‘এ বুকে তবু বারো মাস, ভালোবাসারই মরশুম..’ তো বটেই, তবে ক্যালেন্ডারে দাগানো তারিখগুলি হিসেবে এই মুহূর্তে যে কোনও ‘শহর জুড়ে যেন, প্রেমের মরশুম…’। তার কারণ, এখন ফেব্রুয়ারি মাস। ফেব্রুয়ারি মানেই, বাংলার ঋতুরাজ বসন্তের আগমনের সময়। শীতের রুক্ষতায় যে পাতা ঝরে গেছে, সেই শূন্যতার আবার নব রূপে, নব পল্লবে সেজে ওঠার পালা। প্রকৃতির এই সব কিছু নতুন করে শুরু করার ছন্দে, মনও তার সঙ্গে তাল মেলায়। মনেরও তখন নতুন করে গড়ার সময় হয়। আর এই বাসন্তী আমেজে নতুন করে গড়া মানেই, ভালোবেসে ভালো থাকা। আসলে ভালোবাসা এমনই, একই মানুষের প্রতিই নতুন করে অনুভব তৈরি হয়ে ওঠে। অর্থাৎ ঠিক যেমন ‘তোমায় নতুন করে পাবো বলে হারাই ক্ষণে ক্ষণ…’। ভালোবাসতে আলাদা দিন সত্যিই লাগে না। কিন্তু ভালোবাসার মত এক জোরালো অনুভবকে উদযাপন না করলে যে, জনমানসে ছড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে যে ভালোবাসা দিবস পালন করা হয়, তা মোটেই অমূলক নয়। অন্তত এই কটাদিন একটু ক্যালেন্ডারের হিসেব মতই যদি আরও প্রবল ভাবে সঙ্গী বা সঙ্গিনীর ভালো থাকার উদ্দ্যেশে উদ্যত হন, তাহলে ক্ষতি কীসে? আবার এটাও মাথায় রাখতে হবে, অনেকেই চান প্রিয়তম বা প্রিয়তমাকে মনের মত উপহার দিয়ে ভরিয়ে রাখতে। কিন্তু ভেবে পান না কি কি দেওয়া যেতে পারে। সেই কারণে আজকের এই বিশেষ পর্বে রইল আসন্ন প্রেম দিবস উপলক্ষ্যে উপহারের কিছু তালিকা।
১)ফুলের তোড়া – ফুলের মত মিষ্টি জিনিস উপহারে দেওয়া মানে এক অনন্য তৃপ্তি লাভ দু তরফের ক্ষেত্রেই। আর প্রেম নিবেদনে ফুল প্রদান, তা যেন আরই গল্প জমাট বাঁধার দোসর। রঙ বেরঙের গোলাপের তোড়া একত্রে দিতেই পারেন প্রিয়তম বা প্রিয়তমাকে। গোলাপ ছাড়াও অন্য ফুলকেও করতে পারেন আপনার উপহারের উপজীব্য। রঙিন রডোডেনড্রন, বগেনভলিয়া, অর্কিডের মত পাহাড়ি ফুলও গোছা সমেত উপহার দিতে পারেন।
২) গাছের চারা – অনেকেই আছেন, যাঁরা ‘গার্ডেনিং’ করতে অর্থাৎ একফালি বারান্দা বা নিজের প্রিয় ছোট্ট ছাদে বাগানের মত সবুজের ছোঁয়া রাখতে ভালোবাসেন। আপনার প্রিয়তম বা প্রিয়তমা যদি এই স্বভাবের মানুষ হন, অবশ্যই তাঁকে ছোট্ট কোনও গাছের চারা উপহার দিতে পারেন। গোলাপ চারা, মানি প্ল্যান্ট থেকে শুরু করে অ্যালোভেরা এমনকি বাঁশ গাছের চারাও উপহার দিতে পারেন। বাঁশ গাছ সুখ ও সমৃদ্ধির প্রতীক। নামে প্রাথমিক ভাবে অবাক লাগলেও, এই চারা বেশ ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে মানুষের মনে। আরও ভালো হয় যদি পাথরকুঁচি গাছের চারা উপহার করতে পারেন। কারণ এই গাছের পাতা ঝরে গেলেও পুনরায় নিজে থেকেই পাতার জন্ম হয়ে যেতে থাকে অনেককাল পর্যন্ত। ফলে সম্পর্কের দীর্ঘ জীবন লাভের জন্য এই চারা বেশ গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করবে।
৩) চকলেট বাক্স – চকলেট ভালোবাসেন না এমন মানুষ বোধ হয় খুব কমই আছেন। আর সেই সুযোগ মত রকম ফের চকলেট এবং তার রকমফের আবরণ বা বাক্স বেশ দৃষ্টি আকর্ষন করে। আপনার মনের মানুষটি যদি চকলেট প্রেমী হন, তাহলে তাঁকে অনায়াসে উপহারে দিতে পারেন চকলেটের সম্ভার। এমনকি ফুলের তোড়ার মত অনেকগুলি চকলেটকে একত্রে সজ্জিত করে, উপহার প্রদান করতে পারেন আপনার প্রেমিক বা প্রেমিকার উদ্যেশ্যে।
৪) ঘড়ি – ঘড়ি পরার প্রবণতাও এই বেশ সক্রিয় থাকে অনেক মানুষের মধ্যে। এমনকি ব্যাক্তি বিশেষে তাঁদের ঘড়ি নিয়ে বিভিন্ন রকম চাহিদা থাকে। আপনি আপনার প্রিয়জনকে তাঁর পছন্দ মত ঘড়ি উপহার করতে পারেন। এমনকি একটি ‘কাপল সেট’ কিনে দুজনে একসঙ্গে একে অপরের প্রতি প্রেম নিবেদন করে বলতেই পারেন ‘তোর ঘড়ি জুড়ে আমার সময় থাক…’।
৫) শো পিস – ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য শো পিস বেশ গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। প্রেম দিবস উপলক্ষে এই শো পিসের ধরনের চাহিদা বেড়ে যায়। দম্পতির শো পিস থেকে কিউপিড, বিভিন্ন রকম শো পিসের চল লক্ষ্য করা যায় দোকান জুড়ে। আপনাদের পছন্দ মত সেখান থেকেই একটি নির্বাচন করে উপহার দেওয়া যেতে পারে।
৬) আংটি – এখন দম্পতিদের জন্য আংটির ক্ষেত্রেও বিভিন্ন ধরনের ‘কাপল সেট’ বেশ ট্রেন্ডিং! রাজা রানীর মুকুট থেকে শুরু করে হৃদয়ের আকৃতির বিভিন্ন রকমের আংটি উপহার দেওয়া যায়। অনলাইনেও পেতে পারেন এই সুবিধা। আপনার পছন্দ মত ডিসাইন বেছে নিয়ে, উপহার দিয়ে চমকে দিন অপরদিকের মানুষটিকে।
৭) একটি গোটা দিন তাঁর উদ্যেশ্যে – হয়ত আপনার বিবাহিত নন, প্রিয়তম বা প্রিয়তমাকে কি উপহার দেবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। ক্ষতি নেই, আপনার সঙ্গটুকুই তাঁকে উপহার দিন আসন্ন প্রেম দিবসে। হয় কোনও নিভৃতে অবসর যাপন, কিংবা গঙ্গার বুকে নৌকা বিহারে যুগলে রোমাঞ্চকর মুহূর্তের ভাগীদার হওয়া। একসঙ্গে হাতে হাত রেখে সূর্যাস্ত দেখে আগামীর শপথ নেওয়া… একেবারে নিজেদের মত করে গুছিয়ে তুলুন এই প্রেম দিবসকে।