‘এসো মা লক্ষী, বসো ঘরে, আমারে ঘরে থাকো আলো করে…’
আজ কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো! সংস্কৃত শব্দ ‘কো জাগর’, বা ‘কো জাগতী’ অর্থাৎ, ‘কে জাগো রে?’ এই শব্দবন্ধটি হল হিন্দুদের আবেগ। আশ্বিন মাসের শেষ পূর্ণিমায় বিনিদ্র রাত্রি যাপন করে, চঞ্চলা দেবী লক্ষ্মীর আগমনের প্রহর গোনেন আপামর হিন্দু জাতি। সমগ্র রাত্রি জাগরিত অবস্থায় যাপন করা হয় বলে, এই লক্ষ্মী পুজোকে ‘কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো’ বলা হয়ে থাকে। দেবী লক্ষ্মী যে বড়ই চঞ্চল, তাই তাঁকে শান্তভাবে বাড়িতে অধিষ্ঠান করানোই যে চান তাঁর ভক্তরা। দেবীর অধিষ্ঠানে যে তাঁদের সংসারেও আসবে সুখ এবং সমৃদ্ধি।
কথিত আছে, বৈকুণ্ঠে হরি এবং হরিপ্রিয়া যখন সুখ আলাপনে মগ্ন ছিলেন, তখনই সহসা প্রবেশ ঘটে নারদ মুনির। তিনি দেবী লক্ষ্মীকে জানান, তাঁর এই চঞ্চল স্বভাবের জন্য, মর্ত্যে সুখ বা সমৃদ্ধি রাজ করতে পারছে না। দুর্ভিক্ষয় এবং দারিদ্রতায় প্রাণ যাচ্ছে মর্ত্যবাসীর। তাই বিষ্ণুজায়া যেন দ্রুত মর্ত্যে গমন করেন, এবং তাঁর সন্তানদের রক্ষা করেন। লক্ষ্মী প্রথমদিকে মর্ত্যবাসীর সহায় না হলেও, স্বামীর আবেদনে তিনি রাজি হন, এবং বাহন পেঁচককে নিয়ে মর্ত্যের উদ্যেশ্যে যাত্রা করেন।
হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, আশ্বিন মাসের এই শেষ পূর্ণিমায়, চঞ্চলা দেবী লক্ষ্মী, বৈকুণ্ঠ থেকে পৃথিবীতে উপনীত হন। তিনি যেন স্থির ভাবে সকলের ঘরে ঘরে বিরাজ করেন, সেই মঙ্গলকামনায় রাত জাগেন ভক্তগণ। করেন দেবীর আরাধনা। ত্রুটি রাখেন না কোনও রকম আয়োজনে।
‘নিশীথে বরদা লক্ষ্মী জাগরত্তীতিভাষিনী। তস্মৈ বিত্তং অক্ষৈঃ ক্রীড়াং করোতি যঃ।।’
রাত জেগে দেবীর আগমনের অপেক্ষার জন্য, এমনকি হিন্দু ঘরে অক্ষক্রীড়া বা পাশা খেলার প্রচলনও আছে। হিন্দুদের বিশ্বাস, রাত জেগে পাশা খেলায় নিযুক্ত থাকলে, বিষ্ণুপ্রিয়া ভক্তদের ধন সম্পত্তি প্রদান করেন।
লক্ষ্মী পুজো মূর্তি ছাড়াও আরও নানান রকম আদলে পূজিত হন ভক্তের কাছে। যেমন ধান ভর্তি ঝুড়ির ওপর কাঠের লম্বা দুটি সিঁদুর কৌটো লালচেলিতে মুড়ে দেবীর রূপ দেওয়া হয়। এই অবয়ব ‘আড়ি লক্ষ্মী’ নামে প্রসিদ্ধ। এছাড়া কলার পেটোর তৈরি নৌকাও এই পুজোর গুরুত্বপূর্ন সামগ্রী। এছাড়াও পটচিত্রেও লক্ষ্মী পুজোর আয়োজন করতে দেখা যায়। বাড়ির গৃহিণীরা পরিবারের মঙ্গলার্থে নিয়োজিত হন এই পুজোয়।
টেকটকি পরিবারের পক্ষ থেকে আপনাদের সকলকে জানাই শুভ কামনা, মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদের সমৃদ্ধি পাক আপনার পারিয়াবারিক সম্পদ।