মাত্র তেরো বছর বয়সে হয়েছেন গানের শিক্ষক! চেনেন, এই ছোট্ট ‘আলী সাহাব’ কে?

গানে ভুবন ভরিয়ে দেবে, এমন কথা তো কত পাখিই দিয়েছে। কিন্তু যে পাখির মধুর কূজন তাঁর নিজস্ব পরিসর ছাড়িয়ে, হয়ে উঠেছে বিশ্বব্যাপী মানুষের মনের প্রসন্নতার কারণ, সে পাখির আকাশ কিন্তু রামধনুর রঙেই ভরাট থাকবে। রাজস্থানের সীকর জেলার একটি ছোট্ট গ্রাম দুযোদ। বছর তেরো আগে সেই গ্রামের বুকেই জন্ম নিয়েছিল, গানে ভুবন ভরিয়ে দেওয়ার স্বপ্নে বুক বাঁধা এক ছোট্ট প্রাণ। নাম তাঁর আসাম খান আলী (Asham Khan Ali)। পরিবারের অবস্থা ছিল না সেরম সচ্ছল। তবুও এই ছেলের জীবন হয়ে ওঠে গান। গানই হয়ে ওঠে তাঁর জীবনের অঙ্গ, বাঁচার মন্ত্র। বলা বাহুল্য, এই গানের হাত ধরেই আসাম পা দেন এক রূপকথার পৃথিবীতে।

আসাম দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন ২০২২ সালে। জী টিভি আয়োজিত সারেগামাপা লিটল চ্যাম্পের মঞ্চ আহ্বান জানায় এই তেরো বছরের কিশোর বিস্ময়টিকে। তাঁর মঞ্চে উপস্থিত হওয়াও ছিল বেশ চমকপ্রদ। বিচারকদের সামনে উপস্থিত হয়, তাঁরই স্কুলের একদল পড়ুয়া। বিচারকদের পক্ষ থেকে সঙ্গীত শিল্পী শঙ্কর মহাদেবন, তাঁদের মধ্যে কে প্রতিযোগী জানতে চাইলে এক অদ্ভুত উত্তরের সম্মুখীন হন মঞ্চে উপস্থিত সকলে। শিশুরা জানায়, তাঁরা নয়, বরং তাঁদের গানের শিক্ষক ‘আলী সাহাব’ হলেন প্রতিযোগী। বিচারকেরা যথার্থ ভাবেই অবাক হয়ে বলে ওঠেন, এই অনুষ্ঠান বড়দের জন্য নয়, এই অনুষ্ঠান ছোটদের! সেই মুহূর্তেই শিশুরা জানায়, তাঁদের গানের শিক্ষক কোনও গুরু-গম্ভীর, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ নন, তিনিও তাঁদের মতই স্কুল পড়ুয়া! সেই মুহূর্তেই আত্ম প্রকাশ ঘটান তাঁদের প্রিয় ‘আলী সাহাব’। বিচারক থেকে শ্রোতা, সকলে চমকে ওঠেন তাঁর উপস্থিতিতে।

জানা যায়, ‘আলী সাহাব’ ওরফে আসাম আলী রাজস্থানের আকাশদ্বীপ স্কুলের ষষ্ট শ্রেণীর ছাত্র। পরিবারের অসচ্ছলতা তাঁর নিত্য যাপন হলেও, স্বয়ং মা সরস্বতীর আশীর্বাদ প্রাপ্ত ছিলেন আলী। খেলনা বা পুতুল নয়, ছোট থেকেই হারমোনিয়াম এবং বাঁশিকে তাঁর সঙ্গী করে নিয়েছিলেন তিনি। গানের টানে পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার। স্কুলেও তাই এই গুণে সকলের মধ্যমণি হয়ে ওঠেন এই কিশোর। স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁদেরই স্কুলের গানের শিক্ষক হিসেবে, আলীকে নিযুক্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কারণ তাঁরা জানতেন, আলী শুধু তাঁদের স্কুল বা জেলার নয়, একদিন আলীই হয়ে উঠবেন দেশের গর্ব। বিভিন্ন পরীক্ষার পর আলীই হয়ে ওঠেন তাঁর স্কুলের গানের শিক্ষক। সকল শ্রেণীর পড়ুয়াদের গানের হাতে খড়ির দায়িত্ব নেন তিনি। হয়ে ওঠেন শিশুদের প্রিয় ‘আলী সাহাব’। শিক্ষক হিসেবে বয়সের দিক দিয়ে ছোট হলেও, আলীর শিক্ষকতায় মুগ্ধ হয়ে ওঠে তাঁর ছাত্র ছাত্রীরা। আলীর শিক্ষকেরাও প্রসন্ন হন, আলীকে শিক্ষক হিসেবে পেয়ে। আলী বুঝিয়ে দেন, শিক্ষকতার জন্য বয়স নয়, প্রয়োজন সঠিক জ্ঞান এবং অধ্যবসায়।

গ্র্যান্ড অডিশনে সারেগামাপার মঞ্চে প্রিয় গায়ক সুখবিন্দর সিংয়ের কণ্ঠে, এ.আর রহমানের সুরে ‘তাল’ ছবির একটি জনপ্রিয় গান বেছে নেন আসাম আলী। পেয়ে যান সোনার পদক। বলা বাহুল্য, তাঁর গায়কী ভঙ্গিতে যারপরনাই একটি আনন্দমুখর আবহ তৈরি হয়ে ওঠে সারেগামাপার মঞ্চ জুড়ে।

Scroll to Top