“ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা,
যমের দুয়ারে পড়লো কাঁটা!!”
আজ ভাতৃদ্বিতীয়া! ভাইবোনের সম্পর্কের এক বিশেষ উৎসব। এই দিনে দিদি বা বোন তার ভাই বা দাদার মঙ্গলকামনায় তাদের কপালে চন্দনের ফোঁটা দিয়ে এই উৎসব পালন করে। এই উৎসব হলো ভাইবোনের সম্পর্কের মেলবন্ধন। এই বাংলায় যা ‘ভাতৃদ্বিতীয়া’ বা ‘ভাইফোঁটা'(Bhai Phonta), উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে তাই হলো ‘ভাইদুজ'(Bhai Dooj)! দক্ষিণ ভারতে তাই আবার ‘যমদ্বিতীয়া'(Jam Dwitiya)! মহারাষ্ট্র ও গুজরাটে ‘ভাইবিজ'(Bhai Beej) আবার নেপালে সেটাই হলো ‘ভাইটিকা'(Bhai Tika)! কিন্ত জানেন কি এই উৎসব পালনের কারণ? আসুন জানা যাক।
‘ভাতৃদ্বিতীয়া’ বা ‘ভাইফোঁটা’ নিয়ে দুটি কাহিনী প্রচলিত। এর মধ্যে একটি হলো শ্রীকৃষ্ণ ও সুভদ্রাকে নিয়ে। কথিত আছে যে, নরকাসুরকে বধ করে শ্রীকৃষ্ণ যখন সুভদ্রার কাছে যান, তখন সুভদ্রা তাঁকে ফুল-চন্দন ও মিষ্টান্ন দিয়ে বরণ করেন। তাই সেইদিন থেকে ওই বিশেষ দিনটিকে ভাই-বোনের মেলবন্ধনের উৎসব ‘ভাইফোঁটা’ নামে পালন করা হয়।
অপর একটি কাহিনীও প্রচলিত আছে। সেটি হলো, স্বয়ং যমরাজকে তাঁর বোন যমুনা এই একইভাবে ফুল-চন্দন ও মিষ্টান্ন দিয়ে বরণ করেন তাঁর দাদাকে যখন তিনি তাঁর বোনের বাড়ি দেখা করতে যান।
ভাইবোনের মেলবন্ধনের সাক্ষী হলো এই উৎসব। সারাবছর ধরে চলা খুনসুটির সম্পর্কে এইদিন যেন বেশি করে মধুর প্রলেপ পরে। তবে এই উৎসবের কিছু নিয়ম আছে। সকালে তাড়াতাড়ি উঠে ভালো করে স্নান করে শুদ্ধ বস্ত্রে ফোঁটা দিতে হয়। ফোঁটা দেবার আগে অবধি উপবাস করতে হয় ভাই ও বোন, উভয়কেই। ফোঁটা দেওয়ার পর্ব মিটলে ভঙ্গন হয় উপবাস। গঙ্গাজল দিয়ে বাটতে হয় চন্দন। ফোঁটার মূল উপকরণ এটিই। বরণডালায় থাকে চন্দন, ধান-দূর্বা, তেল-চিরুনি। ভাই বা দাদার চুল হাতের আঁচড়ে দিতে হয় প্রথমে হাতের আঙুলে একটু তেল নিয়ে। এরপর ছোট ভাইকে দিদি আশীর্বাদ করে ও দাদা আশীর্বাদ করে বোনকে তারপর চন্দনের ফোঁটা দেওয়া হয় কপালে। ফোঁটা দেবার জন্য ব্যবহার হয় বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল।
ভাই বা দাদার মঙ্গলকামনায় যুগের পর যুগ ধরে চলে আসছে এই রীতি। ভালো থাকুক পৃথিবীর সমস্ত ভাই বোনেরা। আরো অটুট হোক এই ‘দুষ্টুমিষ্টি’ সম্পর্ক।