মনোজ শর্মা (Manoj Sharma)! এক অদম্য জেদের নাম! উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ফেল করা ছাত্র, যে আজ তাঁর অদম্য জেদের জন্য আইপিএস অফিসার (IPS Officer)! জীবনযুদ্ধে তাঁর এই লড়াই নিয়েই আজ কথা বলবো।
মধ্যপ্রদেশের মুরেনা নামক এক জেলায় মনোজের জন্ম। পড়াশোনায় ছোটো থেকেই ভালো ছিলেন না এমনকি বিভিন্ন সময় ক্লাসে উত্তীর্ণ হতে নকলের দারস্থ হতেন। কিন্তু, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাতে ঘটলো ছন্দপতন! কড়া নজরদারি পেরিয়ে করতে পারলেন না নকল! অতঃপর, অনুর্ত্তীর্ণ হলেন। যদিও সেখানে তিনি থেমে যান নি। এরপরে চেষ্টা করেন টাইপিং (Typing)-এর। ভেবেছিলেন টাইপিং (Typing) শিখে কোনো কাজে যোগ দেবেন। কিন্তু পেলেন না সেই চিন্তার স্বার্থকতা!
এরপরে বড়ো দাদার সাথে কাজে যুক্ত হন। শুরু করেন টেম্পো (Tempo) চালানো। এখানেও সমস্যার সম্মুখীন হন। একদিন পুলিশ তাঁর টেম্পো (Tempo) আটক করে! এরপর তিনি সোজা পৌঁছে যান মহকুমাশাসকের (Sub-Divisional Magistrate) দপ্তরে। কিন্তু সেখানে গিয়ে তিনি কি করেছিলেন জানলে আপনি অবাক হবেন! নিজের টেম্পো ছাড়ার অনুরোধ করার বদলে তিনি মহকুমাশাসককে অনুরোধ করতে থাকেন কিভাবে তিনি নিজে মহকুমাশাসক (Sub-Divisional Magistrate) হতে গেলে প্রশিক্ষণ নেবেন তা জানাতে! মহকুমাশাসক মহাশয়ও তাঁকে সবটা বোঝান ও তাঁর বোঝানোর পরে মনোজ সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি সত্যি সত্যিই মহকুমাশাসক হবার জন্য প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি নেবেন।
এরপরে এক অদম্য জেদের সঙ্গে এক নতুন যাত্রাপথে পাড়ি দেন তিনি। চলে আসেন গ্বালিয়রে। কিন্তু চলে এলে কী হবে! তাঁর কাছে তো তেমন টাকাপয়সা ছিলো না। টাকার অভাবে রাস্তাতেই রাত কাটাতে হতো তাঁকে। অনাহার ছিলো তাঁর নিত্যসঙ্গী। কিন্তু এতকিছুর পরেও তাঁর মনোবল ভাঙেনি। টাকা রোজগারের জন্য যুক্ত হন লাইব্রেরিয়ান (Librarian)-এর পদে। এর সঙ্গেই পিয়নের কাজও করতেন। এরপর তিনি দিল্লি (Delhi) চলে আসেন। সেখানে এসে এক ধনী পরিবারের দেখাশোনার জন্য মাত্র ৪০০ টাকার বিনিময়ে নিযুক্ত হন। সেই টাকা দিয়েই ফের শুরু করেন পড়াশোনা। ধীরে ধীরে কলেজ পাশ করেন। কলেজ পাশ করার পরে বসেন পুলিশের পরীক্ষায়! প্রথম বারের চেষ্টায় প্রিমিলিনারি (Preliminary) পাশ করলেও ব্যর্থ হন চূড়ান্ত পর্যায়ে। কিন্তু কথায় আছে না যে ‘চেষ্টা করলে মানুষ পারেনা এমন কোনো কাজ নেই!’ বারবার বসেন পরীক্ষা দিতে। অবশেষে চতুর্থবারের চেষ্টায় আসে সাফল্য! এরপর ২০০৫ সালে মহারাষ্ট্র ক্যাডারের আইপিএস (IPS Officer) পদে নিযুক্ত হন তিনি। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (Police Commissioner) পদেও আগামীতে নিযুক্ত হন তিনি।
হঠাৎ করে তাঁর এই অদম্য জেদের কারণ কী ছিলো তা তাঁকে জানতে চাইলে তিনি জানান যে তাঁর জীবনে দুটি বই গভীর প্রভাব ভেবেছিলো। যাদের একটি ম্যাক্সিম গোর্কি ও অন্যটি স্যর আব্রাহাম লিঙ্কনের লেখা। তিনি জানান যে এই দুটি বইতে ওনাদের দুজনের মনোভাব ও ভাবধারার নিদর্শন পাওয়া যায় যা অতীব শিক্ষণীয়। এছাড়াও তিনি তাঁর প্রেমিকার কথা উল্লেখ করে তাঁর অবদানও স্বীকার করেন কারণ এই দুঃসময়ে একমাত্র তাঁর প্রেমিকাই ছিলেন ভরসা ও সাহস হয়ে তাঁর পাশে সবসময়।
মনোজ শর্মা (Manoj Sharma), এক অদম্য জেদের নাম। জীবনে অনেকবার সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাঁকে। জীবনের অনেক চড়াই-উতরাই দেখেছেন তিনি। কিভাবে এক উচ্চমাধ্যমিক ফেল ছেলে তাঁর জেদের জন্য আইপিএস অফিসার পদে প্রাপ্তি পেলো সেই গল্প সত্যিই শিক্ষণীয়। আজকের প্রজন্ম এই কাহিনী থেকে অনেককিছু শিখবে আশা করা যায়।