১৯৬৬ সালে, হিরন্ময় সেন পরিচালিত ‘পাগল ঠাকুর’ ছবিতে, রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের শৈশবের চরিত্রে অভিনয় দিয়ে চলচিত্র জগতে হাতে খড়ি চুমকি রায়ের। ১৯৭১ সালে প্রয়াত চিত্র পরিচালক তরুণ মজুমদার তাঁর ‘কুহেলী’ ছবির জন্য নবাগতা মুখের সন্ধান করছিলেন। অভিনেত্রী ছায়া দেবীর কথা মত, কিশোরী চুমকিকে তিনি নির্বাচন করেন তাঁর ছবির ‘রেনু’ চরিত্রের জন্য। এই শুরু। এই সফরের মাধ্যমেই সেদিনকার চুমকি, হয়ে উঠলেন আজকের দেবশ্রী রায়।
অভিনেত্রী মহুয়া রায়চৌধুরীর অকাল মৃত্যু, দেবশ্রীর জীবনে নানা রঙের দিন হিসেবে উপনীত হয়। তরুণ মজুমদার তাঁর ‘ভালোবাসা ভালোবাসা’ ছবির জন্য মহুয়াকে বেছে নিলেও, তাঁর মৃত্যুতে সেই শূন্যস্থান ভরাট করেন দেবশ্রী। তারপর একের পর এক ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি মানুষের মন জয় করেন। ১৯৮৮ সালে, বালাজি রাজ চোপড়ার পরিচালনায়, হিন্দু পুরাণ মহাকাব্য, ‘মহাভারত’ এ তিনি রাজমাতা সত্যবতীর ভূমিকায় অভিনয় করেন। আশির শেষভাগ থেকে পর্দায় তাঁর এবং এই যুগের তথাকথিত ‘মিস্টার ইন্ডাস্ট্রি’ প্রসেনজিৎ চটটোপাধ্যায়ের রসায়ন জমে ওঠে।
ছোট থেকেই ‘বুম্বা’ ওরফে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়(Prosenjit Chatterjee) এবং ‘চুমকি’ দেবশ্রী রায় বন্ধু ছিলেন। ফলে পর্দায় তাঁদের মধ্যকার বোঝাপড়া বেশ দৃঢ় ছিল। পর্দার প্রেম গড়ায় বাস্তবে। বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে, একে অপরের জীবনের ‘দোসর’ হওয়ার দিকে এগিয়ে যান। তাঁরা যুগলে শেষ ছবি করেছিলেন, ঋতুপর্ণ ঘোষ পরিচালিত ‘উনিশে এপ্রিল’। এই ছবি দেবশ্রীকে এনে দেয় রাষ্ট্রপতি পুরস্কার। শোনা যায়, দেবশ্রীর সাফল্য তাঁদের বৈবাহিক জীবনের সমাপ্তি ত্বরান্বিত করে। প্রসেনজিৎ নাকি মেনে নিতে পারছিলেন না, স্ত্রীয়ের সাফল্য। নানা মুনির নানা মতে প্রকাশ পায় এমন কথা। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় চেয়েছিলেন, অভিনয় ছেড়ে, দেবশ্রী সংসার এবং সন্তানের প্রতিই যেন মন দেন।
দেবশ্রী তখন তাঁর কেরিয়ারের গ্রাফ চূড়ান্ত পর্যায়ে অতিক্রম করে ফেলেছেন। ফলে সেখান থেকে নেমে আসা মোটেই বিচক্ষণতা নয়। সেই কারণে এমন অসহযোগী জীবনসঙ্গীর সঙ্গে তিনি আর পথ চলতে চাননি। বিবাহের তিন বছর পর করে ফেলেন বিবাহ বিচ্ছেদ।
দেবশ্রীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের পর প্রসেনজিৎ একাধিক সম্পর্কে লিপ্ত হলেও তা স্থায়ী হয়নি। তবে স্ত্রী অর্পিতা এবং পুত্র মিশুককে নিয়ে তাঁর সুখের সংসার। অপরদিকে দেবশ্রীর জীবনে আর কোনও নতুন বসন্ত আসেনি…
এক সাক্ষাৎকারে দেবশ্রীকে প্রশ্ন করা হয়, পুরনো বিবাদ ভুলে ‘মিস্টার ইন্ডাস্ট্রি’ প্রসেনজিৎ যদি তাঁর সঙ্গে অভিনয় করার জন্য তাঁকে আবেদন করেন, দেবশ্রী কি রাজি হবেন? ছোট পর্দার ‘সর্বজয়া’ জানান, কোনও একজন ইন্ডাস্ট্রি হতে পারেন না, সকলকে নিয়েই ইন্ড্রাস্ট্রি। আর সত্যি যদি কাউকে ইন্ড্রাস্ট্রি বলত হয়, তবে তিনি উত্তম কুমার। দেবশ্রীর এই উত্তরেই বোঝা যাচ্ছে, তাঁর মধ্যে প্রাক্তন স্বামীর প্রতি মনোভাব এখনও সহজ হয়নি। যার ফলে তাঁর এমন বয়ান প্রকাশ পেয়েছে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে।