‘তেরে মাস্ত মাস্ত দো ন্যেয়ন..’ এ তাঁর থেকে চোখ সরাতে পারেননি, এমন সদ্য বয়ঃসন্ধির ঘরে ঢোকা যুবকের সংখ্যা ডুমুরের ফুলের মতই বিরল। ছবি মুক্তির আগেই এই গানে আত্মপ্রকাশ ঘটে, তৎকালীন নবাগতা শত্রুঘ্ন সিনহার (Shatrughan Sinha) তনয়া, সোনাক্ষী সিনহার (Sonakshi Sinha) তীক্ষ্ণ আবেদনময় চাহনি, লাস্যময়ী হাসিতে কুপোকাত হয় দর্শক-মহল। সেই শুরু, তারপর একে একে সাফল্যের সিঁড়ি পেরিয়েছেন দাপটের সঙ্গে ‘আকিরা’। আজ তাঁর ছত্রিশ বছরের জন্মদিন।
১৯৮৭ সালের ২ জুন, বিহারে জন্মগ্রহণ করেন সোনাক্ষী। শত্রুঘ্ন সিনহা এবং পুনম সিনহার তিন সন্তানের মধ্যে তিনিই জ্যেষ্ঠ। আর্য বিদ্যা মন্দিরে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা সম্পাদন করে, শ্রীমতী নাঠিবাই দামোদর ঠাকার্সে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিসাইনিং নিয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
ছোট থেকেই মনের ভাব ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলতে পছন্দ করতেন সোনাক্ষী। তাই স্বপ্ন দেখতেন, বড় হয়ে ডিজাইনার হবেন। ২০০৫ সালে ‘মেরা দিল লেকে দেখো’ (Mera Dil Leke Dekho) ছায়াছবিতে সোনাক্ষীর কস্টিউম ডিজাইনার হিসেবে হাতেখড়ি হয়।
শৈশবে সোনাক্ষীর ওজন মাত্রাতিরিক্ত বেশি হওয়ায়, যথেষ্ট শারীরিক কটূক্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে। শরীরের বাড়তি মেদ ঝরিয়ে, ২০০৮ সালে ল্যাকমের ফ্যাশন শোয়ে সামিল হয়েছেন আত্মবিশ্বাসী এই ‘আসলি সোনা’।
২০১০ নাগাদ বি-টাউনের ‘ভাইজান’ সালমান খানের (Salman Khan) সঙ্গে ‘দাবাং’ (Dabangg) ছবিতে জুড়ি বেঁধে, রূপোলী দুনিয়ায় জমি পোক্ত করার শুভ সূচনা করেন সোনাক্ষী। এরপর আর তাঁকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একে একে ‘রাওডি রাঠোর’, ‘সন অফ সর্দার’, ‘বুলেট রাজা’, ‘আর… রাজকুমার’, ‘হলিডে’ ‘মিশন মঙ্গল’, ‘কলঙ্ক’র মত ছবিতে তাবড় তাবড় অভিনেতাদের বিপরীতে সমান তালে পাল্লা ভারী করে তোলেন।
২০১৩ সালে রণবীর সিংয়ের (Ranveer Singh) বিপরীতে, বাঙালি তন্বী ‘পাখি’র চরিত্রে অভিনয় করেন সোনাক্ষী। এই চরিত্র তাঁর অভিনীত অন্যান্য চরিত্রের তুলনায় বেশ বলিষ্ঠ ছিল। বাঙালি বৈশিষ্ট্যে যে তাঁকে চমৎকার মানিয়েছিল, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। ও হেনরির (O.Henri) ‘দ্য লাস্ট লিফ’ (The Last Leaf) এর অনুকরণে নির্মিত হয়েছিল ছবির চিত্রনাট্য। সোনাক্ষী এবং রণবীরের রসায়ন, দর্শক মহলকে নাড়িয়ে তোলে।
প্রতিবাদী, দাপুটে টিনেজারের চরিত্রে ‘আকিরা’ (Akira) ছবিতে নামভূমিকায় অভিনয় করাও সোনাক্ষীর কাছে ‘চ্যালেঞ্জ’ এর বিষয় ছিল। এই ছবিতে তথাকথিত নায়িকাসুলভ বাউন্ডারি অতিক্রম করে তাঁকে অ্যাকশন দৃশ্যে অভিনয় করতে দেখা গেছে।
যাঁর নামে সোনা, তাঁর মনটিও খাঁটি সোনার অধিকারী। সোনাক্ষী মানুষ হিসেবেও অদ্বিতীয়া। রাস্তার অবলা জীবগুলির জন্য তিনি স্বয়ং ‘PETA’ র (People for the Ethical Treatment of Animals Nonprofit organization) সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। গৃহহীন বা অসুস্থ সারমেয় বা মার্জারদের উপযুক্ত ব্যবস্থা করে দেয় এই সংস্থা। সোনাক্ষী নিজে পশুপ্রেমী বলে, তাঁর সাধ্যমত কোন পশু যাতে অবহেলায় না থাকে, সে বিষয়ে তিনি বরাবর সচেতন থাকেন।