কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী: আজ দেশ জুড়ে পালন করা হচ্ছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মোৎসব

‘অধরম মধুরম, বদনং মধুরম, নয়নং মধুরম, হসিতং মধুরম…’ তাঁর মধুর হাসি হোক অথবা অনিন্দ্যকান্তি রূপ, সেই মুগ্ধতায় আবদ্ধ হননি এমন মানুষ মেলা ভার। দুষ্টু মিষ্টি বাল্যলীলার মুহুর্ত হোক কিংবা জীবনে চলার পথের দর্শন, হিন্দু পুরানে তাঁর স্থান এককথায় অদ্বিতীয়। তিনি হলেন নন্দদুলাল ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। আজ দেশ জুড়ে পালিত হবে তাঁর জন্মতিথি, অর্থাৎ জন্মাষ্টমী। সেই উপলক্ষে জেনে নেওয়া যাক এই পুণ্যতিথিতে, শ্রীকৃষ্ণের প্রাথমিক জীবনের নানা রকম ঘটনা।

শ্রীকৃষ্ণের জন্ম

দুষ্টের দমন করতে, মর্ত্যলোকে আবির্ভাব ঘটে, সৃষ্টিকর্তা বিষ্ণুর অষ্টম অবতার, শ্রীকৃষ্ণের। তাঁর পিতা-মাতা অর্থাৎ বসুদেব এবং দেবকীর বিবাহলগ্নে, কৃষ্ণের স্বৈরাচারী শাসক মামা কংসকে উৎসর্গ করে একটি দৈববানী সংঘটিত হয়। দৈববানীতে বলা হয়, কংসের সদ্যবিবাহিত ভগিনী দেবকীর অষ্টম গর্ভজাত সন্তানই হবেন কংসহন্তারক। এই দৈববানী কংসকে আরও অপরাধপ্রবণ করে তোলে। নিজের পিতা উগ্রসেনকে তো বটেই, সঙ্গে বন্দী করেন ভগিনী ও ভগিনীপতি বসুদেবকে। কারাগারে পরপর সাতটি সন্তান কংসের দ্বারা হত্যা হওয়ার পর, দেবকীর গর্ভে যখন শ্রীকৃষ্ণ জন্ম নেন, তখন বিবিধপ্রকার দৈব সহায়তায়, বসুদেব গোকুলে, তাঁর মিত্র নন্দের বাড়ি কৃষ্ণকে দিয়ে আসেন। সেখানেই নন্দ এবং যশোদার কাছে বড় হতে থাকেন কৃষ্ণ।

পুতানা বধ

কংস জানতে পারেন, তাঁর ‘কাল’ গোকুলে বড় হচ্ছে। কৃষ্ণকে বধ করার জন্য তিনি পুতানা রাক্ষুসীর সহায় হন। পুতানা নিজের স্তনবৃন্তে বিষের প্রলেপ দিয়ে, ছদ্মবেশে কৃষ্ণকে হত্যার জন্য স্তন্যপান করাতে উদ্যত হন। কিন্তু কৃষ্ণ যে সৃষ্টির আদি, নিয়তির রচয়িতা যে খোদ তিনিই। তাই পুতানার ষড়যন্ত্র বুঝে, তিনি পুতানার স্তন বৃন্ত দংশন করে দেন।

মুখের ভিতর বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড

একবার দাদা বলরামের সঙ্গে খেলার ছলে, ছোট্ট কৃষ্ণ মুখের ভিতর মাটি পুরে দেন। মা যশোদা তড়িঘড়ি ছুটতে আসেন কৃষ্ণর মুখ থেকে মাটি অপসারণের জন্য। কিন্তু একি! কৃষ্ণ মুখ খুলতেই যে যশোদা হয়ে গেলেন তাজ্জব! মুখের ভিতর যে আস্ত বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড! কৃষ্ণের এই দৈব লীলায় হকচকিয়ে গিয়ে মা যশোদা জ্ঞান হারালেন।

কালিয়ানাগ দমন

কৃষ্ণ তখন মোটামুটি পরিণত বয়সের, যমুনার তীরে কালিয়াদহ নামক এক স্থানে বন্ধুদের সঙ্গে ক্রীড়ারত ছিলেন। অকস্মাৎ তাঁদের খেলার সামগ্রী যমুনায় পতিত হয়। যমুনা-মধ্যে বিপজ্জনক কালিয়া নাগের উপস্থিতির কারণে তাঁর সহচররা সেই সামগ্রী উদ্ধারের জন্য পিছু হটেন। এমনকি কৃষ্ণ অগ্রসর হতে চাইলেও তাঁর মিত্রদের দ্বারা তিনি বাধাপ্রাপ্ত হন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি যমুনার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে, কালিয়া নাগের মাথায় নৃত্য করে তাকে পরাজিত ও স্থানচ্যুত করে ক্রীড়া সামগ্রীটি উদ্ধার করে নিয়ে আসতে সফল হন।

গোবর্ধন লীলা

গোকুলকে বেষ্টন করে আছে গোবর্ধন পর্বত। গোকুলবাসীর ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে সে। বিপদে রক্ষা পাওয়ার সঙ্গে গোকুলবাসী পেয়ে থাকেন এই পাহাড় সংলগ্ন বনানী থেকে নিত্যদিনের বিভিন্ন রকম উপকার। তাই সকলে মিলে ঠিক করলেন এই পাহাড়ের উদ্যেশ্যে পুজো অর্পণ করা হবে। কিন্তু একটি পাহাড়কে পূজা অর্পনে ক্রুদ্ধ হলেন দেবরাজ ইন্দ্র। ঠিক করলেন, গোকুলবাসীকে চরম বিপদে ফেলে প্রমাণ করবেন যে, গোবর্ধন পাহাড় তাঁদের রক্ষা করতে অক্ষম। শুরু করলেন দারুন বর্ষণ। এমন বর্ষণে গোকুলবাসী হয়ে পড়লেন দিকভ্রান্ত। কিন্তু অনাথের নাথ কৃষ্ণ যেখানে, সেখানে বিপদ তো উপলক্ষ মাত্র। বাম হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুলি দিয়ে, তুলে ধরলেন আস্ত গোবর্ধন পাহাড়কে। তার তলায় আশ্রয় পেল সমগ্র গোকুল। জীব-জন্তু, নারী পুরুষ, শিশু বৃদ্ধ থেকে বৃহন্নলা, কে ছিলেন না সেই আশ্রয়ে! সাতদিন টানা বর্ষণের পর, কৃষ্ণের গোবর্ধন লীলার কাছে মাথা নত করলেন দেবরাজ। কৃষ্ণ প্রমাণ করলেন, আত্ম অভিমান পতনের কারণ, এবং মনে প্রেম ও ভক্তি থাকলে সকল অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়।

আজ এই পূণ্যলগ্নে সকল কৃষ্ণপ্রেমীদের জানাই শুভেচ্ছা!

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *