• Please enable News ticker from the theme option Panel to display Post

“জামাই ষষ্ঠী” হলেও, মেয়েদের কাছে পাওয়াই ছিল মা-বাবার হৃদয়ের ব্যাকুল অভিপ্রায়

“জামাই ষষ্ঠী” হলেও, মেয়েদের কাছে পাওয়াই ছিল মা-বাবার হৃদয়ের ব্যাকুল অভিপ্রায়

জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে, মা ষষ্ঠীর আরাধনা করা হয়ে থাকে। বলা বাহুল্য, মা ষষ্ঠী কোনও পুরুষকেন্দ্রিক দেবী নন। সন্তানদের মঙ্গলার্থে মায়েরা ব্রত করে থাকেন। আবার জামাই ষষ্ঠী হিসেবেও এই দিনটি প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু জামাই ষষ্ঠী কি সত্যিই কেবল পুরুষদের হিতের জন্যই? আজ সে নিয়েই কিছু কথা এই বিশেষ পর্বে।

প্রথমেই এই উৎসবের নামটির বিষয়ে খোলসা করা যাক। আসলে এই এই রীতির নাম “জামি ষষ্ঠী”। প্রখ্যাত গবেষক, ডাক্তার অসিত দাশ তাঁর গবেষণা দ্বারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, জামাই-ষষ্ঠী বলে আদতে কোনও শব্দ নেই। আছে ‘জামি ষষ্ঠী’। জামির অর্থ হল স্ত্রী জাতি। সকল কন্যাদের মঙ্গলার্থে, মায়েদের দ্বারা যে ব্রত পালন করা হয়, তার নামই জামি ষষ্ঠী। ইতিহাস বা পুরাণের বেশ কিছু ঘটনার কথা মাথায় রেখে, বাঙালি জাতি “জামি ষষ্ঠী” শব্দটিকে অপভ্রংশের মাধ্যমে জামাই ষষ্ঠীতে রূপান্তরিত করেছেন।

এখন প্রশ্ন জাগতেই পারে, কেন এই উৎসবে জামাই-মহল প্রাধান্য পেয়ে থাকেন? ইতিহাস এবং পুরাণ ঘাঁটলে, এরও সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে।

কথিত আছে, এক গৃহিণী তাঁর নিজের বাড়ির মাছ চুরি করে খেয়ে একটি মার্জারের প্রতি সেই দোষ আরোপ করেন। প্রসঙ্গত, মার্জার হল দেবী ষষ্ঠীর বাহন। বাহনের প্রতি এমন অভিযোগ দায়ে, দেবী যেমন ক্রুদ্ধ হন, তেমনই সেই গৃহিণীর প্রতি রাগ বর্ষন করেন তাঁর স্বামীগৃহের সকল সদস্য। দেবীর কাছে ক্ষমা চেয়ে, তাঁর রোষ মুক্ত হলেও, স্বামীগৃহ প্রদত্ত শাস্তি থেকে তিনি নিজেকে মুক্ত করতে পারলেন না। তাঁকে একটি কড়া বিধান দেওয়া হয়। বিধানে বলা হয়, তিনি আর কোনওদিন নিজ-পিতৃগৃহে যেতে পারবেন না। অপরদিকে তাঁর পিতৃগৃহে কন্যাকে দেখতে না পেয়ে আকুল হয়ে উঠেছেন তাঁর পিতা মাতা। অবশেষে সেই বৃদ্ধ দম্পতি এক উপায় বের করলেন। আসন্ন ষষ্ঠী মায়ের আরাধনার দিন, তাঁরা জামাইয়ের মঙ্গলার্থে ব্রত আয়োজন করবেন বলে আমন্ত্রণ জানালেন। এবং শুধু জামাইকে একাই নয়, সঙ্গে যেন তাঁদের মেয়েও আসেন এমনই আবেদন জানান তাঁরা। যথা দিনে মেয়ে জামাই তাঁদের সেই আয়োজনে সামিল হলে, তাঁদের সেবা যত্নের কোনও ত্রুটি থাকল না। অফুরান খাদ্য সমাহারে তাঁদের ভোজও যেমন জমজমাটি হল, তেমনই মেয়েকে কাছে মেয়ের মা এবং বাবার আনন্দও ছিল প্রবল।

আবার লোককথা অনুযায়ী, পূর্বে সন্তান জন্মের আগে, বিবাহিতা মেয়েদের পিতৃগৃহে যাওয়ার অনুমতি ছিল না। তাই জামাইদের মঙ্গলার্থের ব্রত করা হবে, এই হেতুতে কন্যাদের পিতা মাতা তাঁদের গৃহে জামাই সহযোগে কন্যাদের নিমন্ত্রণ জানাতেন।

সুতরাং, এই অনুষ্ঠান, কোনও বিশেষ লিঙ্গ ভিত্তিক নয়। অতীতে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে, পুরুষ সন্তানদেরকেই সর্ব প্রথম প্রাধান্য যে দেওয়া হত, তা আমাদের অজানা নয়। কিন্তু দেবী ষষ্ঠী সকল সন্তানের মা। তাই কন্যাদের হিতের জন্য, তাঁদের মায়েরাও পালন করতে শুরু করেন “জামি ষষ্ঠী”। কিন্তু বিধান মত যেহেতু বিবাহিতা কন্যার পিতৃগৃহে পা রাখা ছিল ‘অন্যায়’, তাই জামাইদের হেতু করেই কন্যাদের কাছে পাওয়ার সুযোগ খুজঁতেন পিতা মাতারা।
নামের অপভ্রংশ হয়ে, নিয়ম আচার শুধু জামাই-কেন্দ্রিক হলেও, এই আচার পুত্র-কন্যা নির্বিশেষে সকল সন্তানদের জন্য পালন করতে পারেন তাঁদের জন্মদাত্রীরা।

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *