১৫ জুন, ২০২৩। ঘড়ির কাঁটা তখন বিকেল পাঁচটা বেজে তিরিশ মিনিট। বেজিংয়ের সবুজ মাঠ জুড়ে নীল সাদা ঘূর্ণির জয়োল্লাসে মাতোয়ারা গ্যালারি। স্ক্রিনের এপারেও তখন উত্তেজনার পারদ সর্বোচ্চ মাত্রা অতিক্রম করেছে। কারণ, ফের মাঠে নেমেছেন ২০২২ এর বিশ্বজয়ী, আর্জেন্টাইন এগারোজন তরুণ তুর্কি। কুপোকাত করে দিচ্ছেন অস্ট্রেলীয় প্রতিপক্ষকে। আর স্বমহিমায় কলকাঠি নেড়ে চলেছেন লিওনেল মেসি। মাত্র ১ মিনিট ১৯ সেকেন্ডে জীবনের দ্রুততম গোল করে ফেলে উদ্বেলিত করলেন ভক্তকূলকে।
পাঁচটি মাস আগে, বিশ্ব শ্রেষ্ঠ হয়েছে আর্জেন্টিনা। ৩৬ বছর ধরে যে অভিশাপের মেঘ ঘনীভূত ছিল আর্জেন্টাইন ফুটবল ইতিহাসে, সে মেঘ কেটে গেছে। শ্রেষ্ঠত্বের বেশ ধারণ করেছেন লিওনেল মেসি। গত বৃহস্পতিবার চীনের রাজধানী বেজিংয়ে একটি প্রীতি ম্যাচের আয়োজন করা হয়। আর্জেন্টিনা বনাম অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ দেখার জন্য গ্যালারি উপচে পড়ছিল জনজোয়ারে। এরই মাঝে ঘটল এক কান্ড! সেই কাণ্ডের সাক্ষী থাকলেন আপামর বিশ্ব।
আজেন্টাইন জার্সি গায়ে এক চীনা যুবক, সকল কড়া বিধি নিষেধ অতিক্রম করে, গ্যালারির প্রাচীর বেয়ে নেমে আসেন মাঠে। উদ্দ্যেশ্য? একটিবার আরাধ্যকে ছুঁয়ে দেখা! সামনেই ছিলেন ফুটবলের অধীশ্বর, লিওনেল মেসি। যুবক এক দৌড়ে আরাধ্যের কাছে গিয়ে হাত রাখেন তাঁর কাঁধে। ইতিমধ্যেই সেখানকার নিরাপত্তারক্ষীরা ধরে নিয়ে যেতে চায় যুবককে। কিন্তু যুবক তখন স্বপ্ন এবং সেই স্বপ্নকে ছুঁয়ে ফেলার চৌকাঠে বিচরণ করছেন। একটি ঘোরে আচ্ছন্ন তিনি। সকল বন্ধন অতিক্রম করে যে মুক্তির স্বাদ তিনি নিলেন, তা তাঁর কাছে বেঁচে থাকার আনন্দ! সেই মুক্তির স্বাদের আনন্দে সারা মাঠ চক্কর কাটলেন তিনি। হাই ফাইভের ইঙ্গিত ছুঁড়ে দিলেন আর্জেন্টাইন ‘বাজ পাখি’ এমি মার্টিনেজের দিকে। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। ধরা পড়লেন নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে। কিন্তু তাতে কী? তাঁর জীবনের যে সাধনা ছিল, আজ তা পূর্ণতার স্বাদ গ্রহণ করেছে। তাই যুবকের চোখে মুখ জুড়ে রয়েছে এক পৃথিবী প্রশান্তি।
এক সূত্র থেকে জানা গেছে, চিনে খেলা চলাকালীন অবৈধ ভাবে কোনও ভক্তের প্রবেশে হতে পারে কারাদণ্ড। সূত্র অনুযায়ী, চীনা যুবকটিরও পাঁচ মাসের কারাদণ্ড নির্ধারিত হয়েছে। কিন্তু এই বিধান যেন ‘শাস্তি’, নয়। এ যেন তাঁর জীবনের ‘আশীর্বাদ’। তাঁর এই পরিনতির কথা জেনে মেসি-সমর্থকরা মন্তব্য করেছেন, “আরাধ্যকে একবার ছুঁতে পারলে, পৃথিবীর সকল শাস্তি মাথা পেতে নেব..”! হায় রে আবেগ! মেসিকে, মেসি হতে বিশ্বকাপ পেতে হয় না। তাঁর মত ফুটবল অধীশ্বর, জীবনের সকল মুশকিল আসানের কারণ নিমেষে হয়ে উঠতে পারেন।