“কয়লার খনিতেই হিরে জন্মায়”- এই উক্তিটিকে সত্য প্রমাণ করে দিলো সাগরদিঘির যুবক মিজানুর!

ছোটো থেকেই বাড়িতে অনটন দেখে বড়ো হয়েছে সাগরদিঘির মিজানুর রহমান (Mijanur Rahman)। বাবা হকারি করে অনেক কষ্টে সংসার চালান। মা কোনোদিন লেখাপড়ার সুযোগও পাননি। পা রাখেননি স্কুলের গণ্ডিতে। টালির চালের একচালা বাড়িতে হ্যারিকেনের আলোয় পড়াশোনা করে ডব্লিউবিসিএস ক্র্যাক (WBCS Crack) করলেন সাগরদিঘির মিজানুর রহমান! আসুন তাঁর ব্যাপারে জেনে নিই আমরা।


মিজানুর উনিশতম Rank করেছেন ডব্লিউবিসিএসের জেনারেল ক্যাটাগরিতে (General Category)। একই সাথে বি গ্রেডের পুলিশ সার্ভিস (Police Service) ক্যাটাগরিতে ষষ্ঠ নম্বর স্থান দখল করে এখন লাইমলাইটে তিনি। জানা গিয়েছে, সাগরদিঘি ব্লকের ফুলশহরির এই কৃতি ছাত্র শীঘ্রই যোগদান করতে চলেছেন সরকারি চাকরিতে। মিজানুর জানিয়েছেন, “বাবা অত্যন্ত কষ্ট করে আমার পড়াশোনার খরচ জুগিয়েছেন। ডব্লিউবিসিএস এর জন্য কোন রকম কোচিং নিইনি আলাদা করে। সেই আর্থিক সামর্থ্য আমাদের ছিল না। স্বপ্ন পূরণের দিকে এগিয়েছি ধৈর্য ধরে। অত্যন্ত খুশি আজ এই সাফল্যে।”
মিজানুরের বাবা তফজুল ইসলাম (Tafzul Islam) হকারি করেন বাঁকুড়ায়। মিজানুলের মা আসিয়া বিবি দুই ছেলে ও তিন মেয়েকে নিয়ে সংসার সামলান। তফজুল জানিয়েছেন, সমস্ত উপার্জনের টাকা তিনি স্ত্রীর হাতে তুলে দিতেন মাসের শেষে। অন্যদিকে, আসিয়া বিবি নিজে পড়াশুনা জানেন না। কিন্তু সন্তানদের পড়াশোনার ব্যাপারে সর্বদা তিনি উৎসাহিত করতেন। মিজানুর ২০১০ সালে ৮০.৬ শতাংশ নম্বর নিয়ে মাধ্যমিক (Madhyamik) ও ২০১২ সালে ৮২ শতাংশ নম্বর নিয়ে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক (Higher Secondary) পাস করেন।


এরপর তিনি স্নাতক হন ফিজিক্স অনার্স (Physics Honours) নিয়ে। কলেজের গণ্ডি পার করার পর শুরু হয় ডব্লুবিসিএস (WBCS) পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি। যে সময় অনেকেই চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ভরসা রাখেন কোচিং সেন্টারের উপর, সেই সময় বাড়িতে হ্যারিকেনের আলোয় পড়ে মিজানুর চমকে দিলেন সবাইকে।


জেনারেল ক্যাটাগরিতে ১৯ নম্বর র‍্যাঙ্ক দেখেই উচ্ছাসে মাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন এই যুবক। ঝড়ের বেগে হকার পুত্রের সাফল্যের খবর ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। রাত থেকে বাড়িতে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য উপচে পড়া ভিড়। বাবা তোফজুল ইসলাম বলেন, “ছোট থেকেই ও সাফল্যের স্বপ্ন দেখত। ওর এই কৃতিত্বে আমি অত্যন্ত খুশি।” মিজানুরকে অভিনন্দন উৎসাহী মানুষের ঢল নেমেছে সাগরদিঘির ফুলশহরী গ্রামের টালির চালের বাড়িতে ৷


“পাঁকে পদ্ম ফোটে”, “কয়লার খনিতেই হিরে জন্ম নেয়” এই উক্তিগুলি যে কতটা সত্যি তারই প্রমাণ দিলো সাগরদিঘির সন্তান মিজানুর রহমান। ভবিষ্যতের স্বপ্নের আরো জাল বুনুক মিজানুর এবং তাঁর সব স্বপ্ন সত্যি হোক এই কামনা জানাই!

Scroll to Top