“তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা
এ সমুদ্রে আর কভু হব নাকো পথহারা…”
শিক্ষক! জীবনের পথে পাথেয় যাঁরা। ভালোবাসা, স্নেহ, শাসন এবং আস্কারায় ভরাট যাঁদের ঝুলি, আজ তাঁদের দিন! আজ শিক্ষক দিবস। যদিও তাঁদের দিন আলাদা করে পালনের ধৃষ্টতা হয় না। তাঁদের উপস্থিতির প্রতি মুহূর্তই উদযাপনের। কিন্তু তবুও, একটি দিন ধার্য করে তাঁদের সকলকে আবার মনে করানো যায়, আমাদের জীবনের যা কিছু মঙ্গল, তা তাঁদের কারণেই।
বাস্তবের মত রুপোলি বালুচরকেও সিক্ত করেছে, “তাঁদের” জীবন প্রবাহ। আজকের বিশেষ পর্বে থাকল এমনই কিছু পথের দিশার খোঁজ..
হীরক রাজার দেশে – “শিক্ষক” দিবস বলতেই সবার প্রথমে যাঁর নাম মুখে আসে, তিনি নিঃসন্দেহে উদয়ন পণ্ডিত। দেশের স্বৈরাচারী শাসকের নির্মিত অচলায়তন ভেঙে, তিনি নতুন ভোরের উদয় ঘটিয়েছিলেন। সার্থক তাঁর নাম! ১৯৮০ সালে সত্যজিৎ রায় নির্মিত “হীরক রাজার দেশে” চলচ্চিত্রে এই চরিত্রে অভিনয় করেন প্রয়াত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। আজও মানুষ এমনই এক উদয়ন পণ্ডিতের অপেক্ষায় দিন গোনেন।
কোনি – ক্ষিদ্দা এবং কোনির রসায়ন মন ছুঁয়ে যায়নি এমন মানুষ কম। “কোনি” ছবিতেও শিক্ষকের ভূমিকায় অভিনয় করেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তথাকথিত এক প্রান্তিক সমাজের কিশোরীকে স্বপ্ন জয়ের পথে এগিয়ে নিয়ে যায় ক্ষিদ্দা। সমাজের সকল প্রতিকূলতাকে সাঁতরে কী করে লক্ষ্যে পৌঁছবে কোনি, এই ছিল ছবির বিষয়বস্তু।
ব্ল্যাক – শারীরিক ভাবে অক্ষম কন্যা সন্তানকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখেন এক দম্পতি। ফলে নিঃসঙ্গতা এবং অবসাদ গ্রাস করে মেয়েটিকে। হাত বাড়ায় দেবরাজ নামের এক দেবদূত। রানী মুখার্জী এবং অমিতাভ বচ্চনের “ব্ল্যাক” ছবির প্রেক্ষাপট এটাই। রানী এখানে ছিলেন সেই “চ্যালেঞ্জিং” চরিত্রে। দেবরাজের মত শিক্ষকের ছত্রছায়ায় সে নিজেকে সমাজের অন্তর্গত এক রক্তমাংসের মানুষ ভাবতে সক্ষম হয়। যে দীর্ঘ অস্তিত্ব সংগ্রামের দংশনে তাঁর জীবন জেরবার ছিল, তা যেন দেবরাজের মন্ত্রবলে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে।
তারে জমিন পর – ‘ডিসলেসিয়া’ এ আক্রান্ত ঈশানকে না বুঝেছিল তাঁর পরিবার, না বুঝেছিল শিক্ষক-মহল। কিন্তু তথাকথিত শিক্ষক হয়েও, বন্ধুর মত ঈশানের মনের যন্ত্রণা পড়ে নেন নিকুম্ব স্যার। শুরু হয় ঈশানকে নিয়ে তাঁর লড়াই। শত বাধা পেরিয়েও ভালোবাসার রঙে রঙিন হয়ে ওঠে সকল নেতিবাচকতা। ‘তারে জমিন পর’ ছবির এমন গল্প আজও এক খুশিতে ভাসিয়ে দেয়..
হিচকি – রানী মুখার্জী অভিনীত “হিচকি” ছবিটিও সমাজের চোখে আঙুল দিয়ে অনেক ধরনের প্রশ্ন উস্কে দিয়েছে। রানীর নাম হয় এই ছবিতে নয়না মাথুর। জন্ম থেকে এক বিরল স্নায়ু রোগে আক্রান্ত তিনি। কথা বলতে বলতেই বেরোয় তাঁর মুখ দিয়ে হেঁচকির মত বেরোয় বিকৃত আওয়াজ। নয়না চেয়েছিল শিক্ষকতা করতে। কিন্তু স্কুলগুলি তাঁর “দুর্বলতা” নিয়েই মত্ত ছিল। সে কারণে নয়না দায়িত্ব নেয় এমন কিছু প্রান্তিক ছেলে মেয়ের, যাঁরা বড় স্কুলে ছিল ব্রাত্য। কিন্তু সমাজের নানা ‘হিচকি’ নামক প্রতিকূলতাকে ধুলিস্যাৎ করে, সেই সকল কিশোর কিশোরীর সঙ্গে সমাজের বুকেই জয়লাভ করে নয়না। জয় হয় জীবনের।
ডিয়ার জিন্দেগি – জিবনবিমুখ কিশোরীকে জীবনের স্রোতে ভাসিয়েছিলেন ডক্টর জাহাঙ্গীর খান। আলিয়া ভাট এবং শাহরুখ খানের এই রসায়ন যেন দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে সমাজের বুকে। শাহরুখ খান অভিনীত ‘চক দে ইন্ডিয়া’ ছবিটিও এমন এক লড়াকু শিক্ষকের সংগ্রামকে প্রতিষ্ঠিত করে তুলেছে।