প্রজাতন্ত্র দিবসের গুরুত্ব জানেন? না জেনে থাকলে এখনই জেনে নিন।


আজ প্রজাতন্ত্র দিবস (Republic Day), আবার সাথে সরস্বতী পুজোও! সরস্বতী পুজোর ইতিকথা আগের দিন আলোচনা করেছিলাম, আজ করবো প্রজাতন্ত্র দিবস (Republic Day) নিয়ে। আপনি কি জানেন যে এই দিনটি কেন পালন করা হয় বা এই দিনের গুরুত্ব কী! আসুন জেনে নেওয়া যাক।


১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই আগস্ট আমাদের ভারত স্বাধীনতা লাভ করেছিল। সেই দিনটিকে আমরা স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করি। তবে সেই সময়, আমাদের দেশের নিজস্ব কোনো সংবিধান ছিলো না। ব্রিটিশ সরকারের ১৯৩৫ সালের ‘গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া অ্যাক্ট’ (Government of India Act)- এর সংশোধিত সংস্করণ অনুযায়ী স্বাধীন ভারত শাসন করা হতো। কিন্তু স্বাধীন ভারতের নিজস্ব কোনো সংবিধান না থাকলে চলে? সংবিধানের জন্য এক সভা ডাকা হয়। সংবিধান সভার সদস্যদের নির্বাচন করা হয়। ড. বি আর আম্বেদকর, জহরলাল নেহেরু, ড.রাজেন্দ্র প্রসাদ, সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল, মৌলানা আবুল কালাম আজাদদের মত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে সংবিধান সভা গঠিত হয়।


১৯৪৭ সালের ২৯ শে আগস্ট আম্বেদকরের নেতৃত্বে ভারতে স্থায়ী সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে একটি খসড়া কমিটি গড়ে তোলা হয়। এই একই বছরের ৪ঠা নভেম্বর খসড়া কমিটি সংবিধান সভায় ভারতীয় সংবিধানের খসড়া জমা দেয়। এরপরে দুবছরেরও বেশি সময় ধরে জনগণের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা ও নানা চিন্তাভাবনার পরে প্রস্তাবিত সংবিধানে কিছু সংশোধন, সংযোজন ও পরিবর্তন আনা হয়। ১৯৪৯ সালের ২৬ শে নভেম্বর শেষ অবধি সংবিধান সভায় ভারতের সংবিধানের খসড়া গৃহীত হয়।


সভার ৩০৮ জন সদস্য ১৯৫০ সালের ২৪ শে জানুয়ারি সংবিধানের দুটি হস্তলিখিত কপিতে সই করেন। একটি ছিল ইংরেজিতে ও অন্যটি ছিল হিন্দিতে। দুদিন পরে ২৬ শে জানুয়ারি ভারতীয় সংবিধান কার্যকর হয়। অনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ভারত! ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ হয়েছিলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি। এছাড়াও অন্য একটি ইতিহাসও রয়েছে। কি সেই ইতিহাস? জানা যাক!


১৯২৯ সালের ডিসেম্বর মাসে লাহোরে জহরলাল নেহেরুর নেতৃত্বে কংগ্রেস অধিবেশনের ডাক দেওয়া হয়। এই অধিবেশনে একটি প্রস্তাব পেশ করা হয়, সেটি হল-১৯৩০ হলে ২৬ শে জানুয়ারির মধ্যে যদি ব্রিটিশ সরকার ভারতকে ডোমিনিয়ানের মর্যাদা না দেয়, তাহলে ভারতকে পূর্ণ স্বরাজ ঘোষণা করা হবে। সেই সময়সীমার মধ্যে ব্রিটিশ সরকার ভারতকে ডোমিনিয়ানের মর্যাদা দেয়নি! এর ফলে কংগ্রেস, ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা লাভের ঘোষণা করে সক্রিয় আন্দোলন শুরু করে। ১৯৩০ সালের ২৬ শে জানুয়ারির গুরুত্ব বজায় রাখতেই ১৯৫০ সালে এদিনই ভারতের সংবিধান সংগৃহীত হয় এবং এই গুরুত্বপূর্ণ দিনটি গণতন্ত্র দিবস হিসেবে অথবা প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে পালিত হতে থাকে।
এতো গেল ইতিহাসের কথা, এছাড়া এই দিনটিকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার জন্য প্রতি বছর দেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এতে অংশ নেয় বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ থেকে শুরু করে নেতা মন্ত্রী, নৌ বাহিনী, দেশের সমস্ত সেনা ইত্যাদি সকলে। দেখতে দেখতে এইভাবেই আজ আমরা ৭৪ তম প্রজাতন্ত্র দিবস পালন করব। বন্দে মাতরম! জয় হিন্দ!

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *