‘ধনতেরাস’ (Dhanteras) এর নেপথ্যে আছে এক পৌরাণিক কাহিনী। জানুন সেই কাহিনী….

কার্তিক কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশ তিথিতে ‘ধনতেরাস’ (Dhanteras) পালিত হয়। এটিই ‘দীপাবলির’ (Diwali) শুভারম্ভ বলে ধরা হয়। ধনতেরাসের (Dhanteras) দিনে অনেক বাড়িতেই লক্ষীপুজো (Laxmi puja) হয়। সাধারণত স্বামী সন্তানের সুস্বাস্থ্য, সমৃদ্ধি ও পরিবারের সুখের জন্য এই উৎসব (Festival) পালিত হয়। কিন্তু জানেন কি যে এই ‘ধনতেরাস’ (Dhanteras) এর পেছনে আছে এক বহু প্রাচীন কাহিনী? আসুন বিশদে জেনে নেওয়া যাক….
প্রাচীন সময়ে ‘হিমা’ নামক এক ন্যায়পরায়ণ ও দয়ালু রাজা রাজত্ব করতেন। নিজের রাজ্যের সমস্ত প্রজাদের সবসময় নিজের পরিবারের সদস্য ভেবে সুখে-দুঃখে পাশে দাঁড়াতেন। তাঁর একটিমাত্র পুত্র ছিল। অনেক যত্নে ও আদরে নিজের পুত্রকে বড়ো করে তুলছিলেন রাজা। সব ঠিকঠাকই চলছিলো কিন্তু একদিন হঠাৎ বিপদের শঙ্কা দেখা দিলো রাজার ঘরে! জ্যোতিষীরা (Astrologer) গণনা করে জানালেন যে, মাত্র ষোলো বছর বয়সে সাপের কামড়ে রাজার পুত্র প্রাণ হারাবে! এই কথা শুনে রাজা ভেঙ্গে পড়লেন শোকে। নিজের একমাত্ৰ সন্তানের প্রাণরক্ষার জন্য উদ্ভ্রান্তের মতোন চারিদিকে উপায় খুঁজতে থাকলেন। এমন সময় তাঁর সাথে দেখা হলো এক প্রসিদ্ধ জ্যোতিষীর (Astrologer), যাঁর পরামর্শে রাজা নিজের পুত্রের বিবাহ দিলেন এক কন্যার সঙ্গে। বিবাহের পরে, বেশ কয়েকবছর সুখে-শান্তিতে তাঁরা সংসার করছিলেন। কিন্তু অন্যদিকে, ছেলের ষোলোতম জন্মদিন যত এগিয়ে আসতে থাকে, ততই আশঙ্কা বৃদ্ধি পায় রাজা হিমার মনে।


রাজার পুত্রবধূ ছিলেন খুবই বুদ্ধিমতি। নিজের স্বামীর প্রাণ বাঁচাতে, তাঁর ষোলোতম জন্মদিনে একটি ফন্দি আঁটেন! তিনি নিজের সমস্ত সোনার আভুষণ একত্রিত করে বাড়ির প্রবেশদ্বারের সামনে জড়ো করে রেখে দেন। নিজের স্বামীকে সেই রাতে না ঘুমানোর পরামর্শ দিয়ে নিজেও জেগে থাকেন ও প্রবেশদ্বার আগলে রাখেন।
ক্রমে রাত গভীর হয়। রাজা হিমার পুত্রের মৃত্যুর সময় হলে স্বয়ং যমরাজ সাপের রূপ ধারণ করে এসে দাঁড়ান প্রবেশদ্বারের কাছে। কিন্তু, বাড়িতে ঢোকার মুখে প্রবেশদ্বারের সামনে রাখা সোনা তাঁকে বাধা দেয়। সোনার স্তূপের ঝলকানিতে (Flash) সাপরূপী যমরাজ কিছুই দেখতে পান না। অন্যদিকে আবার সারারাত ধরে রাজার পুত্রবধূ সুরেলা কণ্ঠে গান গাইতে থাকেন যা সাপরূপী যমরাজও উপভোগ করতে থাকেন। এভাবে রাজার পুত্রের মৃত্যুর সময় পেরিয়ে গেলে আর কিছুই করার থাকে না। খালি হাতেই ফিরতে হয় যমরাজকে!
এই দিনটি ছিলো কার্তিক কৃষ্ণপক্ষ্যর ত্রয়োদশ তিথি। পরের দিন সকালে সব কথা জানাজানি হলে সবাই এরপর থেকে এই দিনে এক সোনার এবং বিভিন্ন রত্নের আভূষণের এক উৎসব পালন করতে শুরু করেন ক্রমে যার নাম হয় ‘ধনতেরাস'(Dhanteras)!
এই ছিলো দেশব্যাপী ‘ধনতেরাস’ (Dhanteras) উৎসব পালনের কাহিনী। মনে করা হয়, এই উৎসব পালন করলে স্বামী-সন্তানের মঙ্গল হয়, পরিবারে সুখ ও সমৃদ্ধি আসে ও সুস্বাস্থ্য নিয়ে আসে এই উৎসব!

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *