গত ১২ জানুয়ারি, ২০২৩ ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের ইতিহাসে ছিল এক গৌরবময় দিন। সচরাচর ভারতীয় ছবি বলতে সবার আগে আমরা বলিউডকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে এই সকল স্টিরিওটাইপ ধারণাও ভেঙেচুরে যাচ্ছে। শুরু হয়েছে নতুনের জয়গান গাওয়া। নতুন ধারণা, নতুন সৃষ্টি, নতুন কৌশল নিয়ে স্থানীয় ভাষায় ছবিগুলিও সমান পাল্লা দিতে শুরু করেছে বলিউডের সঙ্গে। ফলে কোনও মতেই তারা আর নিজস্ব স্থানে সীমাবদ্ধ থাকছে না। দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে তো পড়ছেই, এমনকি বিশ্ব দরবারে দেশের নাম উজ্জ্বল করে তুলছে। ঠিক যেমন করল দক্ষিণী ছবি ‘আর.আর.আর’ (RRR)।
‘বাহুবলী’ (Bahubali) খ্যাত পরিচালক এস.এস. রাজামৌলী (S.S.Rajamouli) বেশ এক বিশ্বাসযোগ্য নাম এই যুগের সিনেমার ইতিহাসে। কারণ ‘বাহুবলী’ ছবিতেই তিনি তাঁর জাত চিনিয়েছিলেন। বাদ গেল না সাম্প্রতিক ছবি ‘আর.আর.আর’। তিন বছর পর বড় পর্দাতে ফেরা, মোটেই সহজ ছিল না তাঁর জন্য। কারণ ‘বাহুবলী’র আকাশছোঁয়া সাফল্যের পর তাঁর ‘চ্যালেঞ্জ’ ছিল, দেশকে ‘বাহুবলী’ এর তুলনায়ও শক্তিশালী কাজ উপহার দেওয়া। বলা বাহুল্য, তিনি সফল হয়েছেন। তাঁর ছবির জন্য, ছবির গান ‘নাটু নাটু’ (Natu Natu) পেয়েছে আন্তর্জাতিক গোল্ডেন গ্লোবের শিরোপা।
ক্যালেন্ডারের হিসেবে, সাল ১৯২০। ব্রিটিশ দম্পতি মিস্টার এবং মিসেস স্কট, ভারতের আদিলাবাদের গোন্ড উপজাতির এক শিশুকন্যাকে জোর করে তাঁর মায়ের থেকে আলাদা করে তাঁর জীবন বিপদমুখী করে তোলে। শিশুটিকে উদ্ধার করার ভার পড়ে গোণ্ড উপজাতির রক্ষক, ভীমের ওপর। সদলবলে তিনি দিল্লী পৌঁছে যান উদ্ধারকার্য সংঘটিত করতে। অপরদিকে, রামারাজু হলেন এক ভারতীয় পুলিশ অফিসার, যিনি ব্রিটিশের অধীনে কাজ করেন। তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয় ভীম এবং তাঁর দলবলকে বাধা দেওয়ার। তিনি যদি তাঁর কাজে সফল হন, তবে তাঁকে উচ্চপদে নিয়োগ করা হবে। ঘটনাচক্রে, ভীম এবং রামারাজু ছিলেন সু-মিত্র। কিন্তু এই কঠিন পরিস্থিতিতে তৈরি হয় দুজনের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব। স্বৈরাচার ব্রিটিশ রাজের অধীনে থেকে, রামরাজু কি তাঁর আপন দেশের মানুষের প্রতি মানবিক হয়ে উঠবে, নাকি ব্রিটিশেরই ‘কেনা গোলাম’ হয়ে থাকবে, সেই উত্তর পাওয়া গেছিল এস.এস. রাজমৌলি পরিচালিত ‘আর.আর.আর’ ছবিতে। গত বছর মার্চ মাসে মুক্তি পায় এই ছবি। উল্লেখ্য, ছবি মুক্তির সঙ্গেই ‘নাটু নাটু’ গানটিতে মজে ওঠেন আপামর ভারতবাসী। আট থেকে আশি, গানের তালে কোমর দোলাতে কেউই বাকি থাকেননি।
ভীম এবং রামারাজুর চরিত্রে অভিনয় করেন, যথাক্রমে জুনিয়র এনটিআর (Jr NTR) এবং রাম চরণ (Ram Charan)। চলচ্চিত্রটি জুড়ে কেবল ফুটে উঠেছে, স্বৈরাচারী ব্রিটিশের নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য ভারতীয়দের প্রতি নারকীয় অত্যাচারের ছবি। এত রক্তাক্ততার মাঝেও, ‘নাটু নাটু’ গানটি মন ভালো করে তোলে। টেলর সুইফ্ট, লেডি গাগা, রিহানার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই গান ছিনিয়ে নিয়েছে সেরার শিরোপা। উচ্ছ্বসিত সঙ্গীত পরিচালক এম.এম.কিরাভানি (M.M.Keeravaani) পুরস্কৃত হয়ে জানিয়েছেন, এই অবদান তাঁর ভাই, তথা পরিচালক রাজামৌলীর। কারণ তিনি যদি বিশ্বাস না করতেন সঙ্গীত পরিচালককে, তবে তিনি এমন সঙ্গীত পরিচালনা থেকে বিরত থাকতেন। ভারতীয় ছবির এমন সাফল্যের উচ্ছ্বাসে সামিল হয়েছেন সাধারণ মানুষ থেকে তারকা সকলে। শাহরুখ খান, এ.আর.রহমান, এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ‘আর.আর.আর’ ছবির সকল কলাকুশলীদের।