এক সরল, বিশ্বস্ত বন্ধু-গাছের ছবি এঁকেছেন প্রসূন চ্যাটার্জী, নভেম্বরে বাংলার মুখে মুক্তি পাবে বিশ্বসেরা ‘দোস্তজি’

‘বন্ধু বিনে প্রাণ বাঁচে না…’ আবার একবার মনে করিয়ে দিলেন প্রসূন। বিশ্বাস, স্নেহ, আগলে রাখা, বিষাদের রং দিয়ে, রুপোলি পর্দায় তুলির টান দিলেন। জীবন্ত হয়ে উঠল পর্দার ওপারে থাকা পলাশ এবং শফিকুল। তাঁরা ভিন জাতির। কিন্তু তাঁরা ‘বন্ধু’! আর এখানেই ঘনীভূত হয় ধর্মের কলুষতা।

ছবির নাম ‘দোস্তজি’, প্রেক্ষাপট বাবরি মসজিদ ধ্বংস এবং মুম্বই বিস্ফোরণের পরবর্তী। দেশ জুড়ে তোলপাড় হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা। মুর্শিদাবাদের প্রান্তিক গ্রাম, যেখানে মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষদের আধিপত্য, হিন্দুদের সঙ্গে সম্প্রীতি থাকলেও শুরু হয় দূরত্ব। তার আঁচ পড়ে, দুই বন্ধুর সরলতায়। পলাশ ব্রাহ্মণ, শফিকুল মুসলমান। তাঁদের পরিবার চায় না তাঁরা একসঙ্গে মিশুক, একসঙ্গে খেলুক, তাহলে যে সমাজের ক্ষমতাবান ‘ধর্মজ্ঞ’দের হিসেব নিকেশ উল্টে যাবে। একজন মুসলমানের সঙ্গে একজন হিন্দু যে সখ্য পাতাতে পারে না! তাহলে যে অসাম্প্রদায়িকতা দুর হয়ে, সুস্থ পৃথিবী গড়ে উঠবে! আর তাতেই তো সমস্যা সমাজের মাথাদের! সম্প্রীতি থাকলে যে তাঁদের ক্ষমতা ম্লান হয়ে যাবে!

পলাশ, শফিকুল ছোট হলেও, ‘বন্ধুত্ব’ ছোট হয় না। বন্ধুত্ব খোলা আকাশ, বন্ধুত্ব এক শক্ত বৃদ্ধ বটগাছ, যায় শিকড় বাকর অনেক গভীরে শক্ত করে মাটিকে ধরে আছে, যাঁকে উপরে ফেলা কঠিন। ধর্মের নামে অধর্ম করার ক্ষুদ্র, সংকীর্ণ মানসিকতা, তাঁদের বন্ধুত্বকে টলাতে পারে না। তাঁদের বন্ধুত্ব, যেমন গ্রীষ্মের মত প্রখর, বর্ষার দুর্যোগেও অবলম্বন হিসেবে বর্ষাতি হয়ে ওঠে, তেমনই শীতের মত আষ্টেপৃষ্ঠে একে অপরকে জড়িয়ে রাখে। বন্ধুত্ব দুর্বার, অনির্বাণ।

‘দোস্তজী’ ছবিটি ২২ টি দেশের চলচিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে। পরিচালক প্রসূন চ্যাটার্জীর প্রথম ছবি এটি। বন্ধুত্বের নির্দিষ্ট ভাষা হয় না, বন্ধুত্বই এক সাহিত্য! তাই এই ছবি বিদেশে সমাদৃত হওয়ার সঙ্গে পেয়েছে একাধিক পুরস্কার। পেয়েছে ইউনেস্কো স্বীকৃত ‘সিফেজ’ পুরস্কারও। বলা বাহুল্য, ভারতীয় ছবি হিসেবে পঞ্চম এবং বাংলা ছবি হিসেবে প্রথম বার কোনও ছবি এই পুরস্কার প্রাপ্ত হল। আগামী ১১ নভেম্বর বাংলার মাটিতে হেসে খেলে উঠবে পলাশ এবং শফিকুল, তাঁদের প্রতি পদক্ষেপের সঙ্গী থাকুন আপনারাও, ফিরে যান সেই ‘এক হারিয়ে যাওয়া বন্ধুর’ সঙ্গে স্মৃতির এক চিলতে বারান্দায়…

Scroll to Top