আমিষ নয়, নিরামিষ পদ বানিয়েই হয়ে যাক কেল্লাফতে! রইল পনির টিক্কার ঘরোয়া রেসিপি

রন্ধনে বাঙালির জুড়ি মেলা কিন্তু বেশ ভার। অপছন্দের উপকরণ দিয়েও তাঁরা হাতের জাদুতে মুখে স্বাদ লেগে থাকার মত রান্না করে থাকেন। অনেকেরই বিভিন্ন দুগ্ধজাত খাদ্য পছন্দের নয়। ব্যাক্তিগত ভাবে ঝিলিকেরও দুধ দই পছন্দ হলে, পনির মোটেই ভালো লাগে না। এদিকে মাংস দিয়ে তৈরি খাবার ভারী আমোদ করে খায় সে। তা চিকেন হোক কী মটন। ক্লাস সিক্সে পড়া ছোট্ট ঝিলিককে নিয়ে আজ এক মজার ঘটনা বলে শোনাব আপনাদের।

তখন ঝিলিক রানী বেশ ছোট, চিকেনের সব পদই ভালোবাসে। কিন্তু পনির, একেবারে নৈব নৈব চ! এদিকে স্কুলে টিফিনে মাংসের উপকরণ দেওয়া যেত না। আবার ঝিলিকের মা, সুপর্ণা দেবীও ভালো করে জানেন ঝিলিক মোটেই পনির-প্রেমী নয়। ঝিলিকের পিসি, ওঁর মা’কে একটি রান্নার বই উপহার দেন। আর সেটি দিয়েই সুপর্ণা দেবী ছোট্ট ঝিলিকের উপর প্রয়োগ করে দেন ব্রহ্মাস্ত্র।
একদিন স্কুলে যথা সময়ে টিফিন পিরিয়ড আগত। খুব অনীহা নিয়েই টিফিন বক্স খুলছিল ঝিলিক। আর তার সঙ্গে আড় চোখে দেখে নিচ্ছিল, কোন বন্ধু কী টিফিন এনেছে। কারণ আগেরদিন সে দেখেছে, তাঁর বাবা রঞ্জন বাবু, পনির এনেছিলেন বাজার থেকে। সেই পনির যদি মা টিফিনে দিয়ে দেন…! তখন তো অন্য বন্ধুর টিফিনই হবে ঝিলিকের রক্ষা কর্তা!

বেশ রাম নাম জপ করে ঝিলিক খুলল তাঁর টিফিন বক্স। ওমা! দেখেই তো সে একেবারে চমকিত! এ যে টিক্কা! মা চিকেন টিক্কা দিয়েছে!!!!
সে আনন্দ আর ধরে না। কৌশলে বন্ধুদের চোখ এড়িয়ে, লুকিয়ে খাওয়া শুরু করল। সঙ্গে দুটো ছিল পরোটা। টিক্কাটা কিন্তু দারুন হয়েছিল! স্বাদ টা অন্যরকম লাগলেও, তৃপ্তি করে চেটে পুটে খেয়ে নিলো সবটা!
বাড়িতে এসে মা কিছু বলবার আগেই, ঝিলিকই উত্তেজিত হয়ে বলে উঠল, ‘এত সুন্দর চিকেন টিক্কা আগে খাইনি কখনও! স্বাদ টা পুরো অন্যরকম।’
মা মুচকি হেসে ঝিলিকের হাতে রেসিপির বইটা ধরিয়ে দিলেন! ঝিলিকের চক্ষু তো চড়ক গাছ! অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল বইয়ের পাতায়! একি, ওটা চিকেন নয়! ওটা তো ওঁর মহা শত্রু, থুড়ি, এখন থেকে বন্ধু, পনির! সেই থেকে সব পূর্ব বিবাদ ভুলে, ঝিলিক আর পনির হয়ে উঠল হরিহর আত্মা।

আপনাদের জন্যও তাই আজকের বিশেষ পর্বে থাকবে, সেই বিশেষ পনির টিক্কার রেসিপি। আপনাদের বাড়িতেও যদি ঝিলিকের মত পনির অপ্রেমী কেউ থাকেন, অবশ্যই তাঁকে আপনার হাতের জাদু দিয়ে অনায়াসে কুপোকাত করে ফেলতে পারবেন।

