বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আজ ও কাল ধনতেরাস, কোন কোন পৌরাণিক বীজ সুপ্ত আছে, জানেন কি?

দুর্গা পুজোর বিষাদ কাটিয়ে শহর সাজবে আলোর ঝিলিকে। কিন্তু শুধু কি শহর? আলোর উৎসব যেখানে, সেখানে তো নিজেদেরও সাজাতে হয় বৈকি। তাই ঠিক দীপাবলির প্রাক্কালে উদযাপিত হয় পবিত্র ধনতেরাস উৎসব। সোনা রূপা কেনা, লক্ষ্মী দেবীর আরাধনার মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়ে এই উৎসব। কিন্তু কি এর উৎস, কেনই বা পালন করা হয় এই উৎসব, আজ সেই সম্পর্কেই আলোচনা করা হবে টেক টকির পক্ষ থেকে।

সমুদ্রমন্থন –
দেবরাজ ইন্দ্রের ঔদ্ধত্বে ক্রুদ্ধ হয়ে দুর্বাসা মুনি তাঁকে অভিশাপ দেন। এর ফলে ত্রিলোক শ্রীহীন অর্থাৎ লক্ষ্মীহীন হয়ে পড়ে। দেবাদিদেব মহাদেব এমতাবস্থায় পরামর্শ দেন, সমুদ্রমন্থনের। মৈনাক পর্বতকে মাঝে রেখে অসুর এবং দেবতাদের মিলিত প্রয়াসে মন্থিত হতে শুরু করে ক্ষীর সাগর। আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসতে থাকে ধন সম্পদ! সর্বশেষে আবির্ভূত হন অমৃত কোলস নিয়ে ধন্নন্তরি। ধন সম্পদ পুনরাবস্থায় উজ্জীবিত হওয়ার দরুন আবির্ভাব হন শ্রী লক্ষ্মীও। তাই দীপাবলির প্রাক্কালে ধন সম্পদ সুরক্ষিত রাখতে, লক্ষ্মী দেবীর আরাধনা করা হয়ে থাকে।

রাজা হিমার পুত্রের অভিশাপ – পূরানে হিমা নামের এক রাজা ছিলেন। তাঁর পুত্র মাত্র ষোলো বছর বয়সে শাপগ্রস্ত হন। শাপ অনুযায়ী, বিবাহের চতুর্থ দিনে তাঁর মৃত্যু ঘটবে। তাই রাজা পুত্রের বিবাহ দিতে একেবারেই ইচ্ছুক ছিলেন না। অপরদিকে যৌবনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় রাজকুমার এক রাজকন্যার প্রেমে পড়েন এবং বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। যেই মুহুর্তে সেই রাজকন্যা জানতে পারেন অভিশাপগ্রস্ত স্বামীর কথা, তৎক্ষণাৎ তিনি উদ্যত হন দেবী লক্ষ্মী এবং গণেশের আরাধনায়। দেবতাগণ সন্তুষ্ট হয়ে প্রকট হন, এবং রাজকন্যাকে বর দিতে উদ্যত হন। রাজকন্যা জানান, তাঁর স্বামীকে অভিশাপমুক্ত করার কথা। দেবী লক্ষ্মী তাঁকে বলেন, বুদ্ধিবলে তিনি যদি যমকে পরাজিত করতে পারেন, তবেই তাঁর স্বামীর প্রাণ রক্ষা হবে। বিবাহের চতুর্থ দিনে রাজকন্যা রাজপ্রাসাদ জুড়ে প্রচুর অলঙ্কার সাজিয়ে রাখলেন এবং সঙ্গে প্রদীপ জ্বেলে রাখলেন। মৃত্যুর ভগবান, যম সর্পবেশে রাজকুমারকে দংশন করতে এসে, অলঙ্কার এবং প্রদীপের আলোয় দিকশুণ্য হয়ে পড়েন। তবে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। এর ফলে তিনি আর প্রাণ নিতে পারেননি রাজকুমারের।

ধন্বন্তরি এবং কুবেরের সাক্ষাৎ – কথিত আছে, কার্তিক মাসের কৃষ্ণ পক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে, অমৃত কলস হাতে ধরাধামে অবতীর্ণ হন দেববৈদ ধন্বন্তরি। অপরপক্ষে কুবের তাঁর কলস ভর্তি ধন রত্ন নিয়ে অবতীর্ণ হন ধন্বন্তরির সঙ্গে। তাঁদের একে অপরকে অমৃত এবং ধন সম্পদ দেওয়ার বিনিময়কে কেন্দ্র করে পালন করা হয় ধনতেরাস। তাই এই দিনকে কেন্দ্র করে সোনা রূপো, বাসন কেনারও চল রয়েছে ।

Scroll to Top