কীভাবে প্রচলিত হল “এপ্রিল ফুল ডে”? জানুন নেপথ্যের কাহিনী

কখনও ভেবেছেন, আপনার ‘বোকামি’ কখনও যুগের পর যুগ সারা বিশ্ব জুড়ে, একটি উদযাপনের দিন হয়ে উঠতে পারে? ঠিক এমনটাই হয়েছিল আজ থেকে প্রায় পাঁচশ বছর আগে। ষোড়শ শতকে, ইউরোপের পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি জর্জিয়ান ক্যালেন্ডারের উদ্ভব ঘটান। এই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বিশ্ব জুড়ে নববর্ষ পালন করা হবে পয়লা জানুয়ারি। তাঁর পূর্বে মার্চের শেষ দিকে, মূলত জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পয়লা এপ্রিল দিনটিকেই নববর্ষ হিসেবে উদযাপন করা হত। জর্জিয়ান ক্যালেন্ডারের উদ্ভাবনের পর, এই নতুন রীতিকে মেনে নিতে পারেননি বহু প্রাচীনপন্থী মানুষ। আর ঠিক সেখানেই সৃষ্টি হয় গোলযোগ। যাঁরা অস্বীকার করলেন, তাঁরা বিশ্বের কাছে ‘মূর্খ’ অর্থাৎ ‘বোকা’ হিসেবেই পরিচিতি পেতে লাগলেন। এমনকী তাঁদের মজার পাত্রও বানানো হল। সর্বপ্রথম ফ্রান্স, জর্জিয়ান ক্যালেন্ডারকে স্বীকার করেছিল। ফ্রান্স ব্যতীত প্রায় সমগ্র ইউরোপিয়ান প্রাচীনপন্থীরা বিশ্বের কাছে ‘বোকা’ হিসেবে গণ্য হতে থাকেন। আর এভাবেই সূচনা হয় পয়লা এপ্রিল ‘এপ্রিল ফুল ডে’ (April Fool’s Day) র।

ঐতিহাসিক কারণ ছাড়াও, একটি মিথও প্রচলিত রয়েছে ‘এপ্রিল ফুল ডে’র উৎস নিয়ে। রোমান দেবতা প্লুটো, তাঁর স্ত্রী পারসিফনকে অপহরণ করে এমন এক গোপন স্থানে বন্দী করেন যে, স্বাভাবিক ভাবে সে স্থানের চিন্তা কেউ করতে পারবেন না। অন্যদিকে পারসিফনের মা সেরিস, কন্যাকে হন্যে হয়ে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত খোঁজার অনেক চেষ্টা করেন। কিন্তু কোনওভাবেই সফলতা পান না। আসলে তাঁর কন্যা তখন বন্দী রয়েছে মাটির নীচে। সেরিসের ‘বোকার মতো’ মাটির উপরে অপহৃত কন্যাকে খুঁজে পাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টাকে কেন্দ্র করে নাকি রোমানরা এই দিনটিতে বোকামি দিবস পালন করে থাকেন।

আবার অপরদিকে, বেশ কিছু ঐতিহাসিকের মতে, ‘এপ্রিল ফুল ডে’ আবার ‘হিলারা’ নামক এক উৎসবের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এটি একটি ল্যাটিন শব্দ, যায় অর্থ আনন্দদায়ক। বলা বাহুল্য, ‘এপ্রিল ফুল ডে’ আবার ভারতীয় রঙের উৎসব, দোল এবং হোলির কাছাকাছি সময়ও পালিত হয়। যে সময় মানুষ তাঁর আপনজনদের সঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠেন। ভারত ছাড়াও, আবার পারস্যের উৎসব ‘সিজদাহ বেদার’ ও জিউয়িসদের ‘পুর্ণিম’ এর সঙ্গেও এই দিনের সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। বলা বাহুল্য, এই সমস্ত উৎসবই বসন্তের আগমনেই পালিত হয় এবং এগুলির সঙ্গে ছেলেমানুষী, আনন্দ, উচ্ছ্বাস সমস্তটা জড়িয়ে থাকে।

Scroll to Top