পনির টিক্কার (Paneer Tikka)উপকরণ

পনির- ২০০ গ্রাম
বেল পেপার – ১ পিস
পেঁয়াজ- ৩ পিস
টমেটো- ৩ পিস
টক দই- ১ কাপ
আদা- ১ টুকরো
কাশ্মীরি লাল লঙ্কা গুঁড়ো- ২ চা চামচ
আদা রসুন-বাটা – ২ চা চামচ
কাঁচা লঙ্কা- ৪ পিস
সাদা জিরে- ১ চা চামচ
ধনে জিরে গুঁড়া- ১ চা চামচ
কশুরি মেথি- গরম মশলা গুঁড়ো- ২ চা চামচ
কাজু বাদাম বাটা- আধ কাপ
চিনি- ১ চা চামচ
নুন – স্বাদ মতো
লেবুর রস- ২ চা চামচ
ধনে পাতা কুঁচি – ২ চা চামচ

পনির টিক্কার প্রণালী-

প্রথমে এক কাপ টক দই ফেটিয়ে নিতে হবে। তারপর তার মধ্যে লঙ্কা, আদা, রসুন, ধনে, জিরে, গরম মসলা, নুন, কসুরি মেথি, তেল এবং লেবুর রস দিয়ে আবার পুরো মিশ্রণটিকে ফেটিয়ে নিন। সেই মিশ্রনের মধ্যে পনির, বেলপেপার এবং পেঁয়াজের টুকরোগুলো মাখিয়ে ম্যারিনেট করে প্রায় এক ঘণ্টার মতো রেখে দিন।

এরপর মিশ্রণটিকে হয় মাইক্রোওভেনে বেক করে নিতে হবে। পনিরের গায়ে লালচে রঙ ধরলেই তখন ওভেন নিভিয়ে দিতে হবে।

তারপর আবার অন্য একটি কড়াইয়ে তেল গরম করে তাতে সাদা জিরে ফোড়ন দিতে হবে। তাতে পেঁয়াজ দিয়ে বেশ লালচে করে ভেজে নিতে হবে। এর মধ্যেই সামান্য নুন ছড়িয়ে দিতে হবে। এরপর বাকি আঁদা বাটা এবং রসুন বাটা দিয়ে আবার এই মিশ্রণটিকে ভেজে নিতে হবে।

পরবর্তী ধাপে, এই মিশ্রণে টমেটো পিউরি ঢেলে দিন। আঁচ মাঝামাঝি রেখে ভালো করে রান্নাটিকে নাড়িয়ে ঢাকনা চাপা দিয়ে দেবেন।
এবার আবার একে একে অবশিষ্ট একটু একটু করে নুন, লঙ্কা, আদা কুচি, কাঁচা লঙ্কা, ধনে, জিরে, গরম মসলা এবং চিনি দিয়ে তার মধ্যেই কাজুবাদাম বাটা যোগ করে দিন। পুরো মিশ্রণটি ভালো করে নেড়ে যেতে থাকুন।

আঁচ এবার বন্ধ করে, বাকি টক দই ভালো করে ফেটিয়ে মিশিয়ে দিতে হবে। আপনারা চাইলে দইয়ের পরিবর্তে ক্রিমও ব্যবহার করতে পারেন।

এবার আসল খেলা। আঁচ জ্বালিয়ে এই গ্রেভিতে পনির এবং আনাজের টুকরো মিশিয়ে নেওয়ার পালা। ভালো করে মিশিয়ে তাতে কসুরি মেথি এবং লেবুর রস চরিত্র দিন। তারপর ধনে পাতা সহযোগে স্বাদের সঙ্গে সৌন্দর্য ও বৃদ্ধি করে তুলুন। ব্যাস। আপনার পনির টিক্কা একেবারে তৈরি।
বিকেলের মুখরোচক হোক বা রাতে রুটি অথবা পরোটা সহযোগে এই পদ, আপনাকে রাঁধুনি হিসেবে স্বীকৃতি দেবেই দেবে।

Scroll to Top