কেন হয়েছিল অকালবোধন? কেই বা কেন করেছিলেন, রইল বিস্তারিত তথ্য

দুর্গা পুজো, বাঙালির জিয়নকাঠি। এই জীবনদায়ী উৎসবের জন্য বাঙালি অপেক্ষা করে থাকেন প্রায় গোটা একটা বছর।
দুর্গা পুজোর ইতিহাস নিয়ে রয়েছে নানা মুনির নানা মত। নির্দিষ্ট ভাবে এই পুজোর উৎপত্তি সম্পর্কে সেভাবে জানা যায় না। তবে পুরাণে অযোধ্যার যুবরাজ রাম এবং লঙ্কাধিপতি রাবণের যুদ্ধের আগে দুর্গা পুজো নিয়ে একটি বিশেষ গল্প প্রচলিত আছে। যেটি সর্বজনের কাছে ‘অকাল বোধন’ নামে প্রসিদ্ধ।
মূলত আশ্বিন বা চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে দুর্গা পূজা সংঘটিত করা হয়। যদিও শাস্ত্র বা তন্ত্রমতে সকল সময়ই দুর্গাপূজার সময়। এক বছরে প্রধানত চারটি নবরাত্রি আসে। আবার এই চার নবরাত্রির মধ্যে দুটি গুপ্ত নবরাত্রি হয়ে থাকে। মা দুর্গা এই চারটি নবরাত্রিতেই পুজিত হন। প্রসঙ্গত, আশ্বিনের নবরাত্রি পুজোটিই আমাদের অতি প্রিয়, এবং কাছের শারদীয়া পুজো এবং বসন্তের নবরাত্রির দুর্গা পুজোকে বাসন্তী দুর্গাপূজা বলা হয়।
আর এই শারদীয়া দুর্গাপূজাই আবার “অকালবোধন” নামেও খ্যাত। ‘অকাল’ এবং ‘বোধন’ সংস্কৃত শব্দ, যা বাংলা ভাষায় তৎসম শব্দ হিসেবে গৃহীত হয়েছে। অকাল শব্দের অর্থ, শুভকর্মের অযোগ্য বা অনুপযুক্ত সময়। এবং বোধন অর্থে জাগরণ। পুরাণমতে, এই সময়ে মা দুর্গা নিদ্রিত থাকেন।
কালিকা পুরাণ ও বৃহদ্ধর্ম পুরাণ অনুসারে, কৃত্তিবাস রামায়ণের অনুবাদে এই পুজোর উল্লেখ করেন। বসন্তকালে দেবীর পূজায় ব্রতী থেকে লঙ্কারাজ রাবণ, দেবীর আশীর্বাদ লাভ করেন। এই আশির্বাদ অনুযায়ী, দেবী সকল বিপদ থেকে লঙ্কাধিপতিকে রক্ষা করবেন, কিন্তু তিনি যদি কখনও দুর্গা পুজোর মন্ত্র শ্রী শ্রী চন্ডীতে ত্রুটি রাখেন তাহলে সেই মুহূর্তে দেবী তাঁকে পরিত্যাগ করবেন। আশীর্বাদ প্রদানের ফলে অযোধ্যার যুবরাজ রাম, সীতা হরণকারী রাবণকে যুদ্ধে কিছুতেই পরাজিত করতে পারছিলেন না, সকল অস্ত্র যাচ্ছিল বিফলে। উপায় বর্তালেন ব্রহ্মা। শাক্ত ভক্ত রাবণকে পরাজিত করতে, ব্রহ্মাদেবের পরামর্শে রাম, দেবী দুর্গার আরাধনায় উদ্যত হন। কিন্তু শরৎকাল দেব-আরাধনার সঠিক সময় হিসেবে বিবেচ্য হয় না। তাই রাম দেবীকে প্রসন্ন করার জন্য, কোনও দিক দিয়ে পুজোর কমতি রাখলেন না। দেবী দুর্গার বোধন থেকে শুরু করে চণ্ডীপাঠ সমস্তটাই করলেন নিষ্ঠা ভরে। দেবীর দর্শন না পেয়ে, রাম মহানবমীর পূজার প্রাক্কালে হনুমান কর্তৃক ১০৮ টি পদ্মের আয়োজন করেন দেবীর পূজার জন্য। কিন্তু দেবী রামের ভক্তির পরীক্ষা করতে একটি পদ্ম হরণ করেন। রাম সেই পদ্ম খুঁজে না পেয়ে নিজের চোখ উপড়ে নিয়ে দেবীকে পদ্মের পরিবর্তে নিবেদন করতে চান। রামের নিঃস্বার্থ ভক্তি দেখে দেবী প্রসন্ন হয়ে রামকে আশীর্বাদ প্রদান করেন। রাম নবমী তিথিতেই করলেন দুষ্টের দমন। বধ হলেন রাবণ। দশমীতে জ্বলল রাবণের চিতা।
দুষ্টের দমনের প্রেক্ষিতে, শরতকালে রাম দেবী দুর্গার আরাধনায় নিমজ্জিত হয়েছিলেন বলে, এই সময়টিকেই হিন্দু পুরাণ অনুসারে দুর্গা পুজোর আয়োজন করা হয়। সকল বাঙালি মেতে ওঠেন উমার সপরিবারে মর্ত্যে আগমনকে ঘিরে। টেক টকি পরিবারের পক্ষ থেকে জানাই শারদীয়ার আন্তরিক শুভেচ্ছা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *