কতটা খাঁটি হলে, অরিজিৎ হওয়া যায়? এগারো টাকা পারিশ্রমিকের আবেদনে চর্চামুখী অরিজিৎ সিং

সাল ২০১৩! ঠিক আজ থেকে নয়টা বছর আগে, সদ্য বয়ঃসন্ধির অন্দরমহলে প্রবেশ করা কিশোর কিশোরীদের প্রাণে খুশির তুফান বইয়ে দিয়েছিল, এক বাঙালি যুবক! তাঁর আদুরে, মাখো মাখো প্রেমের আবেগী কণ্ঠে মত্ত হয়ে উঠেছিল প্রত্যেক ভারতবাসীর হৃদয়। তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন অরিজিৎ সিং! ‘আশিকি ২’ (Ashiki 2) ছবিতে ‘তুম হি হো’ (Tum Hi Ho) গানটি ছিল তাঁর সঙ্গীত জীবনের ‘টার্নিং পয়েন্ট’। সেই শুরু… অরিজিতের সঙ্গীত সাধনা, সারগমের মত দিনে দিনে এক ধাপ থেকে আর এক ধাপ চড়াইয়ে উঠতে থাকে।

Arijit Singh

মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জের ছেলে অরিজিৎ সিং (Arijit Singh)। বাবা কক্কর সিং একজন সিখ গুরু, এবং মা অদিতি সিং বাঙালি তনয়া। ছোট থেকেই দেবী সরস্বতীর আশীর্বাদ প্রদত্ত ছিলেন জিয়াগঞ্জের রাজপুত্তুর। বাংলা, হিন্দি ছাড়াও বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় তাঁর কণ্ঠের জাদু ছড়ি নাড়িয়েছেন অরিজিৎ। বলা বাহুল্য, অরিজিৎ, অরিজিৎ হয়ে উঠেছেন কেবল তাঁর কন্ঠ দিয়ে মোহিত করার কারিগরির জন্য নয়, বরং তাঁর সহজ সরল ব্যবহারই সবকিছুর আগে মন জয় করেছে ভারতবাসীর।

Arijit Singh

সাজপোশাক থেকে, সমাজের প্রতি তাঁর অবদান সবকিছুতেই ব্যতিক্রমী অরিজিৎ। বিভিন্ন জাতীয় স্তরের পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানেও তাঁকে দেখা যায় মেঠো, সরলতার আবহে মিশে থাকতে। এমনকি তাঁর এলাকার স্থানীয় এক বিদ্যালয়ে বিনা পারিশ্রমিকে নিয়েছেন শিক্ষকতার দায়িত্বও। সেই অরিজিৎ যথারীতি নজির সৃষ্টি করলেন কবি এবং ‘নবজাতক’ পরিচালক শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Srijato Mukhopadhyay) ‘মানবজমিন’ ছবিটিতে। সেখানে প্রথমবারের জন্য অরিজিৎ রামপ্রসাদী গান গেয়েছেন। যেকোনও গায়কের জন্য তা ‘চ্যালেঞ্জিং’ হলেও, অরিজিতের কাছে তা সাবলীল। অরিজিৎ যেন জলের মত, যে পাত্রয় রাখা হবে, সেই আকার ধারণ করবে! যেকোনও গানেই তিনি স্বতস্ফূর্ত! সে কারণেই শ্রীজাত চেয়েছিলেন, এই গানকে এই যুগের প্রতিনিধি হিসেবে, অরিজিৎ আবার জীবন্ত করে তুলুক! অরিজিৎ পেরেছেন! শুধু তাই নয়, বরং একাধিকবার ধরে তাঁকে পারিশ্রমিক নেওয়ার জন্য জোরাজুরি করার পর, তিনি চেয়েছেন মাত্র এগারো টাকা! আর তাতেই অবাক হয়েছে পরিচালক তথা সমগ্র সংস্কৃতিমহল। প্রসঙ্গত, শ্রীজাত তাঁকে জানান, এই গান যাঁরা কিনবেন, তাঁদের এগারো টাকার কথা বলা যাবে না! অরিজিৎ তাঁর স্বভাবসিদ্ধ গুণে বলেন, শ্রীজাত তাঁর পছন্দমত কোম্পানির থেকে পারিশ্রমিক নিয়ে, সেই অর্থ দিয়ে যেন অরিজিতের তত্বাবধানে থাকা দুঃস্থ শিশুদের বিদ্যালয়ে দান করেন, যাতে তাঁরা পুজোয় নতুন জামা কিনতে পারে!

Srijato and Arijit

কি করে পারেন অরিজিৎ (Arijit)! এতটাও খাঁটি হয়ে এই যুগে থাকা যায়! তিনি আমাদের ‘প্রাণের আরাম, মনের আনন্দ, আত্মার শান্তি…’। সকল শক্তি দিয়ে প্রার্থনা, ভালো থাকুন অরিজিৎ, ভালো রাখুন এ বিশ্বকে। আপনার মত অরিজিৎ, ঘরে ঘরে জন্ম নিক….

Arijit Singh
Scroll to Top