• Please enable News ticker from the theme option Panel to display Post

“হে সখা মম হৃদয়ে রহ…”! বন্ধুত্বের ভিন্ন স্বাদের গল্প বলেছে রুপোলি পর্দা

“হে সখা মম হৃদয়ে রহ…”! বন্ধুত্বের ভিন্ন স্বাদের গল্প বলেছে রুপোলি পর্দা

“বন্ধু বিনে প্রাণ বাঁচে না…”! ‘বন্ধু’! একটি ছোট্ট শব্দবন্ধ হলেও, এই শব্দের মধ্যে জৈবিক সকল আবেগের ধারণ ক্ষমতা অসীম! আজ অগস্ট মাসের দ্বিতীয় রবিবার। বরাবরের মত দেশ মেতে উঠেছে ‘বন্ধু দিবস’ উদযাপনে। কিন্তু ‘বন্ধু’ কি কেবল সমগোত্রীয় জীব বা অজীবের মধ্যেই সাধিত হয়? এই উত্তর অনেকবার দিয়েছে রুপোলি পর্দা। বাস্তবেও পাওয়া গেছে হাজারও দৃষ্টান্ত। আজকের বন্ধু দিবসের বিশেষ পর্বে থাকল, রুপোলি জগতের এমন কিছু উপস্থাপনা, যেখানে বন্ধুত্বের সংজ্ঞা পাঠকের চোখে জল আনতে বাধ্য!

হাতি মেরে সাথী – হাতি তথা বন্য প্রাণী এবং মানুষের মধ্যে বন্ধুত্ব নিয়ে রুপোলি জগতে অগণিত উপস্থাপনা রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য ছবি হল ‘হাতি মেরে সাথী’। রাজেশ খান্না অভিনীত এই ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭১ সালে। চিতা বাঘের হাত থেকে রাজুকে রক্ষা করেছিল হাতি। সেই থেকে শুরু হয় তাঁদের সখ্য যাপন। পরিস্থিতি রাজুকে এমন এক কাঠিন্যের মুখোমুখি দাঁড় করায়, যেখানে পরিবার এবং তাঁর এই হস্তী বন্ধুদের মধ্যে যেকোনও একদিক বেছে নিতে হবে! স্বামী নাকি বন্ধু, কোন সত্ত্বা জয়ী হয় রাজুর? যদিও ছবির শেষে জয়ী হয় মানবিকতা। বন্ধুত্ব, পরিবার, মানসিক দ্বন্দ্ব নিয়ে এক মর্মস্পর্শী পরিবেশনা হয়ে উঠেছিল এই ছবি। ছবি দেখে চোখ ভেজেনি, এমন মানুষ কম।

জঙ্গল বুক – বাবা মায়ের সঙ্গে জঙ্গলে এসে হারিয়ে যায় একরত্তি দুধের শিশু। সেই সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ ঘটে মনুষ্য জগৎ থেকে। খুব আশ্চর্যজনক ভাবে, জঙ্গলের পশুরা হয়ে ওঠে তাঁর পরিবার। এক নেকড়ে দম্পতির অন্যান্য শিশুদের সঙ্গেই আদরে প্রতিপালিত হতে থাকে মানব শিশু ‘মোগলি’। রুডিয়ার্ড ক্লিপ্লিংয়ের ‘দ্য জঙ্গল বুক’ এর গল্প আমাদের অজানা নয়। ছোটবেলায় মোগলির সঙ্গে আমরাও আবদ্ধ হয়েছি এক বন্য বন্ধনে। এই গল্প একাধিকবার রুপোলি পর্দায় উপস্থাপিত হয়েছে। মোগলির সঙ্গে অন্যান্য বন্য প্রানীদের বন্ধুত্ব হোক কিংবা বাঘিরার মত কালো চিতার সঙ্গে তাঁর আত্মিক বন্ধন, আট থেকে আশি সকলের মন ছুঁয়ে যায় এই গল্প।

বেবিজ দে আউট – ‘বেবিজ দে আউট’, এই ছবির নাম শুনলেই যেন সকলের মুখে হাসির ঝিলিক ফুটে ওঠে। আক্ষরিক অর্থে এই ছবি হয়ত বন্ধুত্ব কেন্দ্রিক নয়। কিন্তু বন্ধুত্বকে বাদ দিয়ে, এই পৃথিবীর কোনও ঘটনাই ঘটা সম্ভব নয়। ছোট থেকেই বইয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে এক নয় দশ মাসের খুদের। সেই বইই ছিল তার ধ্যান জ্ঞান। ‘বন্ধু’ বলতে ছিল তার কাছে তার প্রাণের বইটি, যেটি তার আধো বুলিতে হয়ে উঠেছিল বুক থেকে ‘বুব্বু’। অবাক করা বিষয়, সেই বইয়ের গল্পের সঙ্গে হুবহু মিলতে থাকে খুদের জীবন। এমনকী ঘোর বিপদেও এই বইটির বিষয়বস্তুই হয়ে ওঠে শিশুটির রক্ষক। সরাসরি না হলেও, বইটি বন্ধু হিসেবে খুদের জীবন রক্ষা করে গেছে। এই ছবিতে শিশুটির প্রতি এক শিম্পাঞ্জির স্নেহও দর্শকের মন জয় করে।

লাইফ অফ পাই – সামুদ্রিক বিপর্যয়ে, মাঝ সমুদ্রে মৃত্যুবরণ করে প্যাটেল পরিবার। কেবল বেঁচে যায় পরিবারের ছোট ছেলে পিসিং প্যাটেল। লাইফ বোটের সাহায্যে মাঝ সমুদ্রে কুল কিনারাহীন ভাবে চলতে থাকে তাঁর জলজ যাপন। যদিও সে একা নয়! সেই নৌকোয় ছিল ‘রিচার্ড পার্কার’। যিনি কোনও মানুষ নন, এক বন্য রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। প্রথমদিকে দুজনের মধ্যে অস্তিত্ব সংগ্রাম চললেও, শেষে তাঁরাই একে অপরের দোসর হয়ে ওঠে এই ভয়াবহ যাত্রায়। মাঝ সমুদ্রে একটি নৌকা, তাতে আবার একজন মানুষ এবং একটি বাঘ! ছবির নাম ‘লাইফ অফ পাই’। আং লির পরিচালনায় এই ছবিটি কতটা বাস্তবসম্মত জানা নেই, তবে ছবির বিষয়বস্তু মন ছুঁয়ে যায় সিনেমাপ্রেমীদের।

777 চার্লি – ভিন্ন স্বাদের বন্ধুত্বের প্রসঙ্গ উঠেছে, অথচ চার্লির প্রসঙ্গ উঠবে না, তা হয় না। প্রায় এক বছর আগে মুক্তি পায় কন্নড় ছবিটি। ধর্ম নামের এক একা, ‘অসামাজিক’, জীবনবিমুখ যুবক, কীভাবে একটি চারপেয়কে কেন্দ্র করে জীবনে বাঁচার উৎস খুঁজে পাবে, সেই নিয়ে আবর্তিত ‘777 চার্লি’ ছবিটি। চার্লি চ্যাপলিনের ভক্ত ধর্ম খুঁজে পায় এক ল্যাব্রাডর প্রজাতির সারমেয়কে। যদিও বলা ভালো, সারমেয়টি ধর্মকে খুঁজে নেয় সর্ব প্রথম। সমাজ বিমুখ, একা ধর্ম পছন্দ করত না কারুর সঙ্গ। কিন্তু এই সারমেয়টি তাঁর জীবনে আসার পর, তাঁর বাঁচার সংজ্ঞা বদলে যায়। নতুন ‘বন্ধু’ র নাম দেয়, চার্লি। তাঁদের দুজনের রসায়ন দর্শককে তাঁদের প্রতি সহমর্মী করে তোলে। ছবির শেষ যদিও বেশ ট্র্যাজিক। কিন্তু দুই অসমগোত্রীয় প্রাণীর এই সখ্য যাপন, ভারতীয় চলচ্চিত্রের জগতে দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকল।

administrator

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *