বীরভূমের রামপুরহাটের এক অতিপ্রাচীন পুজো- ‘মুরারী লাল দত্ত ঠাকুরবাড়ি’র (Murari Lal Dutta Thakurbari) পুজো।

“ওরে নবমী নিশি না হইও রে অবসান…”
রামপ্রসাদের সেই গানের মতোই এখন আমাদের অর্থাৎ সব বাঙালির মনের আকাঙ্ক্ষা! দেখতে দেখতে পুজো শেষ হয়ে এলো। আজ দশমী (Dussehra), মায়ের কৈলাসে ফেরার পালা। আবার দীর্ঘ একবছরের অপেক্ষা মায়ের আগমনের আশায়! মায়ের পুজো শহর-গ্রাম-মফস্বল তথা সমস্ত শহরাঞ্চলেই হয়ে থাকে। কলকাতার পুজো কতটা বিখ্যাত সেটা সবার জানা। কতরকমের মণ্ডপ (Pandal) হয়, বিভিন্ন থিমের (Theme) ছড়াছড়ি চলে। আজকাল এই থিম (Theme) প্রথা খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। শুধু কলকাতাই নয়, বরং রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এই থিম (Theme) ছড়িয়ে গেছে। তবে, এই থিমপুজোর ভিড়েও কিন্তু এখনো আমরা সাবেকি ধাঁচে পুজো বা আটচালা দু’চালা পুজো খুব ভালোবাসি। আর এই ধরণের পুজো বেশিরভাগ মফস্বল, গ্রাম কিংবা শহরাঞ্চলেই হয়ে থাকে। আজ আপনাদের গল্প বলবো এমনই এক পুজোর যার রন্ধ্রে রন্ধ্রে সাবেকিয়ানা, ভালোবাসা ছড়িয়ে। বীরভূমের রামপুরহাটের এক অতিপ্রাচীন পুজোর কথা বলবো আজ যেটি হলো ‘মুরারী লাল দত্ত ঠাকুরবাড়ি’র (Murari Lal Dutta Thakurbari) পুজো।

মুরারী লাল দত্ত ঠাকুরবাড়ি’র প্রতিমা


ঠাকুরবাড়ির পুজো ঠিক কবে শুরু হয় তা কেউ ঠিক করে বলতে পারেন না তবে এটুকু জানা যায় যে এই পুজো হলো দেড়শ বছরের পুরোনো এবং চার পুরুষ ধরে বংশপরম্পরায় (Generation Wise) এই পুজো চলে আসছে। এই পুজো শুরু করেন মুরারী লাল দত্ত মহাশয় আর তা এখনো একইভাবে, একই ধাঁচে, নিষ্ঠাভরে চলে আসছে। শুধু ঠাকুরবাড়ির লোকজনই নন, বরং প্রতিমা শিল্পীও বংশপরম্পরায় (Generation Wise) ‘মা’য়ের মূর্তি জীবন্ত করে চলেছেন। একসময় তারাপীঠের বামদেব স্বয়ং এসে পুজো করতেন দেবীর। তাঁর জন্য আলাদা শয়ন কক্ষ ছিল যা এখনো বর্তমান। প্রতিবছর পুজোর এই চারটে দিন ঠাকুরবাড়ির সবাই এক জায়গায় জড়ো হন। তারপর নবপত্রিকা স্নান, দেবীর বোধন, আল্পনা দেওয়া, পুরো ঠাকুরবাড়ী আলো আর বিভিন্নভাবে কারুকার্যের মাধ্যমে সাজানো চলে। বাড়ির ছোটরাও এতে অংশ নেয়। অন্যদিন সম্ভব নাহলেও নবমীর দিন সমস্ত প্রবাসী ঘরে ফেরেন অবশ্যই। সবাই মিলে হইহুল্লোড়, আড্ডা, গান বাজনা, মজা সব চলে। অবশেষে আসে দশমী (Dussehra)। বাড়ির মেয়ের শ্বশুরবাড়ী যাবার দিন। মনখারাপ হবার দিন। কিন্তু, বাড়ির মেয়েকেও তাঁরা বিদায় জানান রাজকীয় ভাবেই। বাঁশের দোলা প্রস্তুত করে, বাড়ির মেয়েকে ঠাকুরবাড়ি ও এলাকাবাসী মিলে, কাঁধে চাপিয়ে সসম্মানে পুরো শহর প্রদক্ষিণ করিয়ে বিদায় জানানো হয়। এই শোভাযাত্রায় (Procession) বাড়ির ছোটোদের থেকে শুরু করে মেয়ে-বউ-বুড়ো-জোয়ান সকলেই অংশ নেন। বাড়ির মেয়েকে বিদায় জানিয়ে সকলের চোখ যায় ভিজে। সকলের চোখে জল। আবার দীর্ঘ একবছরের অপেক্ষা বাড়ির মেয়ের আগমনের জন্য!
আজ সেই দিন। মেয়ের ফিরে যাবার দিন। আবার অপেক্ষা। তবু কিছু অপেক্ষা সত্যি মধুর! সকলকে জানাই শুভ বিজয়ার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

Scroll to Top