গাজরের হালুয়া খেয়েছিলেন মহাকাশে ভারতের একমাত্র মহাকাশচারী! বর্তমানে কোথায় তিনি?

“মহাবিশ্বে মহাকাশে মহাকাল-মাঝে…” তাঁর জীবন চরিত নিয়ে আলোচনা করতে গেলে, বোধ হয় এই উধৃতি দিয়েই শুরু করতে হয়! সত্যিই, তিনি এমন এক মানব, যিনি শুধু পার্থিব জগতের রস আস্বাদন করেই ক্ষান্ত হননি, বরং পৃথিবী থেকে বাইরে বেরিয়েও ছুঁয়ে এসেছেন মহাকাশ! তিনি, রাকেশ শর্মা (Rakesh Sharma)। ভারতের প্রথম, এবং একমাত্র মহাকাশচারী। কিন্তু আজ তিনি কোথায়? আজ তাঁকে নিয়েই আলোকপাত করা হবে এই প্রচ্ছদে।

Rakesh Sharma

রাকেশ শর্মা, ১৯৪৯ সালে পাঞ্জাবের পাতিয়ালায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁকে ভারতের প্রথম এবং আপাতত একমাত্র মহাকাশচারী হিসেবে গণ্য করা হয়। অনেকেরই হয়ত মনে হবে সুনীতা উইলিয়ামস কিংবা কল্পনা চাওলার কথা। কিন্তু মূল বিষয় হল, তাঁরা ভারতীয় বংশোদ্ভূত, বিশুদ্ধ ভারতীয় হিসেবে রাকেশ শর্মার নামই বিবেচ্য। পাঞ্জাবের অধিবাসী হয়েও, মেধাবী রাকেশ তাঁর পঠন পাঠন সম্পন্ন করেন হায়দ্রাবাদের বোর্ডিং স্কুলে। নিজাম কলেজে স্নাতক হয়ে, মাত্র ১৮ বছর বয়সে এয়ারফোর্সের একজন ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন। ভারতীয় এয়ারফোর্সের একজন সুদক্ষ, দায়িত্বপরায়ন পাইলট হয়ে উঠতে তাঁর বেশি সময় লাগেনি। সদ্য যৌবনে পা রেখেছেন কি রাখেননি, তার মধ্যেই তিনি মিকোয়ান গুরেভিচ অর্থাৎ মিগের মত দুর্ধর্ষ যুদ্ধবিমানও খুব সহজেই চালনা করতে পারতেন। একের পর এক অনেকগুলি অভিযানে সফল ভাবে উপনীত হওয়ার পর তিনি, ১৯৮৪ সালে ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্সের স্কোয়াড্রন লিডার এবং পাইলট হিসেবে নিযুক্ত হন।

Team Rakesh Sharma

রাকেশ শর্মার জীবনে আসল মোড়টি আসে ১৯৮২ সালে। যাকে বলা যায় ‘টার্ণিং পয়েন্ট’। সেই বছরের ২০ সেপ্টেম্বর রাকেশ শর্মা, মহাকাশচারী হওয়ার জন্য মনোনীত হন। ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন অর্থাৎ ইসরো এবং সোভিয়েত ইন্টারকসমস মহাকাশ কর্মসূচির মধ্যে যৌথ প্রকল্পের অংশ হিসেবে মহাকাশ যাত্রার জন্য শুরু হয় তাঁর কঠোর অধ্যবসায়। সোভিয়েত মহাকাশ সংস্থা তাঁকে রাশিয়া নিয়ে চলে আসে। সেখানেই শুরু হয় তাঁর প্রচেষ্টার হাতে খড়ি। খুব অল্পদিনেই রাশিয়ান ভাষা রপ্ত করে নেন এই ভারতীয় বিস্ময়! মহাকাশের অস্বাভাবিক আবহাওয়ার সঙ্গে সহাবস্থান করার জন্য, রাশিয়ার মাইনাস কুড়ি ডিগ্রি সেলসিয়াসে প্রতিদিন খালি পায়ে বরফের ওপর হাঁটতে হত তাঁকে। তাছাড়া মহাকাশে গিয়ে শ্বাস নেওয়ার কলা কৌশল, চলন, গমন, এমনকি যান্ত্রিক ত্রুটি হলে নিরাময়ের উপায়, সবকিছু নিয়েই অবগত করা হয় রাকেশ শর্মা এবং তাঁর দুই সঙ্গীকে।

অপেক্ষার অবসান হয় ১৯৮৪ সালের ৩ এপ্রিল। সোয়ুজ টি-১১ মহাকাশযানে চেপে বসেন রাকেশ শর্মা এবং তাঁর দুই রাশিয়ান বন্ধু। ৭ দিন ২১ ঘণ্টা এবং ৪০ মিনিটের এই কর্মযজ্ঞে, বায়ো-মেডিসিন এবং রিমোট সেন্সিং বিষয়ের ওপর মোট ৪৩ টি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চালান তাঁরা। তারপর ফিরে আসেন পৃথিবীর বুকে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার, রাকেশ শর্মা এই সফরে নিয়ে গেছিলেন তাঁর প্রিয় গাজরের হালুয়া। তিন বন্ধুতে বেশ উপভোগ করে ছিলেন এই পার্থিব জগতের স্বাদ, এক অপার্থিব পরিবেশে!

Indira Gandhi and Rakesh Sharma

এক ভিডিও কনফারেন্সে তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, রাকেশ শর্মাকে প্রশ্ন করেন, মহাকাশ থেকে ভারত দেখতে কেমন লাগে? রাকেশ শর্মা বিনা ভাবনায় উত্তর দেন, ‘সারে জাঁহা সে আচ্ছা…’।

Rakesh Sharma

কিন্তু প্রশ্ন জাগে, মাত্র ৭৪ বছর বয়সে, কোথায় হারিয়ে গেলেন ভারতীয় এই নক্ষত্র? কেনই বা তাঁকে মনে রাখল না এই প্রজন্ম? কেনই বা কেবল সাধারণ জ্ঞান বইয়ের ভেতরেই থেকে গেল তাঁর অস্তিত্ব! সত্যিই, এই সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন! এত সামাজিক মাধ্যমের দৌরাত্ম্যের যুগেও একজন কৃতী ব্যাক্তিত্ব হারিয়ে গেলেন তাঁর নিজের জগতে। দূর থেকে এইটুকুই চাওয়া, ভালো থাকুন ভারতের প্রথম মহাকাশ ছোঁয়া মানব, তাঁর দেশের আগামী তাঁর আদর্শ অবশ্যই অনুসরণ করবে।

Scroll to Top