ইতিহাস বইয়ের পাতায় না থাকলেও, মানুষের মনে থেকে যাবেন যে সকল ‘হিরো’…

কাল ১৫ আগস্ট! ৭৬ তম স্বাধীনতা দিবস। স্বাধীনতার ইতিহাস, বিপ্লব, রক্তাক্ত মুহূর্তের শিহরণ ছড়িয়ে আছে দেশ জুড়ে। স্বাধীনতা শুনলেই মনে পড়ে যায় অসংখ্য বিপ্লবীর নাম। ইতিহাসের বই জুড়ে কেবল তাঁদের অবদান! কিন্তু বইয়ের পাতায় স্থান পায়নি, এমন অনেক বিপ্লবীই থেকে গেছেন মানুষের মন জুড়ে। রুপোলি পর্দায় প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর পরিচিত হয়েছেন তাঁরা মানুষের সঙ্গে। দেশবাসী বুঝেছেন, ইতিহাসের পাতায় যে নামগুলি আছে, শুধু তাঁরাই নন, দেশের জন্য রক্তক্ষয় করেছেন এমন মানুষের সংখ্যা অগণিত।

আজ স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে, রুপোলি পর্দার মাধ্যমে পরিচিত হওয়া এমন কিছু চরিত্রকে নিয়ে জানব, যাঁরা তথাকথিত পুঁথিগত বৃত্তে স্থান না পেলেও, মানুষের মনে পেয়েছেন।

সর্দার উধাম (Sardar Udham) – এই নামটির সঙ্গে, ঠিক এক বছর আগেও আমাদের পরিচয় ঘটেনি। অথচ স্বাধীনতার ইতিহাসে এই নামটির মাহাত্ম্য যে কম নয়, তাঁর জানান দিয়েছে বলিউড। গতবছর ভিকি কৌশল অভিনীত ‘সর্দার উধাম’ ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল। ব্রিটিশ অধিনস্ত ভারতকে মুক্ত করা ছিল এই যুবকের অভিপ্রায়। শৈশবের বন্ধু ভগৎ সিংকে নিয়ে করেছিলেন স্বাধীনতার পরিকল্পনাও। কিন্তু ১৯১৯ এর পর তাঁর লক্ষ্য হয়ে ওঠে অন্য কিছু! ১৯১৯ সালে ঘটে সেই নৃশংস হত্যাকাণ্ড, জালিয়ানওয়ালা বাগ। অসংখ্য দেশবাসীর সঙ্গে মৃত্যু হয় উধামের প্রিয়তমারও। উধাম অগ্রসর হয় জেনারেল ও’ডায়ারকে স্বহস্তে মৃত্যু প্রদান করার জন্য। লন্ডনে গিয়ে সেই কাজে তিনি সফল হন। এক জনসমাগমে বক্তৃতা দেওয়াকালীন, ডায়ারের সম্মুখীন হয়ে, বীরদর্পে একের পর এক গুলি চালান ভারতীয় এই ‘সিংহ’! যদিও এই কর্মের জন্য তাঁকে ফাঁসির মঞ্চেও উপনীত হতে হয়। কিন্তু তাঁর মত এক বিল্পবীর কথা ইতিহাসের বই জানান দেয়নি! দুঃখ লাগে সেখানেই।

Sardar Udham Singh

বিক্রম বাত্রা (Vikram Batra)– ১৯৯৯, ভয়ানক কার্গিল যুদ্ধ! কেঁপে উঠেছিল ভারত। কাশ্মীরের অধিকার নিয়ে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে টানা কয়েক মাস ধরে অবিরাম চলতে থাকে হত্যালীলা। প্রাণ হারান অসংখ্য বীর জওয়ান। প্রাণ হারান, ‘শেরশাহ’ বিক্রম বাত্রা। তাঁর শেষ নিশ্বাস দিয়ে ভারতমাতার জন্য তিনি লড়াই করে যান। শত্রুপক্ষের গুলিতে তাঁর দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলেও, তাঁরই পাল্টা আক্রমনে ঘায়েল হয় সেই প্রতিপক্ষ। ভারতকে বাঁচিয়েও, সেই চরম লগ্নেই ভারতমাতার বুকে ঢলে পড়ে তাঁর ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া শরীর। ইতিহাসের বই চেনায়নি তাঁকে, চিনিয়েছে সেই বলিউড। ২০২১ এ তাঁর জীবনী নিয়ে তৈরি হয় ‘শেরশাহ’ ছবিটি। বিক্রমের চরিত্রে অভিনয় করেন সিদ্ধার্থ মালহোত্রা।

Vikram Batra

নীরজা ভানোট (Neerja Bhanot)– তেইশের এক যুবতী। স্বপ্ন পূরণ করেছেন বিমান সেবিকা হওয়ার মধ্য দিয়ে। ১৯৮৬ সালে প্যান এম ফ্লাইট ৭৩ বিমানটি সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা হাইজ্যাক হয়। পাকিস্তানি উগ্রপন্থীদের মুক্ত করার দাবিতে সন্ত্রাসবাদীরা প্লেনটিকে ছিনতাই করেন। পুলিশের তৎপরতায় যাত্রীরা রেহাই পেলেও, রেহাই পাননি বছর তেইশের সেই যুবতী, নীরজা ভানোট। যাত্রীদের বাঁচাতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের হাতে প্রাণ হারান তিনি! তার পরেরদিনই ছিল তাঁর জন্মদিন। ২৪ বছর বয়সে পা দেওয়ার আগেই চিরতরে বিমানের মাটিতে ঢলে পড়লেন নীরজা। তাঁর জীবন নিয়েই বলিউডে তৈরি হয়েছিল ‘নীরজা’। নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন সোনম কাপুর। নীরজা ইতিহাসে উল্লেখিত কোনও স্বাধীনতা সংগ্রামীদের তুলনায় কম নন। একজন আদর্শ সেবিকা হিসেবে তিনি তাঁর শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে যাত্রীদের রক্ষা করেন।

Neerja Bhanot

গুঞ্জন সাকসেনা(Gunjan Saxena) – ছোটবেলায় দাদার সঙ্গে বিমানে লখনউ ভ্রমণকালে, ছোট্ট গুঞ্জনের শখ জাগে ককপিট দেখার! সেই শুরু! বিমানের ককপিট হয়ে ওঠে তাঁর জীবনের গন্তব্য। হতে চান বিমান চালক! যে সে বিমান নয়, আর্মি বিমানের দায়িত্ব নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন গুঞ্জন। পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ, সামাজিক সংকীর্ণতা সব কিছুকে মাটিতে ফেলে আকাশে উড়ান দিয়েছেন গুঞ্জন। কার্গিল যুদ্ধে তাঁর অবদান মনে রাখার মত। অল্পের জন্য বেঁচেছিলেন মিসাইল আক্রমণ থেকে। সেই মুহূর্তে মহিলা সৈনিক তো দুর, মহিলা পাইলট হিসেবে তিনি একাই ছিলেন। এতজন পুরুষকে ছাপিয়ে গেছিল তাঁর দক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাস। তাঁর জীবন সংগ্রাম নিয়ে তৈরি হয়েছিল জাহ্নবী কাপুর অভিনীত ‘গুঞ্জন সাকসেনা’।

Gunjan Saxena and Janhvi Kapoor ( Image Source: Instagram of Janhvi Kapoor)

এছাড়াও বাংলায় দেব অভিনীত ‘গোলন্দাজ’, সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘রাজকাহিনী’র মত ছবিও স্বাধীনতা দিবসের দিন দেখা যেতে পারে। এই ছবিগুলোও মনে করিয়ে দেয় স্বাধীনতার ইতিহাস!

Scroll to Top