২০২৩ আগত। পুরাতনকে বিদায় জানিয়ে, নতুন ভাবে পথ চলা। এই নতুনের সঙ্গে তাল মেলানোর জন্য, আমরা আমাদের জীবন যাপনেও নতুনত্বের ছোঁয়া রাখতে উৎসুক হই। নানা রকম ‘নিউ ইয়ার রেজোলিউশন’ এ মেতে উঠি। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, আমরা আমাদের নিজেদের শখ আহ্লাদ পূরণ করতে গিয়ে, সঞ্চিত অর্থের পরিমাণ শুন্য করে ফেলি! প্রয়োজনের সময় গ্রাস করে নিঃস্বতা। ফলে তখন পড়তে হয় বিপদে। কেমন হয়, যদি আমরা নিজেদের শখ আহ্লাদ পূরণ করেও, এক নির্দিষ্ট পরিমাণে, প্রয়োজনীয় অর্থ সঞ্চয় করে রাখতে পারি? যদি প্রত্যেক বছরই এমন ‘নিউ ইয়ার রেজোলিউশন’ আমরা পালন করি? তাহলে কিন্তু কখনই আগামীতে অর্থ নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে না। এর জন্য অবশ্যই আমাদের কিছু জিনিস মাথায় রাখতে হবে।
সঞ্চয় করার ক্ষেত্রে দুরকম মানুষই দেখা যায়। তাঁর মধ্যে আপনারা অনেকেই আছেন যাঁরা, এই ব্যাপারে উদাসীন, অনুৎস্যুক হয়ে থাকেন! অহেতুক, সজ্ঞানত বা অজ্ঞানত এদিক ওদিক বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করে ফেলেন! তারপর পরবর্তীতে সংকটের মুখোমুখি হন। আবার এমনও আছেন, যাঁরা অর্থ বিনিয়োগ করার ব্যাপারে খুবই সংযমী, এবং কঠোর! কিছুতেই খরচমুখী হননা তাঁরা! কিন্তু প্রত্যেককেই জেনে রাখতে হবে, শৌখিন জীবনযাপন করেও, আপনি যথাযথ ভাবেই আপনার অর্থ সঞ্চিত করতে পারবেন, যা পরবর্তীতে আপনার বিপদের সঙ্গী হয়ে উঠবে।
১) নিয়ন্ত্রিত বিনিয়োগ –
‘সস্তায় পুষ্টিকর’ এই কথাটি কিন্তু মিথ্যা নয়। আমরা যাঁরা সাধারণ মধ্যবিত্ত গৃহস্থলীর সদস্য, তাঁদের মাথায় রাখতে হবে যে বেশি মূল্য দিয়ে ক্রয় করা মানেই সে জিনিস সেরা নয়। বরং কম মুল্যেও আমরা ভালো জিনিস লাভ করতে পারি।
অনেক সময় দেখা যায় আমরা দামি পণ্যের দিকে বেশি মনোনিবেশ করি। যেখানে কম মূল্যেও সেই একই পণ্য আমরা কিনতে পারি, অর্থাৎ কম দামেও উচ্চমানের জিনিসটি পাওয়া যায়। মাথায় রাখতে হবে, যেখানে কম খরচেও আমার লক্ষ্য পূরণ সাধিত হচ্ছে, সেখানে বেশি দাম দিয়ে একই জিনিস কেনা বিলাসিতা। আপনার সঙ্গে আপনার পরিবারকে এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে, এর ফলে ভবিষ্যতে আপনারাই উপকার পাবেন।
২) মাসে একবার দুবার শখ পূরণ –
আমাদের ব্যস্ত রোজনামচায় একটু আধটু বিনোদনের উপস্থিতি কিন্তু আরামদায়কই। তাই আপনি মাসের মাঝে কিংবা মাসের শেষের দিকে, একবার দুবার আপনার শখ পূরণ করতেই পারেন। ভালো ছবি দেখতে যায়, কোথাও ভালো রসনা বিলাস! এতে আপনার মন এবং শরীর দুইই শান্ত থাকবে। অনেক সময় দেখা যায়, আমরা যে যার নিজের এমন কিছু ব্যক্তিগত খাতে বিনিয়োগ করে থাকি, যা হয়তো অন্যের কাছে অহেতুক মনে হতে পারে! নিজের শখ আহ্লাদ পূরণ করার এই ঘটনাটি অন্যদের কাছে মনে হয়, অহেতুক খরচ করাও মনে হতে পারে! কিন্তু আমাদের মাথায় রাখতে হবে, অনাড়ম্বর জীবন মানেই সঞ্চয় করা নয়! সবকিছু করেও নির্দিষ্ট খাতে টাকা জমানো যেতে পারে। ডাল-ভাত জীবনই যে অর্থ সঞ্চয়ের উৎস, এমনটা নয়, এটা সকলকেই বুঝতে হবে, এবং আপনি যে শৌখিন জীবন যাপন করেও প্রয়োজনীয় সময় সঞ্চিত অর্থ দ্বারা আপনার যেকোনও গুরুতর মুহূর্তে প্রয়োগ করতে পারেন, সেই বিষয়ে আপনিও সকলের দৃষ্টান্ত হবেন!
৩) অকারণে ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি কিনবেন না –
অনেকের প্রবণতা থাকে, নতুন কোন গ্যাজেট, যেমন ফোন বা টিভি, বাজারে এলেই, সেটি কিনে ফেলা! যাতে অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকা যায়! কিন্তু আপনার কাছে যদি সেই গোত্রের একটি অক্ষত গ্যাজেট থেকে থাকে, তবে আপনার নতুন গ্যাজেট কেনাটা অযৌক্তিক এবং অপচয়! তার চেয়ে অপেক্ষা করুন! যতদিন না আপনার আগের গ্যাজেটটি সম্পূর্ন অব্যবহার-যোগ্য হচ্ছে, ততদিন আপনাকে ধৈর্য রাখতেই হবে। এর ফলে আপনার যথাযথ অর্থ সঞ্চিত হতে পারে।
৪) ক্রয় করার আগে দর কষাকষি –
নিজের লাভের জন্য বিক্রেতারা মূলত সকল ক্ষেত্রেই ক্রয়মূল্য বাড়িয়ে আমাদেরকে বলে থাকেন। সেই ব্যাপারে আমাদের তৎপর এবং বিচ্ক্ষণ হতে হবে! দুদিকের কথাই মাথায় রেখে, দর কষাকষি অর্থাৎ বার্গেনিং করে তবেই সেই পণ্য কেনা উচিত। এছাড়াও, সেকেন্ড হ্যান্ড জিনিস কেনার ব্যাপারেও অবগত হতে পারেন। যা চলতি বাজারের ক্রয়মূল্যের তুলনায় অনেক সস্তা হয় এবং উপকারীও হয়।
৫) সময়মত বিল জমা দেওয়া –
অনেকেই অলসতার কারণে যাবতীয় বাড়ির বিল সময় মত মিটিয়ে দিতে অক্ষম হন। এই প্রবণতা দুর করতে হবে। মাসের পর মাস দেরি করলে, একেবারে অনেক পরিমাণে নে অর্থ ব্যয় হয়ে যায়, সে কথা মাথায় রাখতে হবে। সেই কারণে উচিত সময়ে বিল মিটিয়ে দিলে, কোন চিন্তার কারণ আর থাকবে না।
৬) কেনাকাটার ব্যাপারে দীর্ঘ সময় ধরে সঞ্চয় –
ধরুন আপনি এক বছরের মধ্যে একটি ফ্ল্যাট কিনতে চান ২৪ লাখ টাকা দিয়ে, কিন্তু আপনি এ ব্যাপারেও নিশ্চিত, এক বছরে এই পরিমাণ অর্থ আপনি সঞ্চয় করে উঠতে পারবেন না। তাই সেক্ষেত্রে আপনার সময় সীমাকে বৃদ্ধি করুন! অন্তত দু বছর হিসেবে হাতে ধরুন! এর ফলে আপনার সঞ্চিত অর্থের পরিমাণও বাড়বে, এবং আপনি আপনার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতেই সক্ষম হবেন।
কিন্তু সর্বোপরি মনে রাখতে হবে ত্যাগ না করেও, অর্থ সঞ্চয় করা যায়। উপরিক্ত উপায়গুলি মাথায় রেখে এগিয়ে গেলে, যেমন শখ শৌখিনময় জীবনও কাটাতে পারবেন, সেরকম অর্থ সঞ্চয়েও পারদর্শী হবেন।