অবিকল মানুষের মত কথা বলে ‘টুসি’, পাথরপ্রতিমার শালিক শাবকই হয়ে উঠেছে সকলের নয়নের মণি

মা বাবা ডাক থেকে, শাঁখ বাজানো, এমনকী কাশি বা কান্নার আওয়াজও করতে পারে বছর একের ‘টুসি’। নাহ্, কোনও মনুষ্য শিশু নয়, টুসি একটি পক্ষি শাবক। এক বছর আগে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার পাথরপ্রতিমা ব্লকের রামনগর আবাদ এলাকায়, ঝড়ের প্রকোপে গাছ থেকে পড়ে যায় একটি দুদিনের শালিক শিশু। উদ্ধার করে সেই সময় নবম শ্রেণীতে পাঠরত এক কিশোর। তারপর থেকে সেই হয়ে ওঠে শালিক শিশুর ত্রাতা। গড়ে ওঠে তাঁদের মাঝে নিবিড় বন্ধুত্ব। রাতারাতি ছোট্ট পাখিটি হয়ে ওঠে গ্রামের সকলের নয়নের মণি, ‘টুসি’।

এই এক বছরে টুসি শিখে নিয়েছে মানুষের চালচলন। হয়ে উঠেছে নিজের ত্রাতার রক্ষাকর্তা। যেখানে তথাকথিত উৎকৃষ্ট শ্রেণী মানুষ, অন্য মানুষের অনুভব নিয়ে খেলে যায়, উপকার ভুলে গিয়ে দুর্বলতার সুযোগ নেয়, সেখানে একটি পাখি হয়ে সে বুঝেছে তাঁর জীবনে তাঁর ত্রাণকর্তার মর্ম। এমনকী তাঁর ত্রাতা যদি অন্য পাখির লালন পালনে যুক্ত হয়ে পড়ে, তাহলে কেঁদে অধিকার বোধ জানায় টুসি। মা বাবাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ডাকতে পারদর্শী ছোট্ট পাখিটি। এমনকী তাঁর রক্ষাকর্তা বছর ষোলোর কিশোরটিকে ঘুম ভাঙানোর দায়িত্বও আছে তাঁরই কাঁধে।

আরও একটি কাজ পারে টুসি। সন্ধ্যা হলেই, অন্যান্যদের সঙ্গে শাঁখ বাজায় সে। তবে নিজের কণ্ঠে। আর তাতেই মেতে ওঠেন তাঁর আশে পাশের মানুষ। কিশোরের সঙ্গে অন্য কোনও পাখির সখ্য, পছন্দ করে না এই শালিক পাখিটি। তাই সদ্য আসা একটি ছোট্ট পাখির সঙ্গে সেই কিশোর মেলামেশা করলেই, যারপরনাই ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে টুসি। বোঝাই যাচ্ছে, শুধু মানুষের মত কণ্ঠের নকলই নয়, মানুষের চেয়েও বেশি আবেগপ্রবণ এই প্রাণীটি। টুসির খবর প্রকাশ্যে আসতেই ভিড় জমেছে পাথরপ্রতিমা ব্লকে। সকলেই একবারটি চোখের দেখা দেখতে চায় টুসিকে। নেটিজেনদের মধ্যেও শুরু হয়েছে টুসিকে নিয়ে চর্চা। সকলেই মুগ্ধ হয়ে পড়েছেন শালিক শাবকের কীর্তি কলাপে। সত্যিই, এমন বন্ধু প্রত্যেকের জীবনে থাকলে যেন, জীবন সত্যিই মধুময় হয়ে ওঠে!

Scroll to Top