আজ নারী দিবস! পর্দায় যে নারীরা হয়ে উঠেছেন স্বতন্ত্র, দিয়েছেন জীবনের পাঠ, তাঁদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন

নারী সৃষ্টি, নারী শক্তি! নারী স্বতন্ত্র! নারী কখনও পুরুষের “মত” বা “সমতুল্য” হওয়ার চেষ্টা করে না। নারী, এক মানব! মানবজাতির ইতিহাসে অস্তিত্বের সংগ্রাম টিকিয়ে রাখার জন্য একজন যেকোনও প্রাণীকে যা করতে হয়, নারীও তাই করেন। কিন্তু কী অদ্ভুত! শারীরিকভাবে নমনীয় হওয়ার দরুন এই নারী জাতিই হয়ে উঠেছিলেন প্রান্তিক! সেই কালো আঁধার ছিন্ন করে যাঁরা রোদ্দুর হয়ে ঝলমল করেছেন, তাঁদের জন্য সমগ্র নারী জাতির উদ্যেশ্যে শ্রদ্ধা জানাই।

রুপোলি পর্দায় যে সকল নারীদের বিচরণ আর পর্দার ওপারেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং তাঁরা হয়ে উঠেছেন ব্যক্তিগত, আজ তাঁদের ফিরে দেখা!

১) মেঘে ঢাকা তারা–
নারী দিবস! আর এই নারীকে স্মরণ না করা মানে এই দিনের গুরুত্ব অসম্পূর্ণ থাকা। ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত ‘মেঘে ঢাকা তারা’ এ, পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী নীতার (সুপ্রিয়া দেবী) জীবন, আবর্তিত হয়েছে তীব্র বাঁচার আকাঙ্খা থেকেও, সময়ের স্রোতে বিলীন হয়ে যাওয়ার নিদারুণ যন্ত্রণায়! আমাদের আশেপাশে থাকা, এমন নীতা তো, প্রতিনিয়ত পরিবারের দায়ভার-ক্লিষ্ট হয়ে, ঢাকা পড়ে যায় মেঘের আড়ালে…

২) দীপ জ্বেলে যাই —
অসিত সেনের এই চলচিত্র সমাজের বিরুদ্ধে প্রশ্ন রাখে,,,নারী চিরকাল সেবা শুশ্রূষার বাহক,,,কিন্তু এই নারীকে সেবা করবে কে?
দক্ষ অভিনেতারা থাকলেও, এই চলচিত্রে একজন ই ‘হিরো’, তিনি সুচিত্রা সেন!

৩) গয়নার বাক্স — অপর্ণা সেনের অন্যতম মনে গেঁথে যাওয়ার মত ছবি, ‘গয়নার বাক্স’! সোনা দানা, হিরে মানিক না,,,নারীর আসল ‘গয়না’ তাঁর যৌবন,,,,, এ কথা বোঝে কজন? সে সোনার গৌড় ছেড়ে দিলে,,আর যে কখনওই ফিরে পাওয়া যায়না… কারণ, এ গয়নার কোনো চিরন্তন বাক্স নেই…. এই গয়নার তাই, হারিয়ে যেতেও মানা নেই….

৪)রাজকাহিনী — কোনো রাষ্ট্রীয় সেনানায়ক না,,, সীমান্তে অবস্থিত ‘পতিতালয়’ কে অবিভক্ত, অক্ষত রাখতে ঝাঁপিয়ে পড়েন, বেগমজানের নেতৃত্বে সশস্ত্র পতিতা নারীরা। বাদ যাননি কিশোরী থেকে বৃদ্ধা আবাসিকরা..
সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘রাজকাহিনী’ নারী দিবস শুধু না, স্বাধীনতা দিবসে স্মরণ করবার মতন এক উজ্জ্বল নির্মাণ!

৫)ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি — অরিত্র মুখার্জির ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’, সমাজের বিভিন্ন চর্চিত ‘ট্যাবু’ র বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার প্রতিফলক! সমাজের কম বেশি সকল মানুষই ‘ঋতুচক্র’ বা ‘পিরিয়ড’ কে নিয়ে অশুচির ট্যাবু জ্বরে আক্রান্ত! এবং মহিলা হয়ে পৌরহিত্য করা যায় না,,,,,এই সকল বাধা কে অতিক্রম করে শবরী দেবী (ঋতাভরী চক্রবর্তী) পৌরহিত্য করে, সমাজ কে কতটা সুস্থ পথে চালনা করতে পারেন, সেটিই দেখার কেন্দ্র!

৬) ইংলিশ ভিংলিশ — আর পাঁচ জন গৃহবধূর মতোই, যুগের সাথে তাল মেলাতে পারেন না শশী (শ্রীদেবী), প্রতিনিয়ত তাঁকে পরিবারের কটাক্ষের রোষে পড়তে হয়! নিজের তাগিদে এই শশীই একদিন নিজের প্রভা ছড়িয়ে দেয় তার জগতে,,, প্রমাণ করে, গৃহবধূ হয়েও সে কম না! ইংরেজি শিখে তার কনিষ্ঠদের কাছে ভাস্বর হয়ে ওঠার গল্প, পরিচালক গৌরী সিন্ধে যে নিপুণতার সাথে উপস্থাপন করেছেন, তা পরিবারের প্রেরিত প্রান্তিক জীবনে, যে কোনো নারীর খোলা আকাশের স্বপ্ন দেখায়..

৭) নীল বাতে সন্নতা — পড়ায় মন নেই মেয়ের,,,,তাকে উদ্যম জোগাতে সহপঠনএ যোগ দেন তার মা (স্বরা ভাস্বর)। বাড়ির সম্পর্ক ছাড়িয়েও, একই শ্রেণীতে সহপাঠী হিসেবে গড়ে ওঠে তাদের নতুন রসায়ন… অশ্বিনী আইয়ার তিওয়ারির এই ভিন্ন স্বাদের গল্প, মা দের যেমন শৈশবের দিনে ফিরিয়ে নিয়ে যায়, তেমনই সন্তানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্কের রসদ জোগায়।

৮)নীরজা —
নীরজা ভানোট, এক দুঃসাহসের অপর নাম! বিমান সেবিকা নীরজা, আক্ষরিক অর্থেই যিনি হয়ে উঠেছিলেন তার অধীনস্থ যাত্রীদের রক্ষক! সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের হাত থেকে, ঢাল হয়ে শেষ স্পন্দন পর্যন্ত আগলে রেখেছিলেন বিমানের সকল মানুষকে। সেই অসীম সাহসী নারীকে নিয়েই, পরিচালক রাম মধবনী তৈরি করেছিলেন ‘নীরজা’,, সোনম কাপুর নীরজা এর ভূমিকায় যথাযথ বিশ্বাসযোগ্যতা ফুটিয়ে তুলেছেন!

৯) দ্য টেস্ট কেস —
এটি একটি ওয়েব সিরিজ,,, শিখা শর্মা ( নিমরত কৌর ) ভারতীয় সেনার বিশেষ বাহিনীর প্রশিক্ষণ দলের একমাত্র মহিলা ছিলেন,,, বলা বাহুল্য, ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যুদ্ধমুখী ভূমিকায় , মহিলাদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ‘টেস্ট কেস’ হিসেবে একটি কোর্স গ্রহণ করেন। বিনয় ওয়াইকুল
নাগেশ কুকুনুর পরিচালিত এই ছবিতে দেখা গেছে, নারীরা শুধু সংসার না, যুদ্ধক্ষেত্রেও তারা আপন দাপটে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে পারেন!

Scroll to Top