পাকা পেঁপে নয়, বরং কাঁচা পেঁপেকেই করে তুলুন আপনার শরীর-বান্ধব, রইল উপকারিতা

পেঁপে গাছ, এমনই এক পরিবেশ-বান্ধব সদস্য, যার পাতা, ফল, বীজ ইত্যাদি বিভিন্ন অঙ্গ প্রাণী জগতের উপকারে লাগে। পেঁপে গাছের ফল কাঁচা এবং পাকা, দুই অবস্থাতেই উপাদেয়। এই দুই প্রকার পেঁপে দিয়েই তৈরি করা যায় বিভিন্ন সুস্বাদু রান্না, বলা বাহুল্য, তাদের প্রত্যেকটিরই আলাদা উপকার থাকে। ১০০ গ্রাম কাঁচা পেঁপেতে রয়েছে ৭.২ গ্রাম শর্করা, ভিটামিন সি ৫৭ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৬.০ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৭৯ মিলিগ্রাম, খনিজ ০.৫ মিলিগ্রাম, এবং ফ্যাট না চর্বি থাকে ০.১ মিলিগ্রাম।

পাকা পেঁপের চেয়ে, কাঁচা পেঁপের গুণাগুণ বেশি সক্রিয়। কাঁচা পেঁপেতে শর্করার পরিমাণ কম, এবং উচ্চ ফাইবারযুক্ত। কাঁচা পেঁপেতে পাকা পেঁপের চেয়ে চর্বির পরিমাণও কম থাকে। কাঁচা পেঁপে হল পটাশিয়াম (Potassium), ম্যাগনেশিয়াম (Magnesium), ফসফরাস (Phosphorus) এবং সোডিয়ামের (Sodium) উৎস। পাকা পেঁপের তুলনায় কাঁচা পেঁপের আর্দ্রতা কম হওয়ার দরুন, এটি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।

এখন কাঁচা পেঁপের কিছু গুণাগুণ জেনে নেওয়া যাক-

১) পরিপাকে সহায়ক –
কাঁচা পেঁপের মধ্যে নানা রকম প্রাকৃতিক মৌল থাকলেও, দুটি উপাদান বেশি সক্রিয়। যথা, সাইমোপ্যাথিন (Saimopathin) এবং প্যাপিন (Papain)। মূলত এইগুলি হল হজম সহায়ক উৎসেচক। এই দুটি মৌল, খাদ্যগ্রহনের দ্বারা গৃহিট চর্বি ও কার্বোহাইড্রট ভাঙতে সাহায্য করে। এছাড়া পেঁপেতে থাকা কিছু যৌগ কোষ্ঠকাঠিন্য, অ্যাসিডিটি, পাইলস, ডায়রিয়া দুর করে। যা হজম পদ্ধতিকে সুসংগত ভাবে চালনা করে।

২) ডায়াবেটিস প্রতিরোধ – কাঁচা পেঁপে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। কারণ এতে শর্করা বা চিনির পরিমাণ থাকেনা। তাই ডায়াবেটিক রোগীরা কাঁচা পেঁপে স্বাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ করতে পারেন। পেঁপের জুস তাদের পক্ষে বিশেষ উপকারী।

৩) সুষ্ঠুভাবে রক্ত সঞ্চালন – দেহে জমা সোডিয়াম দুর করতে সাহায্য করে। নিয়মিত পেঁপে খেলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

৪) ঋতুস্রাবের সমস্যা সমাধান – মহিলাদের পক্ষে কাঁচা পেঁপের গুণগুলি বিশেষ উপযোগী। যেসব মায়েরা বুকের দুধ পান করান শিশুদের, তাঁদের নিয়মমাফিক কাঁচা পেঁপে খাওয়া উচিত। এর ফলে তাঁদের বুকের দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এমনকি আঁচিলের সমস্যা থেকেও মুক্তি দেয় কাঁচা পেঁপের রস।

৫) স্থূলতা হ্রাস করতে – কাঁচা পেঁপের মধ্যে ক্যালোরি এবং কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কম থাকায়, দেহের ওজনের বৃদ্ধি রোধ হয়। ফাইবার এবং স্টার্চের পরিমাণ বেশি থাকায় শরীর যথাযথ পুষ্টিলাভ করে।

৬) ত্বকের যত্নে – নিয়মিত কাঁচা পেঁপে খেলে ত্বক স্বাস্থ্যবান হয় এবং ব্রণ দুর হয়।

৭)রোগ প্রতিরোধ – কাঁচা পেঁপেতে স্যাপোনিন (Saponin) উৎসেচক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এছাড়াও এতে বিটা-ক্যারোটিন (β-Carotene) ম্যাগনেসিয়াম এবং ফ্ল্যাভোনয়েড থাকে, যা মানবদেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বজায় রাখতে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।

এছাড়া মানব শরীরে আরো বিভিন্ন ক্ষয় মেরামত, সুস্বাস্থ্য গঠনে কাঁচা পেঁপে সহায়তা করে। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে, কোন জিনিসই অতিরিক্ত গ্রহণ, শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে। তাই এক্ষেত্রে ডাক্তারের সঠিক পরামর্শ মেনে চলা শ্রেয়।

Scroll to Top