অত্যধিক চিনির ব্যবহার যে আপনার জীবনে ক্ষতি ডেকে আনতে পারে, সে বিষয় কম বেশি আপনারা সকলেই অবগত। রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে চিনি আপনাকে করে তুলতে পারে মধুমেহ বা সুগার আক্রান্ত। যার জন্য আপনার আগামী জীবনে নেমে আসতে পারে বিপর্যয়। আবার অতিরিক্ত নুন গ্রহণও উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, ক্যান্সারের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
গুরুগ্রামের ক্লাউডনাইন গ্রুপ অফ হসপিটালের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ নিউট্রিশনিস্ট, শিবানী বৈজাল (Shivani Baijal, senior executive nutritionist, Cloudnine Group of Hospitals, Gurugram) একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, নুন এবং চিনি শারীরিক কার্যাবলী সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে সাহায্য করে। যেমন নুন শরীরের ফ্লুইড স্তর এবং অ্যাসিড বেসের ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূ্ণ ভূমিকা পালন করে। তেমন পেশী সংকোচন নিয়ন্ত্রণ করতে বা স্নায়বিক আবেগকে সচল রাখতে নুনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আবার পরিমাণমত চিনির উপস্থিতিও শরীরকে কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ করে এবং শক্তি প্রদান করে। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যদি মাত্রার বেশি নুন বা চিনি গ্রহণ হয়, তাহলে শরীরে তা বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) সুপারিশ করেছে, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য লবণ গ্রহণের পরিমাণ দিনে পাঁচ গ্রামের কম হওয়া উচিত। শিশুদের ক্ষেত্রে পরিমাণটি আরও কম হওয়া উচিত তাদের শারীরিক কার্যাবলীর পরিমাণ মাথায় রেখে। একই ভাবে চিনির উপস্থিতি আছে এমন খাদ্য বেশি পরিমাণে গ্রহণ এড়িয়ে যেতে হবে।
প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন নুডুলস, পনির, চিপস, নোনতা জাতীয় খাবার, প্রক্রিয়াজাত মাংস ইত্যাদির মাধ্যমে অতিরিক্ত লবণ আপনার শরীরে প্রবেশ করতে পারে। যার কারণে এই খাদ্যগুলি গ্রহণে আপনাকে বিরতি দিতে হবে। এছাড়া বাজারে সহজলভ্য ফলের রস, ক্যান্ডি, কেক-পেস্ট্রি, জ্যাম জেলি প্রভৃতির মধ্যে থাকা অধিক পরিমাণ চিনিও আপনার বিপদ হয়ে উঠতে পারে।
তাইজন্য আপনার করনীয়,
- খাবার টেবিলে, নুন রাখার পাত্র ব্যবহার বর্জন করুন
- পণ্য কেনার আগে খাদ্যের উপকরণের লেবেলগুলি দেখুন, কোনটি কি পরিমাণে আছে সেই বুঝে বিশ্লেষণ করে কেনার সিদ্ধান্ত নিন। অধিক মাত্রায় চিনি বা লবণযুক্ত খাদ্য পরিহার করুন
- লবণাক্ত জলখাবার ব্যবহার সীমিত করুন
- বাইরের কেনা খাবার, ভাজাভুজি, তৈলাক্ত খাদ্য, অধিক পরিমানে মিষ্টি, প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন
•পানীয়তে চিনি যোগ করা বন্ধ করুন
•পরিশোধিত সাদা চিনি এড়িয়ে চলুন। পরিবর্তে, বিকল্প হিসেবে বাদাম, কিশমিশ, ডুমুর, মধু নারকেল ইত্যাদি গ্রহণ করুন।
সতর্কতা অবলম্বন – খাদ্য থেকে পুরোপুরি চিনি বা নুন বাদ দেওয়া উচিত নয়। কারণ এই দুটিরই বিশেষ ভূমিকা আছে শরীরের উপকারে। তাই বিশেষজ্ঞ বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ মত, পরিমিত পরিমাণে এই দুটি উপকরণ গ্রহণ করুন। যাতে শারীরিক চাহিদা পূরণেও কমতি না ঘটে, এবং শরীরের বিপদ হিসেবেও এই দুটি বিবেচ্য না হয়।