নববর্ষ মানে “জীর্ণ পুরাতন যাক ভেসে যাক”। পুরাতনকে বিদায় জানিয়ে ‘নব রবিকিরণে’, নব আনন্দে জেগে ওঠেন বাঙালি জাতি। বাংলার বারো মাস অনুযায়ী, বৈশাখ মাস হল শুরুর মাস। পয়লা বৈশাখ তাই বাঙালির কাছে উৎসবের দিন। নতুন বছরকে মানুষ নিষ্ঠা ভরে স্বাগত জানান। কিন্তু এই পয়লা বৈশাখ পালনের মুলে রয়েছে এক অজানা ইতিহাস। সেই ইতিহাসেরই খোঁজ করল পরিদর্শক।
পয়লা বৈশাখ নিয়ে অনেক ইতিহাসই জড়িয়ে রয়েছে। তবে সবচেয়ে চর্চিত ইতিহাসের মধ্যে রয়েছে যেটি সেটিই আজকের আলোচ্য বিষয়। অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, বাংলা দিনপঞ্জির উন্মেষ কাল, রাজা শশাঙ্কের সময় থেকে। যদিও এই সময়কালকে নিয়ন্ত্রন করেন স্বয়ং মোঘল সম্রাট আকবর। ইতিহাস জানান দিচ্ছে, রাজস্ব বা কর আদায়ের উদ্যেশ্যে বাংলা দিনপঞ্জির উদ্যেশ্য পরিবর্তন করেন সম্রাট আকবর। কারণ, ভারতে মোঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে, সম্রাটরা হিজরী পঞ্জিকা অনুযায়ী কৃষকদের থেকে খাজনা আদায় করতেন। কিন্তু সম্রাটদের দ্বারা নির্ধারিত সেই সময়, কৃষি ফলনের পক্ষে একেবারেই অনুকূল থাকত না। ফলে কৃষকরা পড়তেন মহা সমস্যায়। অসময়েই কৃষকদের খাজনা পরিশোধ করবার বিধান আসত। কিন্তু তখন না রয়েছে ফলন, না রয়েছে খাজনা শোধ করবার মত অর্থ! এমন প্রতিকূলতা থেকে সম্রাট আকবর মুক্ত করেন কৃষক গোষ্ঠীকে। তিনি কৃষকদের মঙ্গলের জন্য বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। এর ফলে, চৈত্রের মধ্যে সঠিক ফলন সম্পন্ন হলে, কৃষকরাও লাভবান হয় ওঠেন। ঠিক হয়, চৈত্র মাসের শেষ দিনেই কৃষক জাতি খাজনা পরিশোধ করবেন।
সম্রাটের কথা মত কৃষকদের জীবনেও কোনও সমস্যা রইল না। চৈত্রের শেষ দিনে তাঁরা সকল খাজনা শোধ করে দিতে থাকেন। ঠিক তার পরেরদিন, অর্থাৎ বৈশাখ মাসের প্রথম দিনে ভূমির মালিকরাও খুশি হয়ে, নিজ নিজ স্থানে মিষ্টান্ন দ্বারা সকল অধিবাসীদের আপ্যায়ন করতে লাগলেন। খাজনা পরিশোধকে কেন্দ্র করে সারা অঞ্চল উৎসবমুখর হয়ে উঠত। তার সঙ্গে দোসর হত বিভিন্ন সামাজিক উৎসব। এইভাবেই এই আনন্দ আয়োজন বিস্তৃত পরিসরের কদর লাভ করে। জমিদারদের আনন্দ উদযাপনে সীমাবদ্ধ না থেকে হয়ে ওঠে সমগ্র বাঙালির।