জানেন কেন জনসমাগমের মাঝে মাইক ধরলেই বেড়ে যায় উদ্বেগ? কীই বা এর সমাধান?

আপনার রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে দারুন চর্চা! রীতিমত পরিচিতদের কাছে প্রশংসিত হয় আপনার রবীন্দ্র-সম্পর্কিত লেখা। যথারীতি ২৫ বৈশাখ পাড়ায় আয়োজিত হল রবীন্দ্র সন্ধ্যা। বলা হল, রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে আজ বিশেষ বক্তব্য রাখবেন আপনি! কিন্তু এ কী! এই কথা শুনেই তুমুল বেড়ে গেল আপনার হৃৎ স্পন্দন! মাইক ধরার আগে পর্যন্ত তার জের চলতে থাকে! হয় তীব্র উৎকণ্ঠা! ঘাম পর্যন্ত হতে থাকে দরদরিয়ে! এর ফলে আপনি পরবর্তীকালে মাইক ধরা থেকে বিরতই থাকতে চান! কিন্তু পারিপার্শ্বিকতা আপনাকে চিহ্নিত করে, “আনস্মার্ট” বলে। কিন্তু জানেন, কেন হয় এমনটা?

বিজ্ঞানের ভাষায় এই সমস্যার নাম ‘গ্লসোফোবিয়া’। অধিকাংশ মানুষ এই সমস্যার সম্মুখীন হন। এর পেছনে অনেকগুলি কারণ নির্ভর করে। যেমন, ছোট থেকে আপনাকে কোণঠাসা করে রাখা, অথবা আপনার কথার সঠিক মর্যাদা না দেওয়া। শৈশবের বিভিন্ন অবহেলার ফলে পরবর্তীতে আপনি নিজের দিকে ‘লাইম লাইট’ তাক করতে ভয় পান। উৎকণ্ঠা বোধ করেন ‘ফোকাস’ হতে। কিন্তু বিজ্ঞানে এর উৎস কী?

গ্লসোফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে যখন কোথাও কোনও উপস্থাপনা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়, তখন তাঁদের মধ্যে এক উচাটনতার সৃষ্টি হয়। সেই সময় মস্তিষ্কে দ্রুত অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণের সঙ্গে স্টেরয়েড ক্ষরণ শুরু হয়। এর ফলে রক্তে তখন শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। যার কারণে রক্তচাপ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়, বমি বমি ভাবের সৃষ্টি হয়, মাথা পর্যন্ত ঘুরতে থাকে।

কিন্তু কীভাবে প্রতিকার পাবেন এই জটিলতা থেকে?

এর জন্য অনেকগুলি দিক মাথায় রাখতে হবে।

  • শরীর চর্চা – শরীর চর্চা আপনার জীবনে যেকোনও সমস্যার মূল নিরাময়ক। মূলত পেশী শিথিল করার ব্যায়ামগুলি আপনাকে রক্ষা করতে পারে গ্লসোফোবিয়া থেকে।
  • জলপান – যেকোনও সমস্যার সমাধানের একমাত্র মূল মন্ত্র জলপান। নিয়মিত এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পানে আপনার শরীর হাইড্রেটেড থাকবে। সকল ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক ভাবে ঘটবে। কোনও অনিয়ম ঘটবে না শরীরে।
  • আত্মবিশ্বাস – সকলের কাছে মধ্যমণি হওয়ার জন্য অবশ্যই আপনাকে আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। মনে করতে হবে আপনার মত সেই বিষয় সম্পর্কে আর কেউ অবগত নয়। তাই নিজের ওপর বিশ্বাস রেখে মন্তব্য পোষণ করতে হবে। চাইলে বারবার অনুশীলন করুন।
  • ফলের আশা না করা – আপনার বক্তব্য ভালোও হতে পারে, ভালো নাও হতে পারে। সেই নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তিত হবেন না। বরং ভালো না হলে শুধরানোর মানসিকতা রাখবেন। সবকিছুরই ভালো খারাপ দিক হয়, আর মানুষ মাত্রই ভুল হয়।
  • রিডিং পড়া – বাড়িতে নিজের ব্যাক্তিগত যাপনের মাঝে রিডিং পড়ার অভ্যাস করতে পারেন।
  • ধ্যান – ধ্যান অন্যতম নিরাময়ক এই ক্ষেত্রে। নিজেকে সময় দিন। একান্তে নিজেকে বোঝান আপনি কম নন বা পিছিয়ে নেই। আপনিও সকলের মাঝে সেরা।
  • মাইক ছাড়া – দরকার হলে মাইক ছাড়া আলোচনার মত করে হলেও আপনার বক্তব্য রাখতে পারেন। কারণ আমাদের উদ্বেগের অনেকসময় নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠে এই যন্ত্রগুলি।

এই কটি দিকে মনোনিবেশ করলেই, ধীরে ধীরে অনেকটা ভয়মুক্ত হবেন আপনিও। তাই মনকে বলুন, “আমি ভয় করব না..”! তখন জয় আপনার নিশ্চিত।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *