“ইয়াদ আয়েঙ্গে ইয়ে পল..” জীবনের প্রতিটা “পল” এই থেকে গেছেন কেকে

আট থেকে আশি, যেকোনও ভারতবাসীর কাছেই ৩১ মে দিনটি অভিশপ্ত। কারণ, ঠিক একটা বছর আগেই, কলকাতার বুকে এক উত্তপ্ত সন্ধ্যা কেড়ে নিয়েছিল ৫৩ বছর বয়সী তরতাজা মানুষটির প্রাণ। কেকে, অর্থাৎ কৃষ্ণকুমার কুন্নথ (Krishnakumar Kunnath)। ভারতীয় সঙ্গীত জগতের এই উজ্জ্বল নক্ষত্রের পতন হয়, ঠিক একটি বছর আগে। কেটে গেল একটি বছর, কিন্তু কে.কে থেকে গেলেন প্রত্যেক সঙ্গীত প্রেমী তথা সকল সহিষ্ণু মানুষের হৃদয়ে।

তিনি ছিলেন ঠিক যেন বাড়ির ছেলের মতই, কারণ তাঁর আসল নামের চাইতে, নামের সংক্ষিপ্ত সংস্করণটিই তাঁকে পরিচিতি দেয় গান-প্রেমী মানুষদের মাঝে। তাঁর জন্ম হয়েছিল ১৯৬৮ সালের ২৩ আগস্ট। দিল্লির এক হিন্দু মালায়ালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আজকের এই সঙ্গীত জগতের অন্যতম বিস্মযটি। তাঁর পড়াশুনায় হাতে খড়ি হয় দিল্লির মাউন্ট সেন্ট মেরী স্কুলে। পরবর্তীতে দিল্লির কিরোরিমল কলেজ থেকে স্নাতক পাশ করেন এবং স্নাতকোত্তর পাশ করেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

বলিউডে এক নাগাড়ে যিনি একচ্ছত্র রাজত্বের অধিকারী ছিলেন, বলিউডে প্রবেশের পথ তাঁর কাছে মোটেই সুষ্ঠু ছিল না। মুখোমুখি হতে হয়েছে একাধিক সংগ্রামের। বিজ্ঞাপনের হয়ে জিঙ্গেল গাওয়া দিয়েই শুরু হয় কেকের সঙ্গীত সফর। কিন্তু রূপকথা যে সত্যি হতেই হত তাঁর জীবনে! ১৯৯৯ সাল ছিল কেকের জীবনে সোনার কাঠির ছোঁয়া। সোনি মিউজিকের একটি গানের জন্য খোঁজা হচ্ছিল নবাগত পুরুষ কণ্ঠ। যথা সময়ে অডিশন দেন কেকে। ব্যাস… স্বপ্নের যাত্রায় নাম লিখিয়ে নেন “ইয়ারো দোস্তি” খ্যাত গায়ক। শুরু হয় তাঁর জীবনের সবচেয়ে রঙিন অধ্যায়, সঙ্গে যেকোনও সঙ্গীতপ্রেমী ভারতবাসীর।
“পল”, “ইয়ারো দোস্তি”, “তারাপ তারাপ” “জিন্দেগি দো পল কী”, “আলবিদা”, “দিল ইবাদত” “আঁখো মে তেরি” ইত্যাদি নানা রকম রঙিন ফুল দিয়ে গাঁথতে থাকেন সুরের মালা। নতুন প্রেমে পড়া হোক, অথবা প্রথম সংস্পর্শের অনুভূতি, এমনকী বিচ্ছেদ যন্ত্রণাতেও দোসর হয়ে ওঠে কেকের গান।

৩১ মে, ২০২২। হয়ত এটি খোদ তিলোত্তমার বুকেরই এক কলঙ্কিত দিন। কলকাতার এক কলেজের অনুষ্ঠানে গান গাইবেন বলে শহরে আসেন কেকে। নজরুল মঞ্চে ছিল তাঁর শো। শো চলাকালীন প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন কেকে। আর তারপর……
নাহ্, কেকের শরীরই হয়ত এই জগতের মায়া ত্যাগ করেছে মাত্র, কিন্তু কেকে রয়ে গেছেন সকলের হৃদয়ে। তাঁর গান আগের মতই মন খারাপে ভালো থাকার ওষুধ হয়, আগের মতই জীবন যুদ্ধে উজ্জীবিত হওয়ার মন্ত্র হয়। তাঁর কথা মতই, তাঁর প্রত্যেকটা ‘পল’, ‘ইয়াদ আয়েঙ্গে……’ প্রতি মুহূর্তে।

Scroll to Top