“বন্ধু বিনে প্রাণ বাঁচে না..” গানটিকে কেন্দ্র করে, বড়াই করে বন্ধু দিবসের দিন আমরা উদযাপন করলেও,গানটি যে আক্ষরিক অর্থে কী পরিমাণ সত্যতা বহন করে, এবং সে সত্য যে কী যন্ত্রণাদায়ক, তার প্রমাণ পেল উত্তরপ্রদেশ। “বন্ধু”, এই দুই অক্ষরের শব্দটি বাহ্যিক ভাবে ক্ষুদ্র হলেও, এই শব্দবন্ধ ধারণ করে আছে এক অসীম অনুভবের বিশ্বকে।

উত্তরপ্রদেশের এক দিন আনা দিন খাওয়া যুবক, আরিফ মোহাম্মদ। বছর কয়েক আগে চাষ করতে বেরিয়ে খুঁজে পান এক আহত সারসকে। ব্যাস! এক ট্র্যাজিক রূপকথার সূচনার সন্ধিক্ষণ ঠিক, সেই সময়েই আবির্ভূত হয়েছিল দুই অসম গোত্রীয় প্রাণীর জীবনে। আহত সারসকে উদ্ধার করে, তাঁর সেবা শুশ্রসায় নিজেকে নিবেদিত করেন আরিফ। সারসটি সুস্থ হতে, আরিফ চেষ্টা করেন তাঁকে তাঁর আপন জগতে ফিরিয়ে দিতে। কিন্তু হায়, সেই সারসের যে প্রাণ হয়ে ওঠেন এই মনুষ্য বন্ধু! তাঁকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবতে পারেন না অবলা প্রাণীটি। আঁকড়ে ধরেন আরিফকে। আরিফও তাই। প্রাণের বন্ধুকে কাছছাড়া করা, যেন দুঃস্বপ্ন হয়ে ওঠে তাঁর কাছে।
কিন্তু, ভালো সময় যে ক্ষণস্থায়ী! নেমে আসে বিপদ। জানাজানি হতে উত্তরপ্রদেশের বনদপ্তর পৌঁছন আরিফের বাড়িতে। বন্য প্রাণীকে নিজের অধীনে রাখার ‘অপরাধ’ এ পুলিশি হেফাজত হয়ে ওঠে সাময়িকভাবে তাঁর ভবিতব্য। অপরদিকে পাখিটিকে রাখা হয় বন্য প্রাণী সংরক্ষণে। আরিফ জানান, তিনি চেষ্টা করেছিলেন পাখিটিকে তাঁর আসল জগতে ফিরিয়ে দিতে। কিন্তু পাখিটি দিন শেষে ফিরে আসতেন আরিফের ঘরে।

আরিফের এই অবলা ‘বন্ধু’টি স্থান পায় সংরক্ষণাগারে। কিন্তু প্রিয় আরিফের থেকে দূরে থেকে, খাবারের একটি কণাও মুখে কাটে না সে। শুরু হয় তাঁর বিশেষ পরিচর্যা। কিন্তু, কোথায় কী! ধীরে ধীরে সারসটি বন্ধু বিচ্ছেদে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। চিকিৎসকের অধীনে থাকলেও, শেষ পর্যন্ত জীবনের কাছে হার মানতে হয় তাকে। চিরতরে বিদায় নেয় আরিফের এই সারস ‘বন্ধু’।

সারসটির মৃত্যুতে উত্তাল হয়ে উঠেছে বিশ্ব। পশুপ্রেমীরা বলছেন স্বার্থান্বেষী মানুষ নিজেদের স্বার্থের জন্য প্রাণী হত্যা করলেন। যাঁরা একে অপরকে চাইত, তাঁদেরকে এইভাবে সঙ্গ বিচ্ছেদ ঘটিয়ে মৃত্যু প্রদান কখনও মঙ্গলজনক কার্যের উদ্যেশ্যে নয়। কিন্তু এইসব তো যুক্তির কথা। আবেগের দাম কে দেবে? কী হবে আরিফের? মানুষ নয়, মানুষের চেয়ে বুদ্ধিমত্তায় নিকৃষ্ট প্রজাতি হিসেবে যে অবলা শ্রেণীকে আমরা গণ্য করি, সেখান থেকেই এক প্রজাতির দূত হয়ে সারসটি প্রমাণ করল, বন্ধুত্বের সোনার কাঠির ছোঁয়া পেলে, বাস্তবেও এমন রূপকথা ঘটে যায়! কিন্তু এই অসহিষ্ণু বিশ্ব রূপকথাকে যাপন করতে চায় না, তাঁরা বাস্তবের রক্তাক্ত ভূমিতেই সকল সোনার কাঠিকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দেয়। পড়ে থাকে ‘এটা গল্প হলেও পারত’ এর মত কিছু অনুভবের আভাসটুকু!