ণতাই হয় এই ক্ষেত্রে বিশেষ। এটিই বলে দেয়, তিনি আমাদের জীবনে ঠিক কি!
আজ, ১৪মে ‘বিশ্ব মাতৃ দিবস’ (International Mother’s Day)। প্রত্যেক বছর, মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার মায়েদের জন্য এই দিনটি পালন হয়। যদিও, প্রতিদিনই মাতৃ দিবস! কিন্তু প্রতিদিন তাঁকে বলা হয়ে ওঠেনা, তিনি আমাদের জীবনের ‘জিয়ন কাঠি’! যে কাঠির ছোঁয়ায় আমরা জীবনের পথে অভিজ্ঞ হই। তাই মায়ের নামে একটি দিন, বিশেষ তো হতেই হয়!
১৯১৪ সালের ৯ মে, আমেরিকার (America) রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন (Woodrow Wilson);একটি আইন পাশ করেন, যেখানে বলা হয়েছিল প্রত্যেক বছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার, পালন করা হবে মাতৃ দিবস। তারপর থেকে আমেরিকা-সহ বিভিন্ন দেশে মাতৃ দিবস পালিত হয়ে থাকে। কিন্তু ২ ফেব্রুয়ারি একমাত্র, গ্রিসে (Greece) মাতৃ দিবস পালিত হয়।
১৯০৮ সালে, আমেরিকাবাসী আনা জার্ভিস (Anna Jarvis) , তাঁর মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে, এই বিশেষ দিনটির সূচনা করেন। যদিও পৃথিবীর সকল মায়েদের জন্য স্বীকৃতি অর্জনের লড়াই তাঁর শুরু হয়েছিল ১৯০৫ সালে। কিন্তু তৎকালীন সরকার তাঁর এই আবেদনকে সম্মতি দেননি। পরবর্তীতে তিনি এই লড়াইয়ে জয়ী হলে, তাঁর সঙ্গে সমগ্র বিশ্ব মেতে ওঠে এই বিশেষ দিনটির মাধুর্যে।
আপনিও মেতে উঠুন, আপনার এই আত্মার দোসরের সঙ্গে, এই বিশেষ দিনটিতে। যে যে ভাবে আপনি আপনার মা’কে বিশেষ অনুভব করাতে পারেন, সেগুলি হল-
১) নিজের হাতে তৈরী চিঠি বা কার্ড –
ছোটবেলায় প্রিয় বন্ধুদের জন্মদিন হোক বা তাঁদেরকে ঘিরে বিশেষ দিন, আমরা কম বেশি নিজের হতে চিঠি লিখে বা কার্ড বানিয়ে তাঁদের উপহার দিয়েছি! এবারে, মায়ের জন্যও করে ফেলুন ঠিক এমন কিছু! ইচ্ছে মত তাঁকে নিয়ে কবিতা, প্রিয় স্মৃতি, বা প্রিয় মুহূর্তকে চিঠি বা কার্ডের মাধ্যমে বন্দী করুন! উপহারটি পাওয়ার পর, আপনার মায়ের সঙ্গে আপনার, আবেগঘন মুহূর্তের সঙ্গী হওয়ার দিকে এগোতে, আর দেরি কিসের!
২) আত্মপ্রেম –
সংসারের দায়িত্ব, কর্তব্য, রোজনামচা সামলে, তিনি নিজের জন্য একেবারেই সময় পাননা। তাই এই একটি দিন আপনি তাঁর সময়কে চালনা করুন! সাংসারিক দায়বদ্ধতাকে খানিক সামলে, মা’কে নিয়ে যান তাঁর শৈশবের আঙিনায়। কী ভাবছেন, খুব শক্ত? এর উত্তরটা খুবই সোজা, আপনি যেমন আপনার ত্বকের, রূপের যত্ন নিতে পার্লারে যান, এই একটি দিন মা’কেও সেখানে নিয়ে যান। পেডিকিওর, ম্যানিকিওর, স্পা থেকে শুরু করে, একটি জমজমাট ভোজ দিয়ে দিনটি উদযাপন করুন। তাঁর মধ্যে সেই আত্মপ্রেমের প্রবণতাকে, আবার জাগিয়ে তুলুন!
৩) ছুটি যাপন –
তাঁর সঙ্গে কাজ ভাগাভাগি করে, তাড়াতাড়ি সেরে নিন। তারপর গোপনে তাঁর এবং নিজের ব্যাগটি গুছিয়ে, তাঁকে চমকে দিয়ে বেড়িয়ে পড়ুন ধারে কাছে। গঙ্গার ধারে, বা কোন ভালো রেস্তোরা, বা কোন ভালো একটি ছবি, উপভোগ করুন আপনার জীবনের এই পরম ‘সম্বল’টির সঙ্গে।
৪) প্রিয় রান্না –
একটা দিন তাঁকে একটু বুদ্ধি করে, কাজ থেকে বিরত থাকুন। বাড়ির কাজ বা রান্নার দিকে, আপনি বা বাড়ির অন্যেরা মনোনিবেশ করুন। তাঁর প্রিয় পদগুলি মাথায় রেখে, একের পর এক ব্যঞ্জন তৈরি করে ফেলুন। সন্তানের হাতে নিজের পছন্দের খাবার আস্বাদন করে, তিনি যেমন চমকে যাবেন, তেমনই আবেগপ্রবণ হয়ে উঠবেন।
৫) কেকের আয়োজন –
আপনি যদি কেক তৈরি করতে পারেন, তাহলে তো কোনও কথাই নেই! কিন্তু যদি আপনি কেক প্রস্তুত করতে না জানেন, তবে বাইরে থেকে একটি মাতৃ দিবসের ‘থিম’ (Theme) এর কেকের বন্দোবস্ত করে ফেলুন। এই বিশেষ দিনে কেক আপনাদের মুহূর্তকে আনন্দপ্রবন করতে, অনুঘটকের কাজ করবে।
৬) স্মৃতির সরণি –
মায়ের ছোটবেলার ছবি, অথবা তাঁর সঙ্গে আপনার ছোটবেলার ছবি একত্রিত করে তাঁকে একটি ফটোফ্রেম উপহার দিন! তাঁকে নিয়ে একটু সময় কাটান, যেখানে তিনি সেই দিনগুলিতে আপনার সঙ্গে আবার ফিরে যেতে পারেন। তাঁর পছন্দের মানুষগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করান। তাঁর মন ভালো থাকলে, পরিবারের সকলে ভালো থাকবেন